ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা পরিস্থিতির শেষ কোথায়

মিয়ানমারের ভ্রূক্ষেপ নেই, মানবতা দেখাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ জুলাই ২০১৭

মিয়ানমারের ভ্রূক্ষেপ নেই, মানবতা দেখাচ্ছে বাংলাদেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও যে মানুষ তা একেবারেই মানতে নারাজ তা সে দেশের সরকারের কর্মকা-ে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কোন অনুরোধ তারা যেমন রাখেনি, তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের কোন অনুরোধ বা পদক্ষেপ মানতে নারাজ সে দেশের এনএলডি শাসিত আউং সান সুচি সরকার। নোবেল বিজয়ী আউং সান সুচির পক্ষ থেকে এ ধরনের আচার আচরণ বিশ্ব বিবেক আশা না করলেও তাই ঘটছে। ২০১৫ সাল থেকে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনার পর দলে দলে রোহিঙ্গারা দেশ ত্যাগ করেছে। এর বড় একটি অংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ সরকার এদের একটি অংশকে শরণার্থী ও বড় একটি অংশকে আশ্রয়ের মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের এ বিষয়ে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই বলে অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান। সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের আগমন এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে তা সংখ্যায় কম। ঢলের মত এসেছে ২০১৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। রাখাইন প্রদেশের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় যেভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, নারী ধর্ষণ করেছে তা দেরিতে হলেও বিশ্ব দরবারে প্রমাণিত হয়েছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পৃথিবীর শক্তিশালী দেশসমূহ একে একে মিয়ানমার সরকার থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি সংযম আচরণ করার আকুতি জানানো হয়েছে। সর্বশেষ মানবিক আচরণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের সর্বশেষ বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ সার্বিক সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু বিষয়টি এমন হয়েছে যে কার কথা কে শোনে। উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ অবৈধভাবে রুজি-রোজগারের পথ বেছে নিয়েছে। অনেকে জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা ব্যবসায়। শুধু তাই নয়, তারা বাংলাদেশীদের মত নানা স্থানে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছে। বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প ও টেকনাফের টালগুলোতে (বস্তি) বৈধভাবে বসবাস করছে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার। অবশিষ্ট সব রোহিঙ্গাই অবৈধ। তবে গেল দুই বছরে যেসব রোহিঙ্গা এদেশে এসেছে এবং আশ্রয় নিয়েছে তাদের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত এসেছে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু।
×