ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টিভেজা মাঠে শেখ জামালের কষ্টার্জিত জয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৪ আগস্ট ২০১৭

বৃষ্টিভেজা মাঠে শেখ জামালের কষ্টার্জিত জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ম্যাচের বয়স তখন তিন মিনিট ১০ সেকেন্ড। হঠাৎই স্কোরবোর্ড থেকে খসে পড়ে একদিকে হেলতে লাগল টিম বিজেএমসির নামফলকটি। এটাই যেন পুরো ম্যাচের প্রতীকী হয়ে থাকল। টিম বিজেএমসিকে হেলিয়ে দিল শেখ জামাল ধানম-ি! ম্যাচ শেষেও তাই প্রমাণিত হলো। ‘সাইফ পাওয়ার ব্যাটারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে বৃহস্পতিবারের খেলায় শেখ জামাল ১-০ গোলে হারাল টিম বিজেএমসিকে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেন জামালের নুরুল আবসার। এটি ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত জামালের টানা দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচে তিন বারের লীগ চ্যাম্পিয়নরা ২-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডানকে। পক্ষান্তরে এটি নিজেদের প্রথম ম্যাচে ‘সোনালি আঁশের দল’ খ্যাত বিজেএমসি গোলশূন্য ড্র করেছিল ব্রাদার্সের সঙ্গে। গত লীগে দুই বারের লীগ শিরোপাধারীরা প্রথম সাক্ষাতে ২-৩ গোলে হেরেছিল জামালের কাছে। ফিরতি ম্যাচে অবশ্য রুখে দিয়েছিল জামালকে (১-১)। এবার অবশ্য হার দিয়েই শুরু করল তারা। দু’দলের খেলা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে আকাশের এমনই ‘কান্না’ শুরু হয় যে ঢাকার অনেক রাস্তাঘাটই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দুই ঘণ্টার অমন ভারি বর্ষণে নিম্নমানের ড্রেনেজ সিস্টেমের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। রেফারি জালালউদ্দিন দুই সহকারী ফেরদৌস আহমেদ এবং নাহিদকে নিয়ে মাঠ পর্যবেক্ষণ করেন এবং ম্যাচ কমিশনার আর আলমকে রিপোর্ট করেন। জানানো হয়, মাঠ খেলার পুরোপুরি উপযোগী করতে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে খেলা শুরু হয় আধঘণ্টা বিলম্বে। প্রথমার্ধে বিজেএমসি এবং জামাল উভয় দলই ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলা শুরু করে। আগের ম্যাচে (বিপক্ষ মোহামেডান) রেফারিকে বাজে মন্তব্য করে ডাগআউট থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় এই ম্যাচে কোচের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি শেখ জামালের নাইজিরিয়ান কোচ জোসেফ আফুসি। ফলে সহকারী তাজ উদ্দিন তাজুকেই ডাগ আউটে দেখা যায়। কর্দমাক্ত ও ভারি মাঠ হলেও উভয় দল গতিশীল খেলার চেষ্টা করে প্রথমার্ধে। প্রথমার্ধে এ প্রচেষ্টা কিছুটা সফল হলেও দ্বিতীয়ার্ধে বেকায়দায় পড়তে হয় দু’দলকে। বিশেষ করে ছোট পাসে খেলাটা বলতে গেলে অসম্ভবই হয়ে পড়ে। ফলে বিজেএমসি-জামাল চেষ্টা করে লম্বা-উঁচু পাসে খেলতে। তারপরও বল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় দুই দলের ফুটবলারদের। ৭ মিনিটে বক্সে ঢুকে জামালের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওদোভিনেরর ডান পায়ের জোরালো শট বিজেএমসির গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন। ২৫ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে শরীফুল একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে একজনকে কাটিয়ে পোস্টে শট নিলেও জামালের গোলরক্ষক রক্ষা করেন। বিজেএমসির সুযোগ হাতছাড়া হয় তাতে। ৩৮ মিনিটে জামালের সলোমন কিংয়ের লম্বা ফরোয়ার্ড পাস পেয়ে যান মাঝমাঠে অরক্ষিত রাফায়েল। তিনি বল ধরে স্প্রিন্টারের মতো দৌড় লাগান। বিপদ বুঝে তার দুপাশে ছুটতে থাকেন বিজেএমসির দুই ডিফেন্ডার। কিন্তু গতিতে তাদের হারিয়ে দিয়ে দ্রুতই পেনাল্টি অঞ্চলে পৌঁছে যান রাফায়েল। বিজেএমসি গোলরক্ষক সোহাগ হোসেন পলাশ অবস্থা বেগতিক দেখে এগিয়ে আসেন। রাফায়েল ডান পায়ের যে শটটি নেন, তা সোহাগের গায়ে লেগে কর্নারে পরিণত হলে হতাশায় পোড়েন রাফায়েল। নষ্ট করেন গোলের সূবর্ণ সুযোগ। ৫৪ মিনিটে বিজেএমসির ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ডান প্রান্তে ফ্রি কিক পায় জামাল। সলোমনের ফ্রি কিক ফিস্ট করেন বিজেএমসির গোলরক্ষক পলাশ। সেই বল পান জামালের মিডফিল্ডার আলী হোসেন। তিনি বা প্রান্ত থেকে যে বলটি বক্সে ফেলেন, তা ওয়ানটাচের বা পায়ের ভলিতে দর্শনীয়ভাবে জালে জড়িয়ে দেন গত মৌসুমে রহমতগঞ্জের হয়ে খেলা ফরোয়ার্ড নুরুল আবসার (১-০)। কপাল থেকে দুশ্চিন্তার ভাঁজ মসৃণ হয় জামাল কোচ তাজুর। উল্লাসে ফেটে পড়ে জামাল শিবির। গোল হজম করে যেন গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে বিজেএমসি। একের পর এক আক্রমণ শাণায় তারা। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় সেগুলো পর্যবসিত হয় ব্যর্থতায়। তবে তারা গোলের সবচেয়ে ভাল সুযোগ পায় ৬৮ মিনিটে। বিজেএমসির ফরোয়ার্ড রবিন বল নিয়ে ঢুকে পড়েন জামালের পেনাল্টি অঞ্চলে। বাঁ পায়ের তীব্র শট নেন। কিন্তু সেই শট ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মিতুল হাসান। ৮২ মিনিটে জামালের বদলি ফরোয়ার্ড গাম্বিয়ার মমোদৌ বাঁ ও ডান প্রান্ত দিয়ে বিজেএমসির ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে তাদের বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের যে উঁচু শটটি নেন, তা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার বাইবেকের পায়ে লেগে ডিফ্লেক্ট হয়ে জালে ঢুকে যাচ্ছিল। শেষ মুহূর্তে ফিস্ট করে তা কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক পলাশ। শেষ দিকে গোল শোধে মরিয়া হয়ে মরণকামড় দিলেও সফলকাম হতে পারেনি বিজেএমসি। পূর্ণ তিন পয়েন্ট পাওয়ার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে শেখ জামাল।
×