ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বার্মিংহাম ওপেনের শেষ আটে কেভিতোভা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৩ জুন ২০১৭

বার্মিংহাম ওপেনের শেষ আটে কেভিতোভা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আততায়ীর হাতে ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার পর অনেকদিন লেগেছে সুস্থ হয়ে আবারও টেনিস কোর্টে ফিরতে। অনেকেই ভেবেছিলেন প্রত্যাবর্তনটা হয়তো সুখকর হবে না চেক টেনিসকন্যা পেত্রা কেভিতোভার বেলায়। কিন্তু তাদের এই ধারণাকে ভুল প্রতিপন্ন করে দুর্দান্তভাবেই বার্মিংহাম ওপেন খেলে যাচ্ছেন পেত্রা। এ আসরের সপ্তম বাছাই প্রথম রাউন্ডের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডেও কুড়িয়ে নিয়েছেন জয় এবং সেটা বেশ অনায়াসেই। অবাছাই গ্রেট ব্রিটেনের নাওমি ব্রডিকে হারান ৬-২, ৬-২ সেটে। এ জয়ে শেষ আটেÑ অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেলেন দু’বারের উইম্বল্ডন চ্যাম্পিয়ন কেভিতোভা। খেলায় দর্শক সমর্থন বেশি ছিল নাওমির দিকেই। কারণটা সহজেই অনুমেয়Ñ নাওমি হচ্ছেন লোকাল গার্ল। তবে ম্যাচ জয়ের পর কেভিতোভাকে ঠিকই হাততালি দিয়ে অভিনন্দিত করেছে দর্শকরা। ‘আমি সারাক্ষণ খেলার মধ্যেই ডুবে ছিলাম। দর্শকরা আমাকে হাততালি দিল কি দিল না সেসব মোটেও আমার কানে ঢোকেনি। আমি টেনিস খেলতে ভালবাসি এবং সেটা ঘাসের কোর্টেই সবচেয়ে বেশি।’ খেলা শেষে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কেভিতোভা। শেষ আটের দ্বৈরথে কেভিতোভার প্রতিপক্ষ পঞ্চম বাছাই ফ্রান্সের ক্রিস্টিনা ম্লাডেনোভিচ। এছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে চেক প্রজাতন্ত্রের লুসি সাফারোভা ৬-২, ৬-৪ সেটে জাপানের নাওমি ওসাকাকে, নবম বাছাই অস্ট্রেলিয়ার ডারিয়া গাভ্রিলোভা ৭-৫, ২-৬, ৬-৪ সেটে চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যাটরিনা সিনিয়াকোভাকে এবং অস্ট্রেলিয়ার এ্যাশলে বার্টি ৬-৩, ৩-৬, ৬-১ সেটে চেক প্রজাতন্ত্রের বারবোরা স্ট্রাইকোভাকে হারিয়ে কোয়ার্টারে নাম লেখান। ২০১১ সালটা ছিল কেভিতোভার জন্য স্বপ্নের মতো, সোনায় সোহাগা। ৭টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলে শিরোপা জেতেন ৬টিতেই। একমাত্র ড্যানিশ টেনিসকন্যা ক্যারোলিন ওজনিয়াকিই জেতেন সমসংখ্যক ট্রফি। কিন্তু কেভিতোভার কৃতিত্বÑ ওজনিয়াকির শিরোপাগুলোর মধ্যে কোন গ্র্যান্ডসø্যাম ট্রফি নেই, যেটি ছিল কেভিতোভার। লন্ডনে অনুষ্ঠিত উইম্বল্ডন ওপেনের ফাইনালে রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভাকে হারিয়ে ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম গ্র্যান্ডসø্যাম শিরোপা করায়ত্ত করেছিলেন তিনি। তাছাড়া বছরটা তিনি শুরু করেছিলেন ৩৪ নম্বর র‌্যাঙ্ক নিয়ে, আর বছরের শেষদিকে সেটার অভাবনীয় উন্নতি ঘটে। তার র‌্যাঙ্ক দাঁড়ায় ২-এ। এখনও পর্যন্ত ওটাই হয়ে আছে তার ক্যারিয়ার সেরা র‌্যাঙ্কিং (বর্তমান র‌্যাঙ্কিং ১৬)। ২০১২তে কেভিতোভার নৈপুণ্যে লাগে ভাটার টান। মাত্র ২টি আসরের শিরোপা জেতেন। এ পর্যন্ত ২৬ ট্রফি বগলদাবা করতে পেরেছেন ২৭ বছর বয়সী চেককন্যা প্রেত্রা। এর মধ্যে ১৯টি ডব্লিউটিএ, ৭টি আইটিএফ। ভাল খেলোয়াড় তিনিই যিনি মাঝে মধ্যে ভাল না খেলে সবসময়ই ভাল খেলেন এবং বেশিরভাগ সময়ই জয়লাভের মাধ্যমে কুড়িয়ে নেন সাফল্য। ইতিহাসে আছে অনেক খেলোয়াড়ই ছিলেন যারা হঠাৎ করেই উদ্ভাসিত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি মোটেও। একসময় ফর্ম হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছেন দৃশ্যপটের অন্তরালে। কিন্তু পেত্রা কেভিতোভা নামের এক চেক সুন্দরী তাদের কাতারে নাম লেখাতে আসেননি। স্বীয় নৈপুণ্যে সমুজ্জ্বল হয়ে তিনি হতে এসেছেন এক প্রমীলা টেনিস কিংবদন্তি। শিক্ষক বাবা জিরি কেভিতোভা আর মা পাভিয়া কেভিতোভার অনুপ্রেরণায় কেভিতোভার টেনিসে হাতেখড়ি হয় ৭ বছর বয়সে। পেত্রার জন্মস্থান বিলোভেচ (সাবেক চেকোসেøাভাকিয়া)। বর্তমান নিবাস মোনাকোর মন্টে কার্লোতে। ৬ ফুট ও ৭০ কেজির অধিকারী পেত্রার পেশাদার টেনিসে প্রবেশ ২০০৬ সালে। বাঁহাতি (দু’হাতে ব্যাকহ্যান্ড) কেভিতোভা টেনিস খেলে আয় করেছেন ২ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার ৪৭২ ডলার, যা মহিলা টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে দশম সর্বোচ্চ। জিতেছেন ৪২৬ ও হার মেনেছেন ১৯১ ম্যাচে। ক্যারিয়ারে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ম্যাটেজ লিপটার ও ডেভিড কোটিজার কাছে। বর্তমান কোচ জিরি ভানেক। কেভিতোভা টেনিসে অনুপ্রেরণা খুঁজে পান টমাস বারদিচ ও লুসি সাফারোভার খেলা থেকে। আর আদর্শ হচ্ছেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। এখন দেখার বিষয় বার্মিংহাম ওপেনের শিরোপা ধরে রাখতে পারেন কি না তিনি।
×