ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্তের শিকার মুক্তিযোদ্ধা চিশতি

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১১ জুলাই ২০১৭

স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্তের শিকার মুক্তিযোদ্ধা চিশতি

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতি ওরফে বাবুল চিশতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী এই চক্রটি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা নিষ্পত্তির পরও এর উদাহরণ দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাকে দেশবাসীর সামনে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এসব করছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। চিহ্নিত অপপ্রচারকারী স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের মূল হোতাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান হয়। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ময়মনসিংহ জেলা ইউনিট ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড রবিবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নাকি ভুয়া এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মহলটি অপপ্রচার চালাচ্ছে। কেবল তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতি তাঁর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা মাহামুদুল হক চিশতির নামে ইস্যু করা সাময়িক সনদ জাল করে নিজ নামে ব্যবহার করছেন বলেও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, জামালপুরের বকশিগঞ্জ থানার দত্তের বাজার গ্রামের মেজাউল হক চিশতির ছেলে মাহবুবুল হক চিশতি ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, ভারতীয় তালিকার ১৬৬২৩ নম্বর ক্রমিকে তাঁর নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২৩ মে, ২০০৫ সালে প্রকাশিত চূড়ান্ত গেজেটে ২০৯০ নম্বর ক্রমিকে মাহবুবুল হক চিশতির নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর সাময়িক সনদপত্র নম্বর ম-১৩২৭৪৫, তারিখ ৩১/৮/২০০৯। অপরদিকে তাঁর বড় ভাই মাহামুদুল হক চিশতির নাম মুক্তি বার্তার (লাল বই) ক্রমিক নম্বর ০১১৩০৭০৩১৪, সাময়িক সনদপত্র নম্বর ম-১৯৫৪৮৬, তারিখ ০৩/১১/২০১৪ লিপিবদ্ধ রয়েছে। কাজেই মাহবুবুল হক চিশতি তাঁর বড় ভাইয়ের জাল সনদ ব্যবহার করছেন এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা প্রশ্নটি বিভ্রান্তিকর। এছাড়া হামিদুল হক একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বাবা মুখলেছুর রহমান হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মাহবুবুল হক চিশতির নামে যে মামলা করেছিলেন পরে সেটি প্রত্যাহার করে নেন বলে জানান সংবাদ সম্মেলনে। পাক বাহিনীর হাতে এই হত্যাকা- ঘটেছিল জানতে পেরে ২০০৯ সালে হামিদুল হক মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। এই মামলার সাক্ষী মুখলেছুর রহমানের মেয়ে শামীমা আইরিনসহ জাহাঙ্গীর আলম, মুনসুর রহমান, সোনা মিয়া, চান মিয়া, মিজানুর রহমান নোটারি পাবলিকের কাছে হলফনামা দেন এবং সাক্ষী আব্দুল ওয়াদুদ জামালপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে মাহবুবুল হক চিশতি জড়িত নয় বলে উল্লেখ করেন। তারপরও নিষ্পত্তি এই মামলার উদাহরণ দিয়ে দেশবাসীর সামনে মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধকালে মাহবুবুল হক চিশতি ধানুয়া কামালপুরের বিডিআর ক্যাম্প চারদিন দখল করে রাখেন। এই ঘটনায় মাহবুবুল হক চিশতিকে এক পর্যায়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে ঢাকায় নিয়ে এক বিচারে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান বাবুল চিশতিকে মৃত্যুদ- দ-িত করেন। পরে অবশ্য জেনারেল দস্তগীরের মধ্যস্থতায় ব্রিগেডিয়ার এনামুল হক চিশতিকে মুক্তি দেন। মাহবুবুল হক চিশতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকায় শহীদ কর্নেল আবু তাহের স্মৃতিসৌধ, বকশিগঞ্জ বধ্যভূমি, ধোবাউড়া বধ্যভূমি, ধানুয়া কামালপুরে শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন মিনি স্টেডিয়াম ও ক্লাব, ধানুয়া কামালপুরে শহীদ ৯ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুক্তিযোদ্ধা মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন স্মৃতিসৌধ, ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু ও রফিক উদ্দিন ভুইয়ার ম্যুরাল স্থাপন ও ময়মনসিংহ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে ২ কোটি টাকার অনুদানের প্রতিশ্রুতিসহ মুক্তিযোদ্ধার ৩৫০ সন্তানের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় স্বাধীনতাবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
×