ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চরম দুর্ভোগে ময়মনসিংহ নগরবাসী

বেহাল সড়কে জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৫ আগস্ট ২০১৭

বেহাল সড়কে জলাবদ্ধতা

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ শহরের ব্রাহ্মপল্লী রোডের গৃহবধূ মিনু রানী দাস ও চায়না রানী বিশ্বাস গত কয়েক দিনের বর্ষণে পানিবন্দী। ভারি বর্ষণের পর ময়লাযুক্ত নোংরা পানি ঢুকে পড়ে শোবার ঘরে। বিছানা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। রান্নাঘরের চুলাও তলিয়ে গেছে। রান্না ঘরের ভেতর পানির ওপর ভাসছে হাঁড়ি পাতিল! সঙ্গে মানববর্জ্য! প্রতি বর্ষা মৌসুমে মিনু ও চায়না রানীর মতো ময়মনসিংহ নগরবাসীকে এ রকম দুর্ভোগ দুর্দশাকে নিয়তি হিসেবেই মেনে নিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেহাল দশার সড়ক। এক বর্ষাতেই উন্নয়নের সব নিশানা মুছে যাওয়ায় শহরের বেশিরভাগ প্রধান সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দের। বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠছে বিধ্বস্ত সড়কের খানাখন্দ। ফলে নগরবাসীকে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা আর বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার পর খানাখন্দ পেরিয়ে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। ময়মনসিংহের মেয়র ইকরামুল হক টিটু নগরবাসীর এ দুর্ভোগ দুর্দশার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, শহরের বেশকিছু সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু সড়ক উন্নয়নের কাজ টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। বর্ষার পরও পরই এসব কাজ হলে নগরবাসীকে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না বলে জানান মেয়র। সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের আবাসিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এলাকা বাউন্ডারি রোডের অবস্থা এমনই বেহাল যে, সহজে কোন রিক্সা কিংবা ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক এ রোডে যেতে চায় না। আর রাজি হলেও ভাড়া হাঁকছে ২/৩ গুণ। সড়কজুড়ে ছোট বড় খানাখন্দ হ্যাঁ করে আছে। সড়কের মাঝামাঝি জায়গার একটি বড় গর্তের ওপর ময়লা আবর্জনা ও নির্মাণ সামগ্রী ফেলে স্থানীয়রা পথচারীদের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করছেন। স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা রোজি আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এ সড়কে যাতায়াতের সময় প্রায়ই কাদাজলে উল্টে পড়ছে রিক্সা। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও। আর ভারি বর্ষণের পর জলাবদ্ধতার সময় পথচারীকে এই ৫০০ মিটার সড়কে পা ফেলতে হয় সাবধানে। একই অবস্থা শহরের ব্রাহ্মপল্লী সড়কের। শহরের চরপাড়া মোড় থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের এই ব্রাহ্মপল্লী সড়কের বেশিরভাগ জায়গার সিলকোট উঠে গেছে বেশ আগেই। এখন ইট সুরকি উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। দেখা না যাওয়ায় বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতার ভেতর আন্দাজের ওপর যানবাহন চলাচলের সময় উল্টে পড়ছে আরোহীসহ। এ সময় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নারী ও শিক্ষার্থীরা। পানি সরে যাওয়ার পরও দুর্ভোগের কমতি নেই। জেগে উঠা খানাখন্দ পেরিয়ে নগরবাসীকে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। ফলে জলাবদ্ধতার সময় এবং পানি সরে যাওয়ার পর নগরবাসী এখন নিত্য দুর্ভোগকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, শহরের পাদ্রী মিশন রোড, সিকে ঘোষ রোড, দুর্গাবাড়ি রোড, ছোট বাজার, মহারাজা রোড, সারদা ঘোষ রোড, আমলাপাড়া রোড, বাঘমারা মেডিক্যাল গেট, নতুন বাজার সাহেব আলী রোড, সেনবাড়ি রোডসহ শহরের বেশিরভাগ প্রধান সড়কেরই এখন বেহাল দশা। অথচ চলতি বর্ষার আগে মোটা অঙ্কের টাকায় এসব সড়ক উন্নয়ন ও মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু এক বর্ষা না যেতেই এসব সড়কের সিলকোট ও ইট সুরকি উঠে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আর অলিগলির সড়কের অবস্থা আরও করুণ। শহরের অলিগলির অনেক সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল যেন কোন গ্রামের চিত্র। টাঙ্গাইল ইফতেখারুল অনুপম টাঙ্গাইল থেকে জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সড়ক পরিদর্শন করেন। তিনি দ্রুত এ মহাসড়ক মেরামতের নিদের্শ দেন। মন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই খানাখন্দের সংস্কার কাজ শুরু করছে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। তবে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিম্ন মানের খোয়া ফেলে কোনমতে গর্তগুলো ভরাট করা হচ্ছে। গর্ত সংস্কার করার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পড়েই তা উঠে গিয়ে আগের অবস্থা তৈরি হচ্ছে। এতে ঈদের আগে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে যাত্রীদের। এছাড়া সড়ক মেরামতের কারণে মহাসড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। কোথাও কোথাও স্থির দাঁড়িয়ে থাকছে পরিবহনগুলো। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে- তীব্র যানজটের। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। টাঙ্গাইল সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হতে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কি.মি মহাসড়কে খানাখন্দ ও গর্ত সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস হতে এলেঙ্গা পর্যন্ত কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কয়েকটি জায়গায় কাজ করা হচ্ছে। সংস্কার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে- ইট, বালু, খোয়া, বিটুমিন, এ্যামফ্লট ও পাথর। টাঙ্গাইল সওজ বিভাগের কার্য সহকারী আব্দুর রহমান সিদ্দিকী জানান, মহাসড়কে যে সংস্কার কাজ হচ্ছে তাতে এক বছরের মধ্যে পুনরায় সংস্কার করার প্রয়োজন হবে না। সংস্কার কাজে ইট, বালু, খোয়া, বিটুমিন, এ্যামফ্লট ও পাথর ব্যবহার করে সড়ক মেরামতসহ কার্পেটিং, গ্রাউটিং ও সিলকোর্ট কাজ করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলেঙ্গা থেকে যানজট শুরু হয়ে করটিয়া পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত যানজট থাকছে। এছাড়া মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকায় ধীরগতিতে চলাচল করছে। টাঙ্গাইল সওজ বিভাগ সৃষ্ট খানাখন্দে ইট ও বালু ফেলে সঙ্গে সামান্য বিটুমিন দিয়ে কোন রকমে সংস্কার কাজ করছে। নিমানের সংস্কার কাজে ভারী বৃষ্টি ও গাড়ির চাপে আবার মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আগের মতোই তৈরি হচ্ছে খানাখন্দ ও গর্তের।
×