ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকদের বিরামহীন ব্যস্ততা চমকে ওঠার মতো!

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ৮ জুলাই ২০১৭

শ্রমিকদের বিরামহীন ব্যস্ততা চমকে ওঠার মতো!

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ শুধু তীরে নয় এখন পদ্মায়ও মহাযজ্ঞ। পদ্মায় ভারি ভারি যন্ত্রপাতি আর শ্রমিকদের বিরামহীন ব্যস্ততা চমকে যাওয়ার মতো। প্রায় ৪শ’ ভারি যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে- পদ্মা সেতুর কাজে। এর মধ্যে বিশ্বের অত্যাধুনিক এবং ব্যতিক্রম যন্ত্রপাতিও রয়েছে। তীরের ব্যস্ততাও আগের চেয়ে বেশি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় যাচ্ছে এখন। তাই মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তে বিশেষ ব্যস্ততা। ঢাকা থেকে থেকে যাওয়ার পথে পরিবর্তন চোখে পড়বে কয়েক কিলোমিটার আগে থেকেই। এর ওপর এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণের কাজ। ঢাকার পোস্তগোলার কাছে তেঘরিয়া থেকে পদ্মা সেতুর এ্যাপোচ পর্যন্ত চলছে রাস্তা প্রশস্তকরণ। সব মিলে বড় ধরনের কর্মব্যস্ততা এখানে। আর মাওয়া পৌঁছালে চেনা-জানা সেই দৃশ্য এখন আর কেউ খুঁজে পাবেন না। চলছে বাঙালীর স্বপ্নের অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ। এপারে মাওয়া আর ওপারে জাজিরা-শিবচরে চলছে তারই বিপুল কর্মযজ্ঞ। সব ঠিক থাকলে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর ওপর দিয়ে ২০১৮ সালে পদ্মা পার হবে গাড়ি। ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলা। সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনও চলবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে সাতটি ভাগে। মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে আছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কো¤পানি লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ৪৮ মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা। সেই হিসেবে মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের মে মাসে। নদীশাসনের জন্য চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। এই প্রকল্পটিও ৪৮ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এ গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজই এখন চলছে পুরোদমে। বর্তমান টার্গেট থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এখন কাজ এগিয়ে চলছে। নদীর তলদেশে মাটির গঠনগত বৈচিত্র্যের কারণে পদ্মা সেতুর পিলারের দৈর্ঘ্য কত হবে, তা নির্ধারণ নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতা। ফলে মাওয়া প্রান্তে পুরোদমে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে প্রকল্প পরিচালক সফিকুর রহমান বলছেন, সম্প্রতি দেশী-বিদেশী পরামর্শকরা এ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন। শীঘ্রই নদীর দুই প্রান্তে একসঙ্গে পুরোদমে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। এছাড়া বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাস¤পন্ন একটি হ্যামার যোগ হওয়ায় কাজে গতি বাড়ছে। সেতুর অন্য প্রকল্পগুলোর কাজ যখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রায় শেষদিকে, যেখানে নদীর স্রোত এবং তলদেশের মাটির স্তরের গঠনসহ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে মূল সেতুর পাইলিংয়ের কাজ। সেতুটিতে পিলার থাকবে ৪২টি। এক একটি পিলারের প্রাথমিক দৈর্ঘ্য ধরা হয় প্রায় ১২০ মিটার। তবে শুরু থেকেই নদীর মাওয়া প্রান্তে মাটির তলদেশের গঠন বৈচিত্র্যের কারণে দৈর্ঘ্য নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এ প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের কাজ ধরা হলেও পরে তা অর্ধসমাপ্ত রেখেই কাজ সরিয়ে নেয়া হয় জাজিরা প্রান্তে। এখানে ৩৬ থেকে ৪২ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ চলছে পুরোদমে। মাওয়া প্রান্তে ১ নম্বর এবং ৬ থেকে ১২ নম্বর পিলারের দৈর্ঘ্য কত হবে তা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে অন্য পিলারগুলোতে কাজ ধরা হলেও বন্ধ আছে এ কয়টি পিলারের কাজ। তবে সম্প্রতি সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানালেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। এদিকে পদ্মা সেতুর বাকি ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন চ্যালেঞ্জটি সফলতার কারণেই বিদেশী বিশেষঞ্জ দল আসছেন ১৭ জুলাই। ইংল্যান্ডের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘কাউই’ এ চূড়ান্ত ডিজাইনের কাজটি করছে। ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির ব্রিটিশ বেশ কজন প্রকৌশলী এ নিয়ে প্রকল্প এলাকায় এসেছেন। সয়েল টেস্টের রিপোর্টাসহ তথ্যাদি নিয়ে কাজটি সফলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। তাই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বিশেষজ্ঞরা আসছে প্রকল্প এলাকায়। এখন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৫২ শতভাগ কাজ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়েছে প্রায় ৪৪ ভাগ। এদিকে চীন থেকে আসা ৮টি স্প্যানের মধ্যে ৫টি ফিটিং সম্পন্ন হয়ে গেছে। একটির স্প্যানের রং করা শুরু হয়েছে। ফিটিং হওয়া বাকি স্প্যানেরও রং করা হবে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। আজ শনিবার পদ্মা সেতুর মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সভায় সেতুর অগ্রগতিসহ নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ঈদের ছুটির পর গত শনিবার থেকেই স্থানীয় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। তবে শুক্রবার পর্যন্ত সব শ্রমিক এসে পৌঁছায়নি। তবে ২-১ দিনের মধ্যেই সব শ্রমিকরা যোগ দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে ঈদের ছুটিতে সেতুর কর্মযজ্ঞ ছিল চলমান। তবে সব শ্রমিক যোগদানের পর কাজের গতি আরও বাড়বে। আর বাকি ১৪ পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত হলেও মূল সেতুর নির্মাণে আরও গতি বাড়বে মনে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×