মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ৯ম স্প্যান এখন মাওয়ায়। চীন থেকে সমুদ্রপথ হয়ে নদীপথে এটি মাওয়ার কুমারভোগ ওয়ার্কশপে খালাস হয়েছে। এর আগে সেতুর আরও ৮টি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) একইভাবে এই ওয়ার্কশপে আসে। ৯টি স্প্যানের মধ্যে ৫টির ফিটিং সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটির চূড়ান্ত রঙের কাজ চলছে। উচ্চ ধারণ ক্ষমতার ভারি স্টীলের প্রতিটি স্প্যানের ওজন প্রায় ৩ হাজার টন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি ৪১ স্প্যানবিশিষ্ট। আরও ১১টি স্প্যান চীনে তৈরি করে রাখা হয়েছে। বাকি ২১টি স্প্যানও তৈরি বা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
হ্যামারের অভাবে পাইল ড্রাইভ বিঘিœত হচ্ছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে আরও দুটি বড় আকারের হ্যামার আনা হচ্ছে। ১৯ শ’ কিলোজুল ক্ষমতার জার্মান হ্যামার ইতোমধ্যেই সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে সমুদ্রপথে রওনা হয়েছে। চলতি মাসের শেষেরদিকে এটি মাওয়ায় আসবে। এছাড়া ৩৫শ’ কিলোজুল ক্ষমতার আরও একটি হ্যামার আনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। এটিও শীঘ্রই আসবে বলে আশা করছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি আসা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হ্যামারটি (৩৬শ’ কিলোজুল) এখনও পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি। টেকনিক্যাল নানা কারণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে শীঘ্রই এটি পুরোদমে কাজ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২৪শ’ কিলোজুলের প্রথম হ্যামারটি পাইলিংয়ের শুরু থেকেই ভালভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এর রীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর মবিল পরিবর্তনসহ নানারকম সংস্কারের প্রয়োজন হয়। আর এখন সেই সংস্কারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এটি। তাই গত কয়েক দিনে পাইল ড্রাইভ কাজ এগোয়নি। তবে এই সংস্কার শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। রবিবার থেকেই আবার জার্মান হ্যামারটি পাইল স্থাপনে ব্যস্ত হবে। এছাড়া এর আগে বিকল হওয়া ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হল্যান্ডের হ্যামারটি এখনও পাইল ড্রাইভ করতে পারছে না। তাই সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও হ্যামারের অভাবে পাইল ড্রাইভ বিলম্বিত হচ্ছে।
এদিকে পদ্মা থেকে প্রথমে উঠে আসা ৩৭ নম্বর পিলার এবং পরবর্তীতে উঠে আসা ৩৮ নম্বর পিলারের দ্বিতীয় পর্যায়ের লেয়ারের পিয়ার এবং বেইজে রড বাঁধার কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ঢালাই হবে এটি। এরই মধ্যে জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতুর) ১৩২টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে।
এদিকে নতুন খবর হচ্ছে মাওয়া প্রান্তে এই ভয়াডাক্টের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী পয়লা আগস্ট। সেই লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি চলছে। মূল সেতুর কাজের আরও অগ্রগতি হচ্ছেÑজটিলতায় থাকা সেতুর ১৪টি পিলারে ডিজাইন চূড়ান্ত অনুমোদন হতে যাচ্ছে। ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘কাউই’ এর দায়িত্ব পেয়েছে। পরীক্ষা- নিরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটিকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে। ১৩৭ হাজার ৫শ’ পাউন্ডে প্রতিষ্ঠানটি এই কাজটি নিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরে ‘কাউই’ পদ্মা সেতুর ১৪ পিলারের ডিজাইন চূড়ান্তকরণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এটি সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জের আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে।
এই লক্ষ্যে সোমবার ব্রিটিশ তিন বিশেষজ্ঞ আসছেন মাওয়ায়। তারা ১৪ পিলারের যাবতীয় টেস্ট রিপোর্ট ছাড়াও খুঁটিনাটি বিষয় এবং সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। পদ্মায় প্রচ- ¯্রােত সত্ত্বেও সেতুর কাজ চলছে। নদী শাসনের কাজও চলছে। বর্তমানে প্রকল্প এলকায় নদী ভাঙ্গনেরও কোন আশঙ্কা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: