ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব রাজনীতিতে বাঙালী নারী

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৭ জুলাই ২০১৭

বিশ্ব রাজনীতিতে বাঙালী নারী

রাজনীতিতে নারীর সম্পৃক্তায়ন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম ধাপ। বিশ্ব রাজনীতিতে নারীদের অবস্থান আজ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এটি একদিকে যেমন নারী জাতির অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ, তেমনি নারীর ক্ষমতায়নের বিশেষ দিক। পৃথিবীর পরিবর্তনে তথা উন্নয়নের ধারায় আজ নারীদের অবস্থান সর্বস্তরে। রাজনীতিতে তাদের প্রবেশাধিকার নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটি গোড়াঘেঁষে বলতে গেলে যুগ যুগ ধরেই নারীদের নিজ প্রতিভাবলে বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটে আসছে এবং এর ইতিবাচক দিক হলো এটি ক্রমবর্ধমান। সেই ক্লিওপেট্টা থেকে শুরু করে রাণী প্রথম এলিজাবেথ, মার্গারেট থেচার, রাণী ভিক্টোরিয়া, শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে, ইন্দিরা গান্ধীর মতো নারী নেতৃত্ব যেমন ছিলেন তেমনি বর্তমানকালের নারী নেত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় রয়েছেন গোল্ড মেয়ার (ইসরাইল) দিলমা রাউসেফ (ব্রাজিল), ডিলমা রাউসেফ (ব্রাজিল), জোহানা শিগুডারডুটির (আয়ারল্যান্ড), ইংলুক শিনাত্রা (থাইল্যান্ড), সোনিয়া গান্ধী (ভারত), এঙ্গেলা মার্কেল (ফ্রান্স), হিলারি ক্লিনটন (আমেরিকা), ইসাবেল মার্টিনেজ ডি পেরন (আর্জেন্টিনা), পার্ক গুয়েন হাই (দক্ষিণ কোরিয়া), বেনজির ভুট্টো (পাকিস্তান), চন্দ্রিকা কুমারা তুঙ্গা (শ্রীলঙ্কা), শেখ হাসিনার মতো বিশ্ব নারী নেত্রীরা জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের তথা বিশ্ব উন্নয়নে নারীর যোগ্যতাকে দৃশ্যমান করছেন। ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবারের সাধারণ নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ নারী সদস্য এমপি পদে জয়লাভ করেছেন। লেবার পার্টির হয়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক এবং রূপা হকসহ ২০১টি আসনে নারীরা জয়ী হয়েছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এই বিজয়ীর সংখ্যা ছিল ১৯১। এছাড়া এই নির্বাচনে ব্রিটেন প্রথমবারের মতো কোন শিখ নারী এমপির জয় উদযাপন করছে। কেননা এবার লেবার পার্টির হয়ে প্রথমবারের মতো শিখ নারী প্রীত কাউর গিল বার্মিংহাম এজবাস্টন আসনে জয়লাভ করেন। ব্রিটেনের নির্বাচনের তৈরি এই ইতিহাস ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলেছে। প্রথমবারের মতো শিখ নারীসহ রেকর্ড সংখ্যক নারী এমপির জয়ে অনেকেই টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ১৯১৮ সালে কনস্টান্স মার্কিয়েভিস প্রথমবারের মতো হাউস অব কমন্সে প্রথম নারী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি নর্দান আয়ারল্যান্ডের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সিন ফেইনে সদস্য হওয়ায় দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে ন্যান্সি অ্যাসটোন প্রথম নারী এমপি হিসেবে আসন গ্রহণ করেন। ২০১০ এর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন রুশনারা. ২০১৫ এর নির্বাচনে আরও দুজন উৎসাহী হয়ে প্রার্থী হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে ব্রিটেনসহ অন্য দেশের রাজনীতিতে বাঙালীর অংশগ্রহণ এই তিনজন প্রেরণা হয়ে থাকবেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ব্রিটেনের এমপি নির্বাচিত হলেন রুশনারা আলি। বেথনাল গ্রিন এ্যান্ড বো আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হন। সিলেটের বিশ্বনাথে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া রুশনারা মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। ২০১০ সালে প্রথম বাঙালী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। প্রতিবাদী এবং নীতির প্রশ্নে আপোসহীন ৪০ বছর বয়সী এই পার্লামেন্টারিয়ান লেবার পার্টির হয়ে শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক শ্যাডো মিনিস্টারের দায়িত্বে ছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে ইরাকে সামরিক হামলায় সংসদে লেবার পার্টি সমর্থন দেওয়ায় রুশনারা শ্যাডো মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এছাড়া পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রীধারী রুশনারা পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের একজন সহযোগী পরিচালক। আপরাইজিং নামের একটি দাতব্য সংগঠনেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত এবং সিঙ্গাপুরে। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাম্পস্ট্যাড এ্যান্ড কিলবার্নে বসবাস করছেন। এই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রী রয়েছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে লেবার পার্টিকে ৪২ ভোটের জয় এনে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী গেন্ডা জ্যাকসন। তিনি অবসরে যাওয়ায় দলের মনোনয়ন পান তরুণ রাজনীতিবিদ টিউলিপ সিদ্দিক। রূপা হক কেমব্রিজে পড়েছেন রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন। আর কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে এতদিন পড়িয়েছেন সমাজ বিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যায়নের মতো বিষয়। এর আগে ডেপুটি মেয়র হিসেবে স্থানীয় সরকারেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। তিনি একাধারে লেখক, মিউজিক ডিজে, কলামনিস্ট হিসাবে পরিচিত। আর তার ছোট বোন কনি হক বিবিসির ব্লু পিটার শো উপস্থাপনার কল্যাণে ব্রিটিশদের কাছে খুবই পরিচিত মুখ। এর আগে ২০০৫ সালের নির্বাচনে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি রূপা। এছাড়া ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। আজ প্রতিটি দেশের জাতীয় সংসদে অনেক নারী নেতৃত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মেয়েরা রাজনীতিতে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৩০টি আসন ছাড়াও সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ২২জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছে। নারী রাজনীতিবিদদের দ্বারা উন্নয়নে সম্প্রসারণ সমগ্র নারী জাতির গর্ব এবং উদাহরণ। একবিংশ শতাব্দীতে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার প্লাটফর্ম অনেকটাই মসৃণ। এখন শুধু সদিচ্ছা ও নিজেকে সর্বস্তরে সম্প্ক্তৃ করে এগিয়ে চলাই কাম্য।
×