ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ সদর দফতরে ৮ দিনব্যাপী এইচএলপিএফ বৈঠক শেষ আজ

এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় প্রতিবেদন পেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ জুলাই ২০১৭

এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় প্রতিবেদন পেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে (এইচএলপিএফ) বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। ‘পরিবর্তিত বিশ্বে দারিদ্র্য নির্মূল ও উন্নয়নে অগ্রগতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ফোরামের আট দিনব্যাপী বৈঠকের অংশ হিসেবে সোমবার তিন দিনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত ১০ জুলাই নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে শুরু ফোরামের আট দিনব্যাপী বৈঠক আজ ১৯ জুলাই শেষ হবে। এর মধ্যে সোমবার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ৪৪টি দেশ এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি বিষয়ে তাদের জাতীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। উদ্বোধনী দিনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বৈঠকে যোগ দেয়। এদিন অন্যতম প্যানেল আলোচক হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামালের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনায় এসডিজির বিভিন্ন অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে দারিদ্র্য নির্মূল, ক্ষুধা, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, লিঙ্গ সমতা, শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, জলজ জীবন এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব- এই সাতটি লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরেন। উপস্থাপনায় এসডিজি বাস্তবায়নকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে জানিয়ে এর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন কৌশল তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজিকে সন্নিবেশিত করা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে এসডিজিকে অন্তর্ভুক্ত করা, এসডিজি ট্র্যাকার সৃষ্টি, আন্তঃমন্ত্রণালয় এসডিজি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি গঠন, মন্ত্রণালয়ের ম্যাপিং এবং ডেটাগ্যাপ এনালাইসিসের মতো বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রদর্শন করা হয়। এতে দেখানো হয়, বাংলাদেশে উচ্চ ও নিম্ন দারিদ্র্য রেখা যথাক্রমে ২৪ দশমিক শূন্য ৩ ও ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ১৯৯১ সালে ছিল যথাক্রমে ৫৬ দশমিক শূন্য ৭ এবং ৪১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর প্রাধিকার প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’র পাশাপাশি উঠে আসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ, ডিজিটাল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এবং জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচী। পদ্মা সেতুসহ মেগা অবকাঠামো প্রকল্পসমূহও এ প্রতিবেদনে স্থান পায়। এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কোন অবস্থানে রয়েছে, চ্যালেঞ্জসমূহ কী এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন কৌশলের পাশাপাশি বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। গত দুই বছরে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির তথ্য উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেতৃত্বে ২২ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলটিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এছাড়া দিনের শুরুতে বাংলাদেশ, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসের যৌথ আয়োজনে ‘ব্যক্তি খাতে এসডিজি অর্জন : ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যক্তি খাতের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারী প্রণোদনা’ শিরোনামের সাইড ইভেন্টে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল। এতে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষ্যসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতের নিবিড় সম্পৃক্ততা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ আয়োজিত এই প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন এসডিজি বাস্তবায়নের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে এস্তোনিয়ার পরিবেশ বিষয়ক উপমন্ত্রী আডো লোহ্মুজ, নেপালের পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা ছিল, যাতে বাংলাদেশে তথ্যের সহজলভ্যতা এসডিজি বাস্তবায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে কিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে তা তুলে ধরা হয়। এইচএলপিএফের দিনব্যাপী কর্মসূচীতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনমিকস ডিভিশনের সদস্য শামসুল আলম ও পিকেএসএফের মহাপরিচালক আব্দুল করিম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জিআইইউর মহাপরিচালক আব্দুল হালিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআইর পলিসি এ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরীও ছিলেন।
×