ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ বিদেশীদের ই-কার্ড দেয়ার সময় আর বাড়াবে না মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ জুলাই ২০১৭

অবৈধ বিদেশীদের ই-কার্ড দেয়ার সময় আর বাড়াবে না মালয়েশিয়া

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়া অবৈধ বিদেশী কর্মীদের ই-কার্ড দেয়ার সময় আর বাড়াবে না। তবে রিহায়ারিংয়ে নিবন্ধনের সময় এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। বুধবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশের অবৈধ এক হাজার ২৮৬ কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে। আটক ব্যক্তিদের অল্প দিনের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার বিষয়ে বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, মালয়েশিয়া অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার জন্য এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) আর কোন সুযোগ দেবে না। তবে আশার কথা হচ্ছে, তারা রিহায়ারিংয়ে নিবন্ধন কর্মসূচী বহাল রেখেছে। এই কর্মসূচী এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। রিহায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২ লাখ ৯৩ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩ লাখের মতো কর্মী নিবন্ধিত হতে পারবেন। ই-কার্ডের বিষয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দু’দফা বৈঠকের পরও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ কর্মসূচীর আর সময় বাড়ানো হবে না। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনার সুযোগ তারা দেয়নি। এখন আমরা জোর দিয়েছি রিহায়ারিং কর্মসূচীর ওপর। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার মালিক পক্ষ এ কর্মসূচীতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। তারাও কোন অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করাতে চান না। কারণ ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করানোর দায়ে ৫৯ মালিককেও আটক করেছে। দফায় দফায় সময় দেয়ার পরও বহু অবৈধ কর্মী ই-কার্ড নেয়নি। যারা ই-কার্ডের আওতায় আসেনি তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন প্রধান মুস্তাফার আলী বাংলাদেশের কর্মীদের বিষয়ে বলেন, খুব কম কর্মী ই-কার্ডের সুবিধা নিয়েছে। বাকি বেশিরভাগ কর্মীই ই-কার্ডের সুযোগ নেয়নি। এ অবস্থায় আরেক দফা সময় বাড়ানোর কোন কারণ নেই। আরও কয়েক দফা সময় বাড়ানো হলেও অবৈধরা অবৈধই থেকে যাবে। তাদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, ই-কার্ড কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই বাংলাদেশের। চলমান রিহায়ারিং কর্মসূচীতে এ পর্যন্ত নিবন্ধিতের মধ্যে ২ লাখ ৯৩ হাজার বাংলাদেশী। যেহেতু বাংলাদেশীরা নিবন্ধনের সুযোগ নিচ্ছেন, তাই তারা যেন ভয়ভীতি ছাড়াই এই কর্মসূচীর সুযোগ নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানোর পর মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ মালিকদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে, যারা রিহায়ারিং কর্মসূচীর সুযোগ নিতে চান তাদের যেন অনুমতিপত্র দেয়া হয়। এই অনুমতিপত্র হাতে থাকলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। মালয়েশিয়ার অভিবাসন দফতরের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী রিহায়ারিং কর্মসূচী বিষয়ে এ কথা জানান। হাইকমিশনের শ্রম কর্মকর্তা সায়েদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত সোমবার মুস্তাফার আলী বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনীতিকদের বলেন, অবৈধ বিদেশী কর্মী বিরোধী অভিযানে দুই সপ্তাহে সাড়ে চার হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজার ২৮৬ বাংলাদেশের। ই-কার্ডে নিবন্ধিত অবৈধ বিদেশী কর্মীর ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশের। এ ছাড়া রিহায়ারিং কর্মসূচীতে নিবন্ধিত হয়েছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার বাংলাদেশী। ওই আলোচনায় মালয়েশিয়ায় ই-কার্ডে নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশীদের ধরপাকড় বন্ধ এবং বৈধ প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়ার পর অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধতা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রীসহ দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবৈধ বিদেশী কর্মীদের আটক-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে অবৈধ কর্মীদের তারা দেশে রাখাবে না। ১৫ সোর্স কান্ট্রির অবৈধ সব কর্মীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে, জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) নেতৃবৃন্দ বলেন, মালয়েশিয়ায় যখন বৈধপথে লোকজনের কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য বাজারটিতে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র ও ট্যুরিস্ট ভিসায় কর্মী পাঠানো, সাগরপথে হাজার কর্মী পাচার না হলে আজ মালয়েশিয়ায় এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না। দেশটিতে কর্মীদের এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যা খুবই দুঃখজনক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের প্রতি অভিযোগ তুলে তারা বলেন, আজকের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য তারা বড় ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। একইভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিও তারা অভিযোগ তুলেছে। বাংলাদেশের এত কর্মী আটক হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাইকমিশনের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। মন্ত্রণালয়ের দু’জন মন্ত্রী থাকার পরও কোন মন্ত্রীই বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেননি।
×