ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে পরাজিত জিম্বাবুইয়ে

অভিষেকেই হাসারাঙ্গার হ্যাটট্রিক, পাল্টা জবাব শ্রীলঙ্কার

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৩ জুলাই ২০১৭

অভিষেকেই হাসারাঙ্গার হ্যাটট্রিক, পাল্টা জবাব শ্রীলঙ্কার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই ইতিহাস গড়েছিল জিম্বাবুইয়ে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবার তিন শতাধিক রান তাড়া করে জিতেছিল ৬ উইকেটে। একই ভেন্যুতে রবিবার তাদের ওপর চরম প্রতিশোধ নিল স্নায়ুচাপে থাকা স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা, জিতল ৭ উইকেটে। আর এই জয়ের পথে স্বাগতিকদের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছেন ১৯ বছর বয়সী ভানিদু হাসারাঙ্গা। ওয়ানডে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের এটি তৃতীয় ঘটনা হলেও প্রথম লেগস্পিনার হিসেবে অভিষেকে হ্যাটট্রিকের বিরল কীর্তি গড়েছেন তিনি। অল্পের জন্য সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে পাকিস্তানের সাবেক পেসার আকিব জাভেদের গড়া রেকর্ড ছুঁতে পারেননি। আকিব ১৯ বছর ৮১ দিন বয়সে ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর শারজায় ভারতের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। হাসারাঙ্গার বয়স এদিন ছিল ১৯ বছর ৩৩৮ দিন। আরেক স্পিনার লক্ষণ সানদাকান ৪ উইকেট নিলে ৩৩.৪ ওভারে ১৫৫ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। জবাবে ৩০.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান তুলে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। ৫ ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা এসেছে। রবিবার গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে সফরকারী জিম্বাবুইয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলঙ্কা। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত অভিজ্ঞ পেসার লাসিথ মালিঙ্গাকেও একাদশে রাখে স্বাগতিকরা। নুয়ান প্রদীপকে নিয়ে শুরুতেই জিম্বাবুইয়েকে চেপে ধরেছিলেন তিনি। প্রদীপ ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো সলোমন মিরেকে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান। তবে মালিঙ্গা ৩ ওভারের বেশি বোলিং করতে পারেননি। দ্বিতীয় উইকেটে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ক্রেইগ আরভিন ৫৬ রানের জুটি গড়ে দলকে একটা ভাল অবস্থানেই নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু টানা দুই ওভারে মাসাকাদজা (৫৬ বলে ৪১; ৮ চার) ও আরভিন (২২) সাজঘরে ফিরলে বিপদ শুরু হয় জিম্বাবুইয়ের। ইনজুরির কারণে আগের ম্যাচ না খেলা সানদাকানের ঘূর্ণি তোপে বিপর্যয় ঘনীভূত হয় সফরকারীদের মাত্র ১১৯ রানে ৬৯ উইকেট খুইয়ে। কিন্তু ম্যালকম ওয়ালার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় হাসারাঙ্গার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। গত বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপেই নজর কেড়েছিলেন তিনি ব্যাটে-বলে সমান তালে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে। ২৬তম ওভারে ৮ রান দেয়ার পর তাকে আর বল দেয়া হয়নি। তবে ৩২তম ওভারে ফিরে ৩ রান দেন। তখন ধুঁকছিল জিম্বাবুইয়ে। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে এসেই ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেন হাসারাঙ্গা। ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪২তম এবং শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৮ম হ্যাটট্রিকের জন্ম দেন। তবে কোন লেগ স্পিনারের জন্য অভিষেকে এটিই প্রথম হ্যাটট্রিকের ঘটনা। গড়ে ফেললেন ইতিহাস। অভিষেকে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি আগে আছে মাত্র দু’জনের। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ২০১৪ সালে প্রথম বোলার হিসেবে অভিষেকে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে বিরল নজির গড়েছিলেন। পরের বছরই বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে চার হাঁকালেও পরের বলে আবারও উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন ওয়ালার। ২৯ বলে ৬ চারে ৩৮ রান করেছিলেন তিনি। পরের বলটি ছিল গুগলি আর এলবিডব্লিউ হলেন ডোনাল্ড টিরিপানো। চতুর্থ বলে ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁক গলে বোল্ড হন টেন্ডাই চাতারা। ১৫৫ রানের মামুলি সংগ্রহে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। চায়নাম্যান সানদাকান ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৫২ রানে নেন ৪ উইকেট। জবাব দিতে নেমে মাত্র ১০ রানেই দানুস্কা গুনাতিলকা (৮) ও কুসাল মেন্ডিসের (০) উইকেট হারিয়েছিল লঙ্কানরা। তৃতীয় উইকেটে সেই বিপদ কাটান নিরোশান ডিকওয়েলা ও উপুল থারাঙ্গা। ৬৭ রানের জুটি ভেঙ্গে যায় অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমারের বলে ৫৪ বলে ৩৫ রান করা ডিকওয়েলা সাজঘরে ফিরলে। এরপর থারাঙ্গার সঙ্গে বাকি পথটা নির্বিঘেœই পাড়ি দেন অধিনায়ক ম্যাথুস অবিচ্ছিন্ন ৮১ রানের জুটি গড়ে। থারাঙ্গা ৮৬ বলে ৮ চারে ৭৫ এবং ম্যাথুস ৩৫ বলে ৪ চারে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ১১৯ বল হাতে রেখেই জয়ের দেখা পেয়ে যায় লঙ্কানরা। ৭ উইকেটের জয়ে আনে ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা। স্কোর ॥ জিম্বাবুইয়ে ইনিংস- ১৫৫/১০; ৩৩.৪ ওভার (মাসাকাদজা ৪১, ওয়ালার ৩৮, আরভিন ২২; সানদাকান ৪/৫২, হাসারাঙ্গা ৩/১৫)। শ্রীলঙ্কা ইনিংস- ১৫৮/৩; ৩০.১ ওভার (থারাঙ্গা ৭৫*, ডিকওয়েলা ৩৫, ম্যাথুস ২৮*; চাতারা ২/৩৩)। ফল ॥ শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ লক্ষণ সানদাকান (শ্রীলঙ্কা)। সিরিজ ॥ ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।
×