ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

উপমহাদেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সবিতা চৌধুরী আর নেই

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৩০ জুন ২০১৭

উপমহাদেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সবিতা চৌধুরী আর নেই

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ ‘ও আলোর পথযাত্রী’, ‘সুরের সেই ঝর-ঝর-ঝরণা’, ‘প্রজাপতি প্রজাপতি’, ‘হলুদ গাঁদার ফুল’, ‘ঝিলমিল ঝিলমিল’ এর মতো অসংখ্য তুমুল জনপ্রিয় বাংলা গানের শিল্পী সবিতা চৌধুরী আর নেই। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে অবশেষে বুধবার রাত ২-৪৫ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭২ বছর বয়স। তার মৃত্যুতে দুই বাংলার সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জানা যায়, জানুয়ারিতে সবিতা দেবীর ফুসফুস ও থাইরয়েডে ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথমে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাই। গত মাসে তাঁকে কলকাতায় আনা হয়। তারপর থেকে তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ি বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। মৃত্যুর আগে মেয়ে সঙ্গীতশিল্পী অন্তরা চৌধুরীর কাছে ছিলেন সবিতা। অবশেষ বুধবার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি সবিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। প্রয়াত এই শিল্পীর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। সবিতা চৌধুরীরর জন্ম ১৯৪৫ সালে। বেড়ে ওঠেন সঙ্গীত আবহের মধ্যেই। তাঁর বেড়ে ওঠা এক উত্তাল সময়ের মধ্যে। বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তখন তোলপাড় চলছে। সেই উত্তাল সময়ের মধ্যেই যোগ দেন গণনাট্য আন্দোলনে। কিংবদন্তী সুরকার সলিল চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এই সময়েই তাঁর কণ্ঠে রেকর্ড হয় ‘ও আলোর পথযাত্রী’, ‘ঢেউ উঠছে’, ‘কারা টুটছে’, ‘ঝিলমিল ঝাউয়ের বনে’ ‘ঝিঁকিমিকি’র মত কালজয়ী গান। সলিল চৌধুরীর সুরে ‘মেরি হায় গো হায়’ এ্যালবামে প্রথম সঙ্গীত জগতে আত্মপ্রকাশ করেন সবিতার। শিল্পী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই পথচলা শুরু। স্বামী কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার সলিল চৌধুরীর হাত ধরে সঙ্গীতজগতে পা রাখলেও স্বামীর পরিচয়ের বাইরেও নিজের স্বতন্ত্র গায়কির গুণে কোটি কোটি মন জয় করে সঙ্গীতজগতে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করেছিলেন সবিতা। তাঁর গাওয়া ‘প্রজাপতি প্রজাপতি আমার ইচ্ছে হয়ে’, ‘বনে বনে ঘাসে ঘাসে ওড়ে আর ফেরে’, ‘লাগে দোল পাতাপাতায়’ মত জনপ্রিয় গানে একসময় মুখরিত হয়ে থাকত বাংলা সঙ্গীত জগত। সলিল চৌধুরীর সুরে তাঁর অপূর্ব কণ্ঠ মাধুর্যে গাওয়া গানগুলো দেশ, কালের গন্ডী অতিক্রম করেছে। বাংলার বাইরে বড় হয়ে ওঠা তার। তাই বাংলায় কথাবার্তা বলতে পারলেও ভাষাটা তেমন ভাবে জানতেন না। সবিতা চৌধুরীর গাওয়া কয়েকটি আধুনিক গান কয়েক দশক ধরে জনপ্রিয় ছিল। বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরেও তাঁর বেশ কয়েকটি হিট গান রয়েছে। বাংলা ছাড়াও কন্নড়া, মালয়লাম ভাষাতেও গান গেয়েছেন তিনি। তাঁর একের পর এক কালজয়ী বাংলা গান আজও বাঙালীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছে। বাংলার স্বর্ণযুগের শিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তারপরেও অনেক সঙ্গীতপ্রেমীর মতে, যে প্রতিভা ছিল, তার সম্পূর্ণ মূল্যায়ন হয় নি। সলিল চৌধুরীর আকাশ ছোঁয়া প্রতিভায় ছায়ায়ই যেন বা নিজেকে কিছুটা আড়াল করে রেখেছিলেন সারাজীবন। সেই সুরের পথ চলাই শেষ হয়ে গেল আলোর পথযাত্রীর। সবিতার সন্তান অন্তরা, সঞ্চারী, সঞ্জয় ও ববি। তারাই এখন সবিতার স্মৃতিকে আকড়ে ধরে থাকবেন।
×