ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০ ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

রেমিটেন্সের ফি কমানোর সিদ্ধান্ত আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ জুলাই ২০১৭

রেমিটেন্সের ফি কমানোর সিদ্ধান্ত আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রেমিটেন্স প্রবাহের নিম্নগতিতে চাপের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বর্তমান সরকার। প্রবাহ বাড়াতে ফি কমানোসহ নানা উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে আগামী ২৪ জুলাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, রেমিটেন্স ফি কমানোর বিষয়ে বুধবার রেমিটেন্স আহরণকারী শীর্ষ ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বে অগ্রণী, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, জনতা, ন্যাশনাল, মার্কেন্টাইল এবং ইসলামী ব্যাংকসহ ২০ ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, রেমিটেন্স ফি কমাতে ব্যাংকগুলোর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। তবে এটি একটি প্রাথমিক আলোচনা। আগামী ২৪ জুলাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। সেখানে রেমিটেন্স ফি কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে গত মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা তেজী রাখতে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। সম্প্রতি রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অস্বস্তিতে রয়েছে। রেমিটেন্স কমে যাওয়ার পেছনে তিনি উৎস দেশগুলোতে অর্থপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনের কঠোরতাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমাতে রেমিটেন্স আহরণকারী শীর্ষ ২০ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রেমিটেন্স প্রবাহের নিম্নগতিতে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সরকারও। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে শীঘ্রই ট্রান্সফার ফি কমানো হবে। যা আগামী মাস থেকে কার্যকর হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমাতে সাবসিডি দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া রেমিটেন্স ফি কমাতে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। এ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা। আগের অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। এ হিসেবে বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ নিম্নমুখী ছিল। রেমিটেন্স আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। তাই রেমিটেন্সপ্রবাহ কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে রেমিটেন্সপ্রবাহ বাড়াতে চলতি অর্থবছর চারটি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এগুলো হলো- প্রবাস আয় প্রেরণে ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউজকে রেমিটেন্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত তাদের স্থানীয় ব্যাংকের সঙ্গে এ দেশের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধকরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রেমিটেন্সপ্রবাহ কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্বিগ্ন। এ কারণে দেশের রেমিটেন্স আহরণকারী শীর্ষ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগেও আলোচনা করেছে। এছাড়াও রেমিটেন্স কমার কারণ জানতে বিভিন্ন দেশে খোঁজ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কিভাবে আরও কমানো যায় সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব কিছুর উদ্দেশ্যই হলো রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো। আর সেই লক্ষ্যেই রেমিটেন্স আহরণকারী শীর্ষ ২০ ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে কেন্দ্রীয় বাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী আয় সবচেয়ে বেশি আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতির অবস্থা খুব ভাল নেই। এছাড়া সেসব দেশে মানি লন্ডারিং আইনও কড়াকড়ি। কোন শ্রমিক যখন দেশে অর্থ পাঠাতে চায় তখন তাদের নিয়োগপত্রসহ অনেক কাগজপত্রই চাওয়া হয়। এসব কারণে অনেকেই বৈধপথে অর্থ পাঠাতে নিরুৎসাহিত হন। এছাড়া ডলােেরর দাম ওঠানামা তো আছেই। এসব কারণে অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচও কিছুটা বেশি বলে মনে করছেন অনেকে। এসব কারণে রেমিটেন্স প্রবাহে গতি অনেকটা শ্লথ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। ৮০ টাকা এক ডলার ধরলে টাকার অঙ্কে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। রেমিটেন্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই বছর ধারাবাহিক রেমিটেন্স কমে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১১-১২ অর্থবছর প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ছিল। এরপর থেকে প্রতিবছরই প্রবাসী আয় ১৪ হাজার ডলারের উপরে ছিল। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হঠাৎ প্রবাসী আয় কমে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন রেমিটেন্স।
×