ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

চীন ও তাইওয়ান অন্য কৌশলের যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ১২ জুলাই ২০১৭

চীন ও তাইওয়ান অন্য কৌশলের যুদ্ধ

চীন একটাই এবং তাইওয়ান তারই একটি প্রদেশমাত্রÑ দীর্ঘদিন ধরে এই হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সরকারী অবস্থান। এ থেকে এই দাঁড়ায় যে কোন দেশের চীন ও তাইওয়ান উভয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকতে পারবে না। আর যেসব দেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের এই ভূমিকা বদলাতে হবে এবং চীনকেই স্বীকার করে দিতে হবে। চীনের এই কূটনৈতিক যুদ্ধ কৌশলটা ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, সে সময় মা ইং-জিওউ ছিলেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট। কেননা তিনি অস্পষ্টভাবে এ ধারণাটি পোষণ করেছিলেন যে দুইপক্ষ শেষ পর্যন্ত এক হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার উত্তরসূরি সাই-ইং-ওয়েন সে ধরনের কোন বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার ফলে চীন ওই কূটনৈতিক যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়েছে। এরই পরিণতিতে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পানামার ওপর চীনের তরফ থেকে প্রবল কূটনৈতিক চাপ এসেছে এবং শেষ পর্যন্ত পানামা তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্কে ছিন্ন করেছে। গত ডিসেম্বর মাসে ক্ষুদে আফ্রিকান রাষ্ট্র সাও টোম ও প্রিন্সিপ তাইওয়ানের পক্ষ ত্যাগ করে চীনের পক্ষে চলে আসে। গত মে মাসে চীনা প্রতিনিধিরা অস্ট্রেলিয়ায় হিরকসংক্রান্ত এক বৈঠক থেকে তাইওয়ান প্রতিনিধিদের বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেন। এ বছরের প্রথমদিকে তাইওয়ান জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সভায় যোগদানের আমন্ত্রণ আদায়ে ব্যর্থ হয়। আট বছরের মধ্যে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল। মাত্র ১৯টি দেশ ও ভ্যাটিকেন এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে স্বীকার করে। দেশগুলোর বেশিরভাগই লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের। তাইওয়ানিরা এ ভেবে উদ্বিগ্ন যে, পানামার ভূমিকা পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের আরও দেশ একই পদক্ষেপ নিতে প্রণোদিত হবে। চীন সরকার জানিয়ে দিয়েছে যে এক চীন নীতির ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী একটা ঐকমত্য আছে এবং মিজ সাইসের এই বিষয়টি খেয়ালে রাখা উচিত। কিন্তু চীনের এই কূটনৈতিক অভিযান তাইওয়ানে কাক্সিক্ষত প্রভাব না-ও ফেলতে পারে। মি: মকা ইং-জিওউ’র দল কুওমিনটং এর অবস্থা দুর্বল। অন্যদিকে মিজ সাইয়ের ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির অনেকেই মনে করে যে তিনি চীনের প্রতি বড় বেশি নমনীয়তা দেখাচ্ছেন। তার বরং উচিত তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা। তারা বলে চীন যে কূটনৈতিক যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়েছে সেটাই দেশটির দুরভিসন্ধির প্রমাণ। সাই অভিযোগ করেন চীন স্ট্যাটাস কো নস্যাৎ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তাইওয়ান হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে না। আমাদের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করা এবং কেড়ে নেয়া যাবে না।’ তারপরও মিজ সাই সংঘাতের পথে যেতে চান না। সে যুদ্ধ পরাজয় অবধারিত চীনের সঙ্গে তেমন এক যুদ্ধে তাইওয়ানকে ঠেলে দেয়ার পরিবর্তে তার সরকার জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী বেসরকারী সম্পর্ক গড়ে তোলার পথ খুঁজছে। সূত্র : দি ইকনোমিস্ট
×