ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ২৫ বিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২ আগস্ট ২০১৭

বান্দরবানে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ২৫ বিদ্যালয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১ আগস্ট ॥ বান্দরবানের লামা উপজেলায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ২৫ সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়া, পাহাড়ের পাদদেশ ও উপরে স্থাপিত হওয়ায় বিদ্যালয়গুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, ফলে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলার লামা উপজেলায় ৮৫ সরকারী ও ৪ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে স্থাপিত ২৫ বিদ্যালয়ের মধ্যে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে ২০ ও ভূমি ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে ৫ বিদ্যালয়। অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলোÑ চেয়ারম্যানপাড়া, বড়বমু, বোচাপাড়া, বড় ফারাঙ্গা খিজ্জানুনা, ত্রিশডেবা, ঠা-ারঝিরি, দরদরীপাড়া, এম হোসেন পাড়া, চিংকুমঝিরি, কম্পোনিয়া পাড়া, লাইনঝিরি, নুনারবিল মডেল সরকারী, অংহ্লারীপাড়া, ছোটবমু, ফাইতং হেডম্যানপাড়া সরকারী, নুনারঝিরি ও মিরিঞ্জা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া ৮ বিদ্যালয় কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, এসব বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। লামার চেয়ারম্যানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী আনিশা হোসেন বলেন, বেশি বৃষ্টি পড়লে আমাদের ভয় লাগে, যদি পাহাড় ধসে স্কুলের উপর পড়ে। জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে লামার বিদ্যালয়গুলো ঝুঁকিতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট দফতরের কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বিধায় ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয়গুলোতে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণের কারণে ৫টি বিদ্যালয় বন্যায় ও ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অংহ্লারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজিমউদ্দিন জানান, বৃষ্টি নামলেই বিদ্যালয়ে আতঙ্ক নেমে আসে, বিদ্যালয় ভবনের নিচতলায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ায় ভবনটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সরজমিন চেয়ারম্যানপাড়া সরকারী ও নুনারঝিরি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয় দুটির পেছনে ভবন ঘেঁষেই রয়েছে বিশাল আকারের পাহাড়। গত কয়েকদিনের থেমে থেমে ভারি বর্ষণের কারণে এ পাহাড়গুলোর মাটি নরম হয়ে গেছে। টানা ভারি বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের অংশ বিশেষ ধসে পড়তে পারে বিদ্যালয় ভবনের ওপর। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছে শিক্ষকরা। ১নং চাম্বি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াছমিন জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের ভবন ধস ঠেকানোর জন্য অনেকবার ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।সরকারীভাবে প্রাপ্ত তথ্যে জানা, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুইজন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৫ সালের লামায় ৪ জন, সিদ্দিকনগরে ১ জন ও সদরের বনরূপায় ২ জন এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে সদরের কালাঘাটার দুটি স্থানে শিশুসহ ৬ জন এবং গত ২৩ জুলাই বান্দরবান রুমা সড়কের দলিয়ানপাড়া এলাকায় ৫ জন নিহত হয়। গত কয়েক বছরের এসব ঘটনায় আহত হয় দেড় শতাধিক। একের পর এক ঘটনায় পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কামালউদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকার ভবন রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যতীন্দ্র মোহন ম-ল বলেন, ভবনগুলো রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়েছি।
×