ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাটের টোল আদায় নিয়ে দারুস সালাম থানার সামনে বিক্ষোভ

ঢাকার লাগোয়া কাউন্দিয়া- মাঝখানে ছোট্ট তুরাগ, ভোগান্তির অন্ত নেই

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৬ জুলাই ২০১৭

ঢাকার লাগোয়া কাউন্দিয়া- মাঝখানে ছোট্ট তুরাগ, ভোগান্তির অন্ত নেই

গাফফার খান চৌধুরী ॥ মিরপুরের দিয়াবাড়ি তুরাগ নদের ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় কেন্দ্র করে কয়েক শ’ লোক ঢাকার দারুস সালাম থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন। চলতি বছর একনেকের বৈঠকে মিরপুর-কাউন্দিয়া ব্রিজের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিজের অনুমোদন দেয়ার পর থেকেই ঘাটের ইজারাদাররা ইচ্ছামতো জোরপূর্বক টোল আদায় করে আসছিলেন মানুষের কাছ থেকে। সম্প্রতি টোল আদায়ের মাত্রা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েক হাজার মানুষ মিরপুর দিয়াবাড়ি তুরাগ নদের পাড়ে এবং রাজধানীর দারুস সালাম থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক, কাউন্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান খান শান্ত, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে দুপুর একটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে মিরপুর আমিনবাজার, বড়দিয়া বাড়ি, চটবাড়ি, ছোট দিয়াবাড়িসহ আশপাশের নৌঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর দিয়াবাড়ি থেকে সাভার থানাধীন কাউন্দিয়া ইউনিয়নের মধ্যে দূরত্ব মাত্র কয়েক শ’ গজ প্রশস্ত তুরাগ নদ। নদ পার হতে নৌকায় সময় লাগে মাত্র দুই থেকে তিন মিনিট। স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান খান শান্ত জনকণ্ঠকে জানান, ইউনিয়নটির বয়স দু’শ বছরের বেশি। আয়তন ১১ দশমিক ৪৭ বর্গ মাইল। চারদিক পানি বেষ্টিত। নৌকাই একমাত্র যাতায়াতের বাহন। ঢাকা লাগোয়া হওয়ায় এবং যথেষ্ট নাগরিক সুবিধা থাকায় ইউনিয়নটির ২২ গ্রামে লক্ষাধিক লোকের বসবাস। বাড়ি ভাড়া ঢাকার তুলনায় অনেক কম। অথচ ঢাকার খুব কাছে। এজন্য এখানে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস সবচেয়ে বেশি। এখানকার অন্তত ৫০ হাজার লোক প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন। যাদের মধ্যে রিক্সাচালক, ছোটখাটো ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস কর্মীসহ ছোটখাটো কাজের সঙ্গে জড়িত লোকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের ঢাকা যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। প্রতিদিন কোন কোন ব্যক্তিকে অন্তত ১০ থেকে ১২ বারও নৌকায় করে ঢাকায় যেতে হয় কাজের তাগিদে। প্রতিদিন নৌকায় মানুষ পারপার করে অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবারের একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর থেকে কাউন্দিয়া যাতায়াতের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ৪৫ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেন। সেতু নির্মাণের আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। সেতু অনুমোদন দেয়ার পর থেকেই ঘাটের ইজারাদাররা ইচ্ছামতো টোল আদায় করছেন। এতে করে মানুষ একেবারে অতিষ্ঠ। এমনকি স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও টোল আদায় করে স্থানীয় প্রভাবশালী ইজারাদাররা। তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের সবোর্চ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যথায় ঘাটের ইজারাদারদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটে যাওয়া বিচিত্র নয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে কোনদিনই নৌকা পার হতে নৌকা ভাড়া ছাড়া আর কিছুই দিতে হতো না। বিগত বিএনপি জামায়াত-জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরণী নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে ঘাট বানিয়ে ইজারা বাণিজ্য শুরু হয়। প্রভাবশালী কিছু লোক নামকাওয়াস্তে এসব ঘাটের ইজারা নেন। তারা জনপ্রতি ঘাট পার হলেই আগে পঞ্চাশ পয়সা করে আদায় করতেন। একজন মানুষ যতবার যাতায়াত করবে ততবার পঞ্চাশ পয়সা আদায় করে আসছিল ঘাটের ইজারাদাররা। শুধু মানুষ নয়, যে কোন মাল পার হলেও তাদের টাকা দিতে হতো। আর নৌকা ভাড়া তো আলাদা। স্থানীয়দের দাবি, পরবর্তীতে ঘাটের ইজারাদাররা নৌকার মাঝিদের কাছ থেকেও টাকা আদায় শুরু করে। টাকা না দিলে ঘাটে নৌকা ভেড়াতে দেয় না। যাত্রী যেহেতু নামতে পারেন না, এজন্য নৌকার মাঝিরা বাধ্য হয়ে ঘাটের ইজারদারদের টাকা দেন। এমন পরিস্থিতিতে অতিষ্ঠ হয়ে নৌকার মাঝিরা বিভিন্ন জায়গায় ঘাট তৈরি করে লোক নামানো শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইজাদাররা ঢাকার অংশের তুরাগ নদের প্রতিটি পয়েন্টে লোক রাখে। যাতে কোন নৌকা তাদের ঘাট ছাড়া ভিড়তে না পারে। শেষ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাঝি জীবন জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে ঘাটের ইজাদারদের টাকা দিতে বাধ্য হন। ইজারাদাররা চারদিকে ১০ ঘাট নিজেদের মতো বানিয়ে নেয়। সেখানে যাত্রীদের পারাপারের কোন সুযোগ সুবিধা লক্ষ্য করা যায়নি। এরমধ্যে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চারটি ঘাটে পারাপার হতে কোন ঘাটে কোন টোল দিতে হয় না। শুধু নৌকার ভাড়া দিতে হয়। এতদিন ঘাটের ইজারাদাররা জনপ্রতি এক টাকা হারে আদায় করতেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ঘাটের ইজারার সময়সীমা একমাসের জন্য বর্ধিত করেছেন।
×