ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল চট্টগ্রামে ॥ রোগ নির্ণয়ে নমুনা সংগ্রহ

অপুষ্টির শিকার অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুরা, হাসপাতালে ভর্তি ৫৮

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৪ জুলাই ২০১৭

অপুষ্টির শিকার অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুরা, হাসপাতালে ভর্তি ৫৮

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস/সীতাকু- প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রামের সীতাকু-ের ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগে মৃত্যুবরণকারী শিশুরা ছিল মারাত্মক অপুষ্টিজনিত সংক্রমণের শিকার। রোগটি এখনও নির্ণয় করা না গেলেও চিকিৎসাধীন শিশুদের প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকগণ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তবে উন্নত ল্যাবে পরীক্ষার পর জানা যাবে সংক্রমণের কারণ এবং রোগটির বিস্তারিত। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সীতাকু- আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বারো আউলিয়া এলাকার দুর্গম পাহাড়ে ত্রিপুরাপল্লী পরিদর্শন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক সরকারের পক্ষ থেকে মৃত ৯ শিশুর প্রত্যেক পরিবারকে দশ হাজার টাকা করে এবং সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা চট্টগ্রামেই সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া জটিল কিছু পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আইইডিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার পর নির্ণীত হবে শিশুরা কোন রোগে আক্রান্ত। তবে হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতি ঘটছে আক্রান্ত শিশুদের। চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার বারো আউলিয়া এলাকার পাহাড়ের ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ৯ শিশু। বৃহস্পতিবার আরও ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৫৮ জন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তোলে এলাকাবাসী, চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। বৃহস্পতিবার তারা সীতাকু-ের সেই ত্রিপুরাপাড়া পরিদর্শন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এমএ ফয়েজ সকালে ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থিত বিআইটিআইডি সংযুক্ত বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং এ বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রোগটি চূড়ান্তভাবে এখনও নির্ণয় করা যায়নি। তবে তারা গুরুতর অপুষ্টিজনিত সংক্রমণের শিকার। স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আক্রান্ত সবাই শিশু। ১৬ বছরের বেশি বয়সের রোগী দুজন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এবং নিজে দেখে যা বুঝেছেন সে বিষয়ে ডাঃ ফয়েজ জানান, শিশুদের বেশিরভাগই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তাদের রক্তশূন্যতা রয়েছে। চামড়ায় দানা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু রোগীর লিভারও বড়। কয়েক রোগীর ব্রেনের পর্দা সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিস রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে পরিবারগুলো পুষ্টিহীনতার মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া পাহাড়ে বসবাস করার কারণে তাদের মধ্যে আরও রোগ সংক্রমণের কারণ থাকতে পারে। রক্ত, লালা, প্রস্রাব, নাকে পানিসহ সংগৃহীত প্রয়োজনীয় সব নমুনা ঢাকার আইইডিসিআরে পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে, ঢাকার আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ ফারুক আহমদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামে আসে। তিনি প্রথমে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের দেখতে যান। রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, আপাতত অপুষ্টিকেই রোগ সংক্রমণের প্রধান কারণ হিসেবে ধরে নিচ্ছি। কারণ সেখানে যারা বসবাস করেন তারা সবাই অত্যন্ত দরিদ্র। তারা পাহাড়ে ভাসমান পরিবার, অর্থনৈতিক অবস্থাও খুবই খারাপ। তাদের লেখাপড়া এবং সচেতনতা কম। জন্মের পর থেকে শিশুদের যে টিকাগুলো দেয়া হয়, ওই টিকাগুলো তারা পায়নি। টিকা না দেয়ার কারণে যে রোগগুলো হয়, সে রোগগুলোর সৃষ্টি হচ্ছে। তবে তারা কোন্ ধরনের ভাইরাস বা জীবাণু বহন করছে তা পরীক্ষা করে জানা যাবে। এজন্য নমুনা সংগ্রহ করে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো স্থানীয়ভাবে এবং বাকি পরীক্ষাগুলো ঢাকায় করা হবে। দু’-একদিনের মধ্যে পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
×