ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৎস্যমেলায় বাহারি মাছের সমাহারে মুগ্ধ দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২২ জুলাই ২০১৭

মৎস্যমেলায় বাহারি মাছের সমাহারে মুগ্ধ দর্শনার্থী

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ‘স্বচ্ছ কাচে ঘেরা এ্যাকুরিয়ামে বড় আকারের দুটি রাজপুঁটি। মা রাজপুঁটিকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য পোনা। সঙ্গে আছে বাবা রাজপুঁটিও।’Ñ ৩ বছরের শিশুকে রাজপুঁটি চেনাতে এক মায়ের বর্ণনা ছিল অনেকটা এরকম। আর বাবাকে উদ্দেশ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তাহসিন রেজার প্রশ্নÑ ‘বিএফআরআই কি? বাংলাদেশ ফিশারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট?’ হঠাৎ এই প্রশ্নটি শুনে বাবা কিছুটা থেমে গেলেন। উত্তর দেয়ার আগেই ছেলে পরক্ষণে বলে উঠেÑ হ্যাঁ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাবা মাথা নাড়িয়ে হেসে হেসে বললেন, হ্যাঁ তাই। রাজধানীতে পাঁচদিনব্যাপী চলমান কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলার দ্বিতীয়দিনের দৃশ্য ছিল এটি। আর শিশুদের মতোই মেলা ঘুরে বাহারি মাছের সমাহারে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থী। নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কেও জেনে নিচ্ছেন অনেকে। আবার মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন কেউ কেউ। এদিকে মেলা উপলক্ষে মাছ তৈরির সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হয়েছে খামারবাড়ির সামনের রাস্তা। রাজধানী খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ প্রাঙ্গণের এই মেলা চলবে আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত। এদিকে মৎস্য মেলার প্রবেশপথটিও চোখে পড়ার মতো। পলো, জাল ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো গেটটি আকর্ষণ করবে সবাইকে। যেন টেনে নেবে ভেতরে। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দর্শনার্থীরা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। জেনে নিচ্ছেন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের নেয়া নানা প্রকল্পের অগ্রগতি ও কর্মকা-। একটু সামনে এগুলেই চোখে পড়বে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টল। এখানে দেখা মিলছে বড় আকারের তেলাপিয়া, পারশে, ভেঁটকি, চিত্রা, রাজপুঁটি ও পাবদা মাছ। এখানকার এ্যাকুরিয়ামে সাজানো বাহারি মাছ দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তাহসিন বলেন, নানা প্রজাতির নতুন নতুন মাছ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। ফিসট্যাক হ্যাচারি লিমিটেডের স্টলে কথা হলো দায়িত্বে থাকা আমিরুল হকের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি জানান, তাদের স্টলে একোয়া কালচার পদ্ধতিতে মাছ চাষের সব প্রযুক্তি প্রদর্শিত হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে মাছের পোনা ও ওষুধ। এছাড়া পানিতে অক্সিজেন তৈরির যন্ত্র ‘এরেটর’ও বিক্রি হচ্ছে তাদের স্টলে। যার দাম পড়ছে ৪৩ হাজার টাকা। স্টলটিতে উন্নত মানের খাবারেও ১০ শতাংশ ছাড় রয়েছে। মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের স্টলে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা স্বর্ণা নাগের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি জানান, চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের কার্যক্রমই তাদের স্টলের মূল আকর্ষণ। বড় বড় জাহাজে মাছ ধরে এনে সেখানে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে ওই মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে মাছের উৎপাদন আরও কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তাও জানানো হচ্ছে স্টলটি থেকে। এসিআইয়ের স্টলে দেখা গেল, ‘ই-ফিশারি’ নামের নতুন একটি প্রযুক্তি। সাধারণত মাছের খামারে পরিচর্যাকারীকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করতে হলেও এ প্রযুক্তিতে তা করতে হবে না। যন্ত্রটিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার লোড করে সময় নির্ধারণ করে দিলেই চলবে। শুধু তাই নয়, পানির ওই স্থানটিতে মাছের আনাগোনার ওপর নির্ভার করে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হবে তার ওপর নির্ভর করে যন্ত্রটি পানিতে ছিটিয়ে দেবে ওই খাবার। স্টলের দায়িত্বে থাকা ফাহাদ জানান, প্রযুক্তিটি এখনও উন্মুক্ত হয়নি। পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। মেলায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। এর একটি জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প। এর আওতায় ৫৩ জেলার ২৩১টি উপজেলায় বদ্ধ পুকুর বা জলাশয় সংস্কার করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ চলছে। প্রকল্পের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্প এলাকায় খাস জমির যেসব বদ্ধ পুকুড় বা খাল-বিল বরাট হয়ে গেছে তা সংস্কার করে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। উপকারভোগীরা ওইসব জমি লিজ নিচ্ছে। পরে প্রকল্পের আওতায় তা সংস্কার করে সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, এতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পয়েছে। বেড়েছে উপকারভোগীর সংখ্যা। তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গাতে একটি বিল সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। এছাড়াও সেখানে সংস্কারকৃত একটি নদীতেও মাছের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে একটি স্টলে। স্টলের ভেতরে দেখা যাচ্ছে, বদ্ধ জলাশয়ে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে। এখানে রয়েছে মৎস্য গ্রাম ও মৎস্য অভয়াশ্রম। কর্মকর্তার জানালেন, খাঁচায় মাছ চাষ করার জন্য জেলেদের সরকারীভাবে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। খাঁচা পদ্ধতি মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতিটি খাঁচা তৈরি করতে ব্যয় হবে ২০ হাজার টাকা এবং প্রতিটি খাঁচাতে ৭০০ মাছ চাষ করা যাবে। কর্মকর্তাদের মতে, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরে এতে মাছ চাষ ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
×