ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটে নাকাল ঘরমুখো মানুষ, আজ থেকে বিশেষ ট্রেন যাত্রা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২১ জুন ২০১৭

যানজটে নাকাল ঘরমুখো মানুষ, আজ থেকে বিশেষ ট্রেন যাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুরুত্বপূর্ণ চার মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দি ও পদুয়ারবাজার টোল প্লাজা ঘিরে যানজট হচ্ছে প্রতিদিন। ফোর লেনের কাজের জন্য চার লেনের সড়ক হয়েছে এক লেন। মূলত এ সমস্যার কারণেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে। টঙ্গী-জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পানিতে ডুবেছে সড়ক। দেখা দিয়েছে ভাঙ্গাচোরা। তিন ভাগের দুই ভাগ রাস্তা দখলে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের ভোগান্তি হচ্ছে এ রুটের মানুষের। পূবাইল-কালীগঞ্জ-বাইপাইলসহ অন্তত আটটি পয়েন্টে সড়ক ভাঙ্গাচোরা, পানি জমা, দখল ও বাজারের কারণে ঢাকা-সিলেট রুটে যানজটের ভোগান্তি বাড়ছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, চার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলমান সবগুলো সমস্যাই সমাধানযোগ্য। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেয়ার কারণেই সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলছে না। দ্রুত সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে আগামী কয়েকদিনে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে, ঈদ উপলক্ষে ঈদের বিশেষ ট্রেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার থেকে। যারা ১২ জুন অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন তারাই প্রথম নাড়ির টানে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করবেন। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এবারের ঈদ উপলক্ষে ১২ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ জুনের অগ্রিট টিকেট বিক্রি হয় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। যাত্রার দিন স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রির কথা জানিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী। যথাসময়ে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকেট বিক্রি করেছে বিআরটিসি। তবে প্রথম দিনে আশানরূপ সাড়া মেলেনি। কর্তৃপক্ষ বলছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার টিকেটের চাপ বাড়তে পারে। বিআরটিসির অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। মঙ্গলবার সকাল থেকে কমলাপুর, গুলিস্তান, কল্যাণপুর ও জোয়ার সাহারা বাস ডিপো থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনে টিকেটের চাহিদা ছিল খুবই কম। ডিপো ম্যানেজাররা জানিয়েছেন, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে। তবে আশানরূপ সাড়া মেলেনি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সেবা ও বাসের মান ভাল না হওয়ায় বেসরকারী পরিবহনের মতো বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রিতে সাড়া মেলে না। তবে গত বছরের মতো এ বছর গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বাস ভাড়া দেবে বিআরটিসি। নির্দিষ্ট দিনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বাস পাঠানো ও যাত্রী পরিবহন করার কথা জানিয়েছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা। টানা চার দিন অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে। যে কেউ চার দিনের মধ্যে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। বিআরটিসির ৯০০ বাস এ বছর ঈদসেবা দেবে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কাজ সাময়িক বন্ধের নির্দেশ ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ভারি বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত এ মহাসড়কের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তারগাছ এলাকায় সংস্কারকাজ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সড়ক পরিদর্শনের সময় মন্ত্রী বলেন, ঈদের ১০ দিন আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলমান ফোর লেনের কাজ বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি গার্মেন্টস, পণ্যবাহী গাড়ি, ওষুধ, পচনশীল খাদ্যদ্রব্য ছাড়া কোন ভারি গাড়ি ঈদের তিন দিন রাস্তায় চলতে পারবে না। জনস্বার্থে যা যা করা দরকার সবই করা হবে। আমরা আশা করছি জনস্বার্থে-জাতীয় স্বার্থে এটা সবাই মেনে নেবেন। বাস মালিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায়, এ্যাক্সিডেন্ট হয়। সড়কে গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে লম্বা টেইল বের হয়। তাই ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় না নামাতে আমি বাস মালিকদের অনুরোধ করছি। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে মহাসড়কে বেপরোয়া মনোভাব, বেপরোয়া ড্রাইভিং। আমি অবাক হয়ে দেখি, আট লেনের রাস্তায় মধ্যরাতেও যানজট হচ্ছে। ঘরমুখো মানুষ যাতে রাস্তায় বিপদে না পড়ে, অসহায়বোধ না করে, সেজন্য সড়ক-মহাসড়কে পুলিশকে সহযোগিতা করতে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাকর্মীদের ভলানটিয়ারের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান তিনি। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে কাদের বলেন, এ সময় জনগণকে যদি স্বস্তি দিতে না পারি, তাহলে এটা অত্যন্ত কষ্টের ব্যাপার হবে। এটা হবে আমাদের জন্য একটা নেতিবাচক দিক। এজন্য আমি প্রতিদিনই রাস্তায় আছি, থাকব। প্রয়োজনে ঈদের দিনও থাকব। পাশাপাশি নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের রাস্তা সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এক লেন সড়কে বাস চলছে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ফোর লেন প্রকল্পের কাজে বিশৃঙ্খলা। পরিবহন চালকসহ শ্রমিক-মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা পরিবহনগুলো যমুনা সেতু পার হওয়ার পরেই গাড়ির ধীরগতি। কিছুদূর পরেই যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, চার লেন সড়ক পাড়ি দিয়ে একপর্যায়ে গাড়িগুলোকে এক লেন দিয়ে চলতে হয়। ফোর লেন প্রকল্পের কাজের জন্য সড়কের দু’পাশে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রীসহ মাটি। ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে হাট-বাজার, অবৈধ পরিবহন টার্মিনালের বাড়তি সমস্যা তো রয়েছেই। তাছাড়া এ সড়কটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। অন্তত ২১ জেলার যানবাহন এ রুটে চলাচল করে। ঈদকে কেন্দ্র করে যানবাহনের বাড়তি চাপ, সড়ক দুর্ঘটনা সমস্যার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। চন্দ্রা, বাইপাইল, আশুলিয়া, নবীনগর, এলেঙ্গা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের ভোগান্তি ছিল মঙ্গলবার সকাল থেকেই। টঙ্গী-জয়দেবপুর যানজটের বিষফোঁড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটের বিষফোঁড়া হিসেবে পরিচিত। অন্তত এক সপ্তাহ ধরে এ সমস্যা চলছে। সমস্যা কোথায়? পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ চালকরা বলছেন, টঙ্গী ব্রিজ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়কের তিন ভাগের দুই ভাগ দখলে। সড়কের ওপর হাট-বাজার, অবৈধ পরিবহন টার্মিনাল, গাড়ি পার্কিং একটি বড় সমস্যা। এছাড়াও অতিবৃষ্টির কারণে সড়কের দু’পাশে এখন থৈ থৈ পানি। রাস্তার বেশিরভাগ অংশ পানিতে ডুবে আছে। ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকায় দ্রুত পানিও সরছে না। যদিও বিষয়টি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা জানানো হয়েছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ দুই মহাসড়কেই যানজটের ভোগান্তি আছে। তিনি জানান, ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে সময় লাগছে তিন ঘণ্টারও বেশি। অথচ চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগছে মাত্র এক ঘণ্টা। তবে সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবারের যানজট কিছুটা কমেছে বলেও জানান তিনি। বাইপাইল, ভোগড়া, জয়দেবপুর সড়কে যানজটের কারণে এর প্রভাব টাঙ্গাইল সড়কেও পড়ছে। তিনি জানান, টঙ্গী হয়ে যেসব গাড়ি সিলেট রুটে যাচ্ছে ওই গাড়িগুলো মীরেরবাজার এলাকায় যানজটের মুখে পড়ছে। সিলেট মহাসড়কেও দুর্ভোগ পূবাইল, কালীগঞ্জ, বাইপাইল, ভোগড়াসহ অন্তত আটটি পয়েন্টে ঢাকা-সিলেট রুটে যানজট হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সড়কে পানি জমে থাকায় গাড়ির ধীরগতিতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়া, সড়কের পাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ না হওয়াসহ বাজার ও টার্মিনাল যানজটের কারণ। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সমস্যাগুলো আরও আগেই আমরা চিহ্নিত করেছি। ইতোমধ্যে এসব সমস্যা সমাধানে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী, পুলিশপ্রধান, গাজীপুরের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে আস্তে আস্তে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে। বৃষ্টি হলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে যানজট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি আছেই। সকাল থেকে দাউদকান্দিতে মেঘনা-গোমতি সেতুর টোল প্লাজার মুখে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল পর্যন্ত যানজট কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। পূর্বাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের এসপি পরিতোষ ঘোষ জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তেমন যানজট নেই। পুলিশ কাজ করছে, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড রেলওভারপাস ও দাউদকান্দি টোল প্লাজায় যানবাহনের চাপ বাড়লে তিন কিলোমিটারে বিস্তৃত হয়। টোল প্লাজায় এক্সেল লোড ওয়েয়িং স্কেল সিস্টেমের কারণে মিনিট বিশেকের মতো জট লাগছে, পরে আবার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী পদুয়ারবাজার রেলওভারপাসের নিমার্ণকাজ চলার কারণে নিচের অংশের সড়ক খারাপ থাকায় যানবাহনগুলো ধীরে চলছে। সড়কে যানবাহন বাড়লে এ জায়গায় দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে যানবাহনগুলো। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, টোল প্লাজাগুলোতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলে যানজটের ভোগান্তি হবে না।
×