ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষায় জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ২৮ জুলাই ২০১৭

ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষায় জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সমাজ থেকে যেকোন মূল্যে দুর্নীতিকে উচ্ছেদ করতে হবে এবং সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) বার্ষিক সম্মেলন-২০১৭ এ প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম এবং সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের সদস্য, সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আমন্ত্রিত অতিথি এবং জেলা প্রশাসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আমরা ক্রমশ পিছিয়ে যাই। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, সংবিধান লঙ্ঘন করে, মার্শাল ‘ল’ জারি করে ক্ষমতা দখলের যে যাত্রা শুরু হয়, তার ফলে স্বাধীনতা বিরোধীরাই ক্ষমতায় যায়। আর এজন্য বাঙালীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকেই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী একটি জাতি এবং বিজয়ীর মতো মাথা উঁচু করে যেন বিশ্ব দরবারে চলতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের পদক্ষেপ নিয়েছি। তার ফলও আজ দেশের মানুষ পাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আসলে যারা সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করে তারা ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নতি হয়। এটা হলো বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী জনগণের সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালনে সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আহবান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটি অংশ উদ্ধৃত করে বলেন, সমস্ত সরকারী কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি। যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন। যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি তাদের যাতে কষ্ট না হয় তার দিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে তাদের কঠোরহস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান! একটা নিরপরাধ লোকের ওপরও যেন অত্যাচার না হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এভাবেই দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলেন, সরকারী কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবার উর্ধে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ এদেশ আজকে স্বাধীন হয়েছে বলেই আপনারা এত উচ্চ পদ পাচ্ছেন। সেখানে আপনাদের মূল দায়িত্বই হচ্ছে জনসেবা করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্য ও ভিক্ষুকমুক্ত করতে চাই। সমাজকে আমরা গড়ে তুলতে চাই সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থাৎ আয় বৈষম্য দূর করে তৃণমূল থেকে একদম কেন্দ্র পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে যেন দেশের উন্নয়ন হয় সেখানে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ করব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের রক্ষা করতে হবে এই অশুভ তৎপরতা থেকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল, সামাজিক নিরাপক্তমূলক কর্মসূচীগুলো যেন যথাযথভাবে কার্যকর হয় এবং মানুষের সেবা পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, বাংলাদেশকে যদি দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই তাহলে অবশ্যই শিক্ষিত জাতি হিসেবে এদেশকে গড়ে তুলতে হবে এবং সেদিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ইতোমধ্যেই আমরা এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি। কাজেই এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে যেন যথাযথ বিনিয়োগ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে ইলেকট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ইজিপি) চালু করা হয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে আপনাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সরকারের পাশে থেকে আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের কথা মাথায় রেখে ২০১০ সালের ১১ নবেম্বর উদ্বোধন করা হয় ‘ইউনিয়ন কেন্দ্রিক তথ্য ও ডিজিটাল সেন্টার’ যা ‘ইউডিসি’ হিসেবে পরিচিত। এ সকল ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এসব সেন্টার থেকে প্রায় ৬ প্রকার অনলাইন ও অফলাইন সেবা পাচ্ছেন। মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটি ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭২ লাখে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের হাতের মুঠোয় তথ্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ২৭ হাজার অফিসে পোর্টাল সংবলিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ তথ্য পোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ করা হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের সকল পর্যায়ের কর্মচারীর নিরন্তর পরিশ্রমের ফসল এ ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও নির্দিষ্ট সময়ে কর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও দফতর/সংস্থার বার্ষিক কর্মসম্পাদন, চুক্তি সম্পাদন ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আপনাদের মাধ্যমেই জনগণের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল সরকারী দফতরে ‘স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ নির্দেশিকা প্রণয়ন সহায়ক’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৬৪ জেলা, ৮ বিভাগীয় কমিশনার অফিস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ১৪ মন্ত্রণালয় এবং ৩ অধিদফতরে ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজার ৩৩১ স্কুলে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। এ কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আপনারাই। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে একজন জেলা প্রশাসক, ৩ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ৩ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আনন্দিত যে, জনগণকে স্বল্প সময়ে, কম ব্যয়ে এবং বিনা ভোগান্তিতে সেবা দিতে প্রশাসন ক্যাডারের নেতৃত্বে মাঠ এবং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে গড়ে তোলা হয়েছে ইনোভেশন টিম। আপনাদের কর্মপ্রয়াস বাস্তবায়নে (এ টু আই) থেকে প্রদান করা হচ্ছে ইনোভেশন ফান্ড। তিনি বলেন, আপনাদের কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করতেই জনপ্রশাসন পদক প্রবর্তন করা হয়েছে। যথাসময়ে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে তদূর্ধ নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যেই আমি পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে যেকোন সমস্যা এবং আইনী বাধাসমূহ নিষ্পত্তি করে প্রশাসনসহ সকল ক্যাডারের কর্মকর্তার পদোন্নতির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। কর্মসম্পাদনের মান ও মাত্রাকে বস্তুনিষ্ঠ এবং ফলাফলভিত্তিক করার উদ্দেশে ‘কর্মকৃতী ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি’ চালু করার অনুমোদন দিয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারী কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যেই নতুন বেতন স্কেলে সর্বোচ্চ ১২২ শতাংশ পর্যন্ত বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য সরকারী কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ শ্রম, মেধা ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা প্রয়োগ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রুত, স্বল্পতম সময়ে এবং কোন হয়রানি ছাড়া সরকারী সেবা প্রাপ্তির অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে- কথাটি সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে এ এ্যাসোসিয়েশনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
×