ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে সাগরে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৫ জুলাই ২০১৭

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে সাগরে

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রূপালী ইলিশের ছড়াছড়ি এখন মাছের আড়তে। বর্ষার শুরুতেই ইলিশ; এটি বাংলার চিরচেনা চিত্র। তবে এবার ইলিশ ধরা পড়ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সাগর থেকে কোন বোটই খালি আসছে না। মৎস্য আহরণকারীদের মুখে হাসি। নেই কোন মলিন ভাব। মাছ ব্যবসায়ীরাও বেশ সন্তুষ্ট। অনেকদিন পর এত ইলিশ ধরা পড়ছে। দাম শুরুতে বেশি হলেও ধীরে ধীরে ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে চলে আসবে বলে মনে করছেন তারা। মওসুমে এত ইলিশ ধরা পড়ার মধ্যেই যেন যৌক্তিকতা বাংলাদেশের জাতীয় মাছের নাম ‘ইলিশ’। চট্টগ্রামের মাছের আড়তে এখন যত মাছ আসছে তার বেশিরভাগই ইলিশ। আগামী অন্তত দু’মাস বাজারে অনেকটা ইলিশ উৎসবের আমেজ থাকবে, এমনই আলামত এখন থেকে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ ডিম ছাড়ার মওসুমে ইলিশ ধরার ওপর সরকারী নিষেধাজ্ঞার সুফল মিলছে মওসুমের শুরুতে। ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় প্রজনন বেড়েছে। গভীর সমুদ্রে ফেলা জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, যার প্রভাব মাছের বাজারে পড়তে শুরু করেছে। মৎস্য আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের বৃহত্তর চট্টগ্রাম উপকূলীয় জলসীমায় নিয়মিত মাছ শিকারে ব্যস্ত অন্তত ৫শ’ ফিশিং ট্রলার ও বোট। এ বোটগুলোতে এখন আগের মতো মাছের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। প্রতিদিনই মাছ নিয়ে ভিড়ছে অন্তত অর্ধশত বোট। প্রতিটিতেই রয়েছে ইলিশ। সূত্র জানায়, কোন কোন বোটে ১শ’ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত ইলিশ আসছে। যে বোটগুলোতে কম সেখানেও রয়েছে ২০ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত। চট্টগ্রাম নগরীর ঘাটগুলোতে প্রতিদিনই নামছে প্রচুরসংখ্যক ইলিশ। সে কারণে মৎস্য আহরণকারী, মৎস্যজীবী এবং ব্যবসায়ীদেরও মুখে হাসি। মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহবায়ক মোঃ আমিনুল হক বাবুল সরকার জানান, এবার ইলিশের লক্ষণ বেশ ভাল। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ ধরা পড়ছে তা সন্তোষজনক। সাগরে যাওয়া কোন বোটকেই খালি আসতে হচ্ছে না। তিনি জানান, ইলিশের সাইজও বেশ ভাল। অধিকাংশ ইলিশের ওজন ৬শ’ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত। এর বেশি ওজনের ইলিশও রয়েছে। দাম সম্পর্কে তিনি জানান, প্রতিকেজি দাম পড়ছে সাইজ অনুযায়ী ৬শ’ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। ছোট ইলিশের দাম আরও কম। মৎস্যজীবীরা জানান, মাসখানেক আগেও যে ইলিশ ধরা পড়েছিল তা ছিল অনেক ছোট। এখনকার ইলিশ তুলনামূলকভাবে বড়। আরও বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়বে। বর্ষার শুরু থেকে ইলিশ মওসুম ধরা হয়ে থাকে। আগামী ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত সাগরে ইলিশ থাকবে। এখন ফিশিং বোট বা ট্রলার নিয়ে সাগরে বের হওয়ার সময় আশা থাকে যে, ইলিশই ধরা পড়বে। আহরণকারীরাও হতাশ হচ্ছেন না। এদিকে, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বাজারে দাম এখনও নি¤œবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। বিশেষ করে মাঝারি সাইজ থেকে বড় ইলিশের দাম চড়া। ১ কেজির চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ ৮শ’ থেকে হাজার টাকা এমনকি আরও বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত বিত্তবানরা যে সকল বাজারে কেনাকাটা করে থাকেন সেখানে মাছের দাম বেশি। তবে ছোট বাজারগুলোতে মাছের দামও তুলনামূলকভাবে কম। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, শুরুতে দাম বেশি হলেও তা ধীরে ধীরে নাগালের মধ্যে চলে আসার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, এবার যে আলামত দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় ভরা মওসুমে ইলিশের ছড়াছড়ি হবে। রূপালী ইলিশে ভরে যাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজার। ইলিশের গুণগত মানও এবার ভাল বলে জানান আড়ৎদার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে তা সাইজে যেমন পছন্দনীয় তেমনিভাবে দেখতেও বেশ হৃষ্টপুষ্ট। এবার সকলে শ্রণীর মানুষ কমবেশি ইলিশ ক্রয়ে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ মাছের পাইকারি ব্যবসায়ীদের।
×