ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওস্তাদ আলাউদ্দিনের পারিবারিক কবরস্থান বিক্রি

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৮ জুলাই ২০১৭

ওস্তাদ আলাউদ্দিনের পারিবারিক কবরস্থান বিক্রি

সমুদ্র হক ॥ সুরের সাধক ওস্তাদ আলাউদ্দিন সরকার। অধিক পরিচিতি ‘আলা সরকার’ নামে। আজকের প্রবীণ ও মধ্যবয়সীরা এক নামে তাকে চেনেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমেদসহ অনেক গুণী ব্যক্তির সান্নিধ্য তিনি পেয়েছে। দেশ ভাগের আগে কলকাতা মুম্বাইতে গিয়ে সঙ্গীত, সিনেমা জগতের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন। ভাল ক্যারিকাচার করতে পারতেন। বগুড়ার গুণী এই শিল্পীর কবরসহ তার স্ত্রী পুত্র ও পূর্বসূরিদের কবরস্থান তথা পারিবারিক কবরস্থান প্রভাবশালীরা কিনে নিয়ে তার ওপর গড়ে তুলছেন অবকাঠামো। জায়গাটি ওস্তাদ আলা সরকারের পারিবারিক কবরস্থানকে চিহ্নিত আছে। দেশের প্রচলিত নিয়মে কবরস্থান বেচাকেনা সম্পূর্ণ নিষেধ। আইনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা না জানিয়ে বগুড়ার এক ধনী ব্যক্তি ওস্তাদ আলা সরকারের বংশধরদের কবরস্থান কিনে নিয়েছেন। স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে ওস্তাদ আলাউদ্দিন সরকারের সংসার ছিল। তারা সকলেই গত হয়েছেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন সরকার ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া শহরের বৃন্দাবনপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের ১৪ নবেম্বর তিনি ৯৯ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ওস্তাদ আলা সরকারের একমাত্র ছেলে আছির উদ্দিনের (মৃত) ৪ ছেলে ৩ মেয়ে। তারা দাদা ও পৈত্রিক সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করেন শাহীন আলমের কাছে। তিনি আবার এই সম্পত্তি বিক্রি করেন বগুড়ার ছাপাখানা ব্যবসায়ী নুরুন্নবী ভোলার কাছে। ছাপাখানা ব্যবসায়ী নুরুন্নবী ভোলা ওই সম্পত্তির ধারে ১৪ শতাংশ ভূমির ওপর পারিবারিক কবরস্থানও নিজের দখলে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে পারিবারিক কবরস্থানে নতুন মাটি ফেলে সমান্তরাল করা হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে কবরস্থানের ওপরের গাছ গাছালী। কবরস্থানের কাছে ওস্তাদ আলা সরকারের দান করা জায়গায় একটি মসজিদ আছে। এই বিষয়ে ওস্তাদ আলা সরকারের নাতী আজমল হোসেন নান্টু বলেন, তারা প্রথমে শাহীন আলমের কাছে কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেন। তবে কোনভাবেই পারবারিক কবরস্থান বিত্রি করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে ছাপাখানার মালিক নুরুন্নবী ভোলা বিক্রিত ভূমির সঙ্গে কবরস্থানও লিখে নেন। এ নিয়ে তারা মামলাও করেন। এদিকে ক্রেতা নুরুন্নবী ভোলা বলেন, তিনি যে ভূমি কিনেছেন তা মাঠ হিসেবে উল্লেখ আছে। তিনি মাঠ কিনেছেন। মাঠের মধ্যে কবরস্থান থাকলে তাও মাঠ। তিনি এই কবরস্থান মাটি দিয়ে ভরাট করে তার ওপরে অবকাঠামো স্থাপনা গড়ার কাজ শুরু করেছেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর বগুড়া নগরীর পৌর উদ্যানের মুক্তমঞ্চকে ওস্তাদ আলাউদ্দিন মঞ্চ নামকরণ করা হয়। গুণী এই শিল্পীর কবর এখন বিক্রি হয়ে গেল। এই বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না কবরস্থান ক্রেতাদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন বগুড়ার গর্ব বরেণ্য এই শিল্পীর কবর কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় এ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের তিনি যোগাযোগ রেখেছেন।
×