ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগ সারভাইভ করে যায়, পার্লামেন্ট সরকার করে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ আগস্ট ২০১৭

বিচার বিভাগ সারভাইভ করে যায়, পার্লামেন্ট সরকার করে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কথা ভয়ঙ্কর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী হয়েও তিনি বলেছেন যতবার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হবে, ততবারই আবার তারা সেই বিল বা আইন পাস করবেন। অর্থাৎ সংবিধানকে সংশোধন করবেন। এতে প্রমাণ হয় যে, উচ্চতম আদালত বা বিচার বিভাগের প্রতি তাদের কোন আস্থা নেই এবং তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আদালতের রায় ঐতিহাসিক এবং ১৬ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, এ নিয়ে সরকার বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামলে হেরে যাবে। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া ষোড়শ সংশোধনী সংশোধনের পথ অনুসরণ করলে সরকার ভুল করবে। কেননা অতীতেও যারা বিচার বিভাগের ওপর হাত দিয়েছে তাদের হাত পুড়ে গেছে। কারণ, বিচার বিভাগ সারভাইভ করে যায়, পার্লামেন্ট সারভাইভ করতে পারে না, সরকারও সারভাইভ করতে পারে না। মওদুদ বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এখন জাতীয় দলিল। ফলে যারা এই রায়ের অবমূল্যায়ন করতে চান তারা অনুশোচনা করবেন এবং এতে করে সরকারের পতন দ্রুতগতিতে হবে। তিনি বলেন, সরকার আগামী নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন এটা আদালত অবগত রয়েছে। তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন। অথচ সরকার থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে নানান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের হুঁশিয়ারি দিতে চাই, ষড়যন্ত্র করে অতীতেও বিএনপিকে দুর্বল করা যায়নি, বরং বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মওদুদ বলেন, এই কমিশন ইতোমধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাদের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কারণ, এই নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। তাই নির্বাচন কমিশনারকে বলব, যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সাহস না পান তাহলে পদত্যাগ করুন। নিজের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ঘরোয়া সভার কর্মসূচীর অনুমতি না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহিল মাসুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাসুজ্জামান দুদু, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন প্রমুখ। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলাম কেন? দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এখন কোথায়? তাদের নীরবতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, আগামী বছরের মধ্যে দেশে একটি নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগও অংশ নেবে। অন্যান্য দলও অংশ নেবে। তবে সেই নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না। সেই নির্বাচন হবে একটি নিরপেক্ষ বা সহায়ক সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অশুভ ইঙ্গিত বহন করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেয়া বক্তব্য অশুভ ইঙ্গিত বহন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ‘আদালত যতবার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করবে, ততবার সংসদে তা পাস হবে’। অর্থমন্ত্রী যেহেতু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সেহেতু তার এ বক্তব্য সরকারেরই বক্তব্য। আদালতের রায় নিয়ে মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে আদালত অবমাননার শামিল। তবে বার্ধক্যজনিত কারণ অথবা ক্ষমতা হারানোর হতাশায় অর্থমন্ত্রী এ বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্য ‘বিএনপির টপ টু বটম নেতাদের পদত্যাগ করা উচিত’-এর জবাবে রিজভী বলেন, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা এখন শিশুসুলভ প্রলাপ বকছেন। তাদের বেশিরভাগের বক্তব্যই এখন অসংলগ্ন। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় চরম অব্যবস্থা চলছে। একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দায়ী। তিনি বলেন, হজযাত্রী পরিবহন শুরুর পর ১২ দিনে বাতিল হয়েছে ১৯টি ফ্লাইট। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় এসে দুর্ভোগে পড়ছেন হজযাত্রীরা। রাজধানীর হজ ক্যাম্প, হোটেল ও আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় ভোগান্তির দিন পার করছেন কয়েক হাজার হজযাত্রী। সরকার কোন নীতিমালা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করায় হজযাত্রীরা হয়রানিতে পড়ছেন। ৪০ হাজার হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। অথচ ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-সংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে দুদক- ফখরুল দুদকের প্রধান দায়িত্ব দুর্নীতি দমন করা হলেও তা না করে দুদক সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, দুদক একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে আমরা হতাশ হয়েছি। মনে হচ্ছে তিনি সরকারের মুখপাত্র। আমরা মনে করি তার বিবৃতি খালেদা জিয়ার মামলার বিচারিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল। তিনি বলেন, দুদক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করলেও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন মামলার পদক্ষেপ নেয়নি। মির্জা ফখরুল বলেন, দুদকের প্রায় সব আইনজীবী পক্ষপাতদুষ্ট। তারা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। দুদক ও সরকারের ভূমিকা একাকার হয়ে গেছে। তাই আমরা খালেদা জিয়ার চলমান মামলার কার্যক্রম নিয়ে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। যেখানে একই মামলায় অন্যরা তিন সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহ সময় পান। সেখানে খালেদা জিয়াকে খুব কম সময় দেয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। আইন বলে মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সব সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে তো সংবিধানের লঙ্ঘন হবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দুদক কেন এতো তাড়াহুড়ো করছে? সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নাল আবেদিন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
×