ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বিশ্বসঙ্গীত দিবসে যতীন সরকারের প্রবন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২২ জুন ২০১৭

বিশ্বসঙ্গীত দিবসে যতীন সরকারের প্রবন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িক শব্দটি যে সর্বদা খারাপ বা নিন্দনীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়, তা অবশ্যই নয়। শব্দটির গঠনের দিকে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায় যে, যা কিছু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সম্প্রদায় সম্পর্কীয় তা সবই সাম্প্রদায়িক (সম্প্রদায়+ঞিক)। কাজেই বুৎপত্তিগত অর্থে শব্দটি মোটেই নিন্দার্থক নয়। যদি বলি: দুর্গাপূজা, ঈদ, বড়দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা; এসব সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান। তাহলে কি এগুলোকে নিন্দা করা হলো? হিন্দু, মুসলমান, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ এসব ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ অনুষ্ঠানগুলো তাদের নিজেদের ধর্মের অনুশাসন রূপেই পালন করে থাকে। তাই এগুলো সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান। এতে নিন্দার কিছু নেই। কিন্তু অনুষ্ঠানগুলো যদি এ রকম হয়ে দাঁড়ায় যেÑহিন্দুরা দুর্গাপূজার পর বিসর্জন দেয়ার জন্য দুর্গা মূর্তি নিয়ে যাবে মুসলমানদের মসজিদের সামনে দিয়ে ঢাক-ঢোল বাজাতে বাজাতে, কিংবা মুসলমান ঈদে গরু কোরবানি দেবে হিন্দু মন্দিরের সামনে কিংবা খ্রীস্টান ও বৌদ্ধরাও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বড়দিন বা বৌদ্ধপূর্ণিমা পালন করবে-তাহলে অনুষ্ঠানগুলো নিন্দার্থেই হয়ে উঠবে ‘সাম্প্রদায়িক’। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে যতীন সরকারের ‘সাম্প্রদায়িকতার ভূত ও বাঙালীর সংস্কৃতি’ শীর্ষক প্রবন্ধের শুরুটা এমনই। ‘সঙ্গীতই পারে সকল অশুভ শক্তিকে রুখে দিতে’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ বুধবার বিকেলে এক সেমিনারের আয়োজন করে। শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয় অধ্যাপক যতীন সরকারের প্রবন্ধ ‘সাম্প্রদায়িকতার ভূত ও বাঙালীর সংস্কৃতি’। তার অনুপস্থিতিতে যা পাঠ করেন রুপা চক্রবর্তী। এতে যতীন সরকার বলেন, যেকোন মানুষকে যে কোন ধর্মতন্ত্রের দর্শনের ওপর বিশ^াস স্থাপনের ও সে রকম বিশ^াসভিত্তিক আচার-অনুষ্ঠান পালনের অধিকার দিতে হবে। যাদের কোন বিশেষ ধর্মতন্ত্রে বা আচার-অনুষ্ঠানে বিশ^াস নেই, তাদেরও আপন পছন্দ মতো জীবনযাপনের অধিকারকে অস্বীকার করলে চলবে না। একেই বলে বিবেকের স্বাধীনতা। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য এই বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করতেই হবে। পরিষদের সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার। আলোচনায় অংশ নেন কবি ও সংগঠক ইস্তেকবাল হোসেন, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ রায় প্রমুখ। সেমিনারে উপস্থিত সংগঠক ও শিল্পীদের ইউটিউব ও ওয়েলকাম টিউনের সম্মানী প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা করেন। আয়োজকরা জানান রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, বরিশাল, সুনামগঞ্জসহ ১২টি শহরে দিনটি উদযাপিত হয়েছে। গান কবিতা আর স্মৃতিকথায় সুফিয়া কামাল ও জাহানারা ইমাম স্মরণ গান কবিতা আর কথামালায় কবি সুফিয়া কামাল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। দুই মহীয়সীর জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন মিলনায়তনে বুধবার সকালে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় প্রেরণাদানকারী দুই মহিয়সীকে স্মরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী। সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বেগম রোকেয়ার পর কবি সুফিয়া কামাল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ছাড়া আর কাউকে সমাজ পরিবর্তনে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে দেখিনি আমরা। সমগ্র বাংলায় তাদের মতো সাহসী নারী আর কাউকে দেখিনি। সুফিয়া কামাল ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। তবে তিনি ধর্মপ্রাণ ছিলেন। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন না। সব মানুষকে সমানভাবে ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন সাহসী কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ী। তার মধ্যে সাহসের উগ্রতা একেবারেই ছিল না। তিনি মানবিকতাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। মানুষের মনের বিশ্বাসকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন। চল্লিশের দশকের প্রেক্ষাপটে জাহানারা ইমামকে ‘আধুনিক মহিলা’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন নারীরা পর্দা করতেন, স্কুলগামী মেয়েরা পর্দায়ঢাকা ঘোড়ার গাড়িতে স্কুলে যেত। সে সময়ে জাহানারা ইমাম ববকাট করেছেন, নিজে গাড়ি চালাতেন। তিনি এতই সুন্দরী ছিলেন, লোকেরা তাকে সুচিত্রা সেন বলত। প্রথম জীবনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও স্বাধীনতার পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিনিও সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সুফিয়া কামালকে অনুরোধ করলে পরে তার অনুরোধে তারা জাহানারা ইমামকে আহ্বায়কের ভূমিকায় নিয়ে আসেন। গণআদালতের ব্যাপারে সারা দেশের মানুষকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী বলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন শ্রেষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী। বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে তারা সামনের কাতারে ছিলেন সব সময়। সুবিধাবঞ্চিত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সবার পাশেই তিনি সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পরেও আমি দেখেছি তার সর্বজনশ্রদ্ধেয় রূপ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাঙালীর অসমাপ্ত কাজ হিসেবে দেখছেন সারোয়ার আলী। সেই অসমাপ্ত কাজকে ত্বরান্বিত করতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আমৃত্যু কাজ করে গেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুফিয়া কামালের মেয়ে সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এমএম আকাশ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী প্রমুখ। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে সুরের মূর্ছনায় বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উদ্যাপিত বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে বুধবার দিনব্যাপী উদ্যাপন করা হলো ‘ফেঁত দো লা মিউজিক-২০১৭’। এ উপলক্ষে লা গ্যালারিতে দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা, ইংরেজী এবং ফরাসী ভাষায় পরিবেশিত একক ও দলীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি পিয়ানো, গিটার আর বাঁশির সুর মূর্ছনায় পুরো অনুষ্ঠানটি সবার কাছে দারুণ উপভোগ্য এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে। সঙ্গীতের মাধ্যমে মানববন্ধন সুদৃঢ়ভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্মুক্ত পরিবেশে একের পর এক সঙ্গীত পরিবেশনই হচ্ছে ফেঁত দো লা-মিউজিকের মূল ধারণা। ফ্রান্সে ১৯৮২ সালে প্রথম ফেঁত দো লা-মিউজিক উদযাপন শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রতিবছর ২১ জুন বিশ্বের শতাধিক দেশে বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উদ্যাপিত হয়ে আসছে।
×