ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ দ্বিতীয় মুক্ত দিবস

উন্নয়নে দৃশ্যমান বিলুপ্ত ছিটমহল

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১ আগস্ট ২০১৭

উন্নয়নে দৃশ্যমান বিলুপ্ত ছিটমহল

তাহমিন হক ববী, সাবেক ছিটমহল হতে ফিরে ॥ কি পেলাম? কি পেলাম না? এ নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই আমাদের। যেটি বড় পাওয়া সেটি আমরা পেয়ে গেছি। ৬৮ বছরের বন্দীদশা হতে মুক্ত হয়েছি। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছে। বন্দীদশার খাচা ভেঙ্গে আমাদের উদ্ধার করেছে আমাদের ‘মা’ শেখ হাসিনা। আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। কথাগুলো বললেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা সাবেক ভারতীয় নাগরিক বিলুপ্ত ছিটমহলের নয়াবাংলা গ্রামের সফিকুল ইসলাম। দেখতে দেখতে ছিটমহলবাসীদের মুক্ত হবার দ্বিতীয় বছর আজ পহেলা আগস্ট। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল ২০১৫ সালে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে স্থলসীমান্ত ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তির অধীনে ছিটমহলগুলো বিলুপ্ত হয়েছিল। দেশের ১১১টি সাবেক ছিটমহলে (বিলুপ্ত ছিটমহল) দ্বিতীয় মুক্তদিবস বার্ষিকী হিসেবে পালন করা হবে। সরকার বিগত দুই বছরে ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে নেয়া সকল কাজ দৃশ্যমান করেছে। উন্নয়ন কাজ এখনও চলছে। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী নাগরিকত্ব ভোটার আইডি কার্ড, বিদ্যুত, রাস্তাঘাট, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। দ্বিতীয় ছিটমহলমুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে পহেলা আগস্ট সূর্য ওঠার পর সকালে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সাবেক ছিটমহলবাসী। প্রতিটি ছিটমহলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আনন্দ র‌্যালি, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারী দল প্রতিটি বিলুপ্ত ছিটমহলে আলোচনা সভা করবে। সেখানে দুই বছরে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নে নেয়া নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা- স¤পর্কে আলোচনা হবে। দুদেশের ১৬২টি ছিটমহলেই দ্বিতীয় বর্ষ পালনে একইসঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে ছিটমহল বিনিময় ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি। ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পায় সেখানকার অধিবাসীরা। এরপর মাত্র দুই বছরে বদলে গেছে অবহেলিত এই জনপদগুলোর চালচিত্র। বিনিময় স¤পন্ন হওয়ার পর ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর আয়তনের ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বিলুপ্ত এ সকল ছিটমহলে ৩৭ হাজার ৫৩৫ জন অধিবাসী পায় বাংলাদেশী নাগরিকত্ব। নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি তারা। গত দুই বছরে মূল ভূখ-ের মানুষ তাদের সঙ্গে সাবেক ছিটমহলবাসী নিজেদের স¤পর্ক গড়ে নিয়েছে। একইভাবে ভারতের ভেতরে থাকা ৫১ বাংলাদেশের ছিটমহল ভারতের হয়ে গেছে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তিতে উভয় ছিটের মানুষ ভারত ও বাংলাদেশের যে কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিতে পারত। এই নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগে বাংলাদেশের ৫৯ ছিটমহল হতে ৯৮৭ নারী-পুরুষ ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে সেদেশে চলে গেছে। কিন্তু ভারতের ভেতরে থাকা ৫১ বাংলাদেশের ছিটমহলের কেউ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেনি। উভয় দেশের সরকার সাবেক ছিটমহলের ভূমি উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলগুলোর জন্য যে দুইশ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়েছেন তা দিয়ে উন্নয়ন চলছে। জানা গেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা সকল বিলুপ্ত ছিটমহলে উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিলুপ্ত ওই চার ছিটমহল নিয়ে গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের মধ্যে সীমানা জটিলতার মামলায় ওই তিন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত হয়ে রয়েছে। তবে অন্য সব সাবেক ছিটমহলে এ সমস্যা নেই।
×