ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেকে চেনালেন ফখার জামান

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৯ জুন ২০১৭

নিজেকে চেনালেন ফখার জামান

স্পোর্টস রিপোর্টার লন্ডন থেকে ॥ প্রথম কোন টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেই বাজিমাত করলেন পাকিস্তান ওপেনার ফখার জামান। নিজেকে বিশ্ব ক্রিকেটে চিনিয়ে দিলেন। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে সেঞ্চুরি করে দেখালেন। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেন। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে শেষ পর্যন্ত ১০৬ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ রান করে আউট হন জামান। জামানের এ ব্যাটিংয়েই পাকিস্তান স্বপ্নও দেখা শুরু করে। প্রথমবার কোন আইসিসির টুর্নামেন্ট খেলতে নেমে শুধু নিজেকে চেনালেন এমনটিই নয়। এমন ব্যাটিংই করলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানও করে ফেললেন। এক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এরআগে ২০০০ সালে ওপেনার সাঈদ আনোয়ার (২০৯) সর্বোচ্চ রানটি করেছিলেন। এবার সাঈদ আনোয়ারকে আজহার আলী (২২৮) ছাড়িয়ে যান। এক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান করেন। আজহারকেও ছাড়িয়ে যান জামান। ৪ ম্যাচ খেলে ৬৩ গড়ে ২৫২ রান করেন জামান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই তার অভিষেক হয়েছিল। প্রথম ম্যাচটি গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন। সেই থেকেই শুরু হয় জামানের ব্যাটিং ঝলক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১ রান করেন। এরপর গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরিই (৫০) করে ফেলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচটিতেও তার দারুণ ভূমিকা থাকে। ব্যাট হাতে ৫৭ রান করেন জামান। তখনই বোঝা হয়ে যায়, ফাইনালে প্রতিপক্ষ যে দলই থাকুক জামান গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যাটসম্যান হয়ে উঠতে পারেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন, সেঞ্চুরিই করে ফেললেন। প্রথম টুর্নামেন্ট খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন জামান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এরআগে সাঈদ আনোয়ার ও শোয়েব মালিক সেঞ্চুরি করেছিলেন। সাঈদ আনোয়ার সর্বপ্রথম সেঞ্চুরি করেন। ২০০০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১০৫ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৪ রান করেছিলেন। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপর ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে ১২৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন শোয়েব মালিক। পাকিস্তানের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি করলেন জামান। ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচটি খেলেননি। খেললে হয়ত রান আরও বেশি হত জামানের। ফাইনাল ম্যাচে চাপহীন থেকে খেলবে যে সফল হবে সে। এমন মন্ত্রই দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিল। জামান যেন কোন চাপই নিলেন না। নিজের খেলাটাই খেলে গেলেন। সাধারণ ব্যাটিং করে গেলেন। কিন্তু সেই সাধারণ ব্যাটিংই তাকে অসাধারণ করে তুলল। ফাইনাল ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মানে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে তুলে ধরা। নতুন ক্রিকেটার হলে তো কথাই নেই। জামান তাই করে দেখালেন। সঙ্গে এমন একটি কাজ করলেন, ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বসলেন। যে সেঞ্চুরিটি ভারত ক্রিকেটারদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই। জামান শুরুতে একেবারেই স্লো খেলতে থাকেন। ৭ বলে যখন জামানের স্কোরবোর্ডে ৩ রান, তখন অবশ্য ‘নতুন জীবন’ পান। বুমরাহর বলে ধোনির হাতে ক্যাচ আউট হন। অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হন। কিন্তু বলটি ‘নো’ বল হয়। তাতে বেঁচে যান জামান। ‘নতুন জীবন’ পেয়ে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরেন। চার ছক্কা হাঁকানো শুরু করে দেন। কোন বোলারকেই আর পাত্তা দেন না। শুরুতে যে খানিক চাপ ছিল তা বোঝাও গেছে। কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নেন। ৬০ বলে ৫০ রান করেন। ২৬তম ওভারের প্রথম বলে লং অন দিয়ে এমন এক ছক্কা হাঁকান, বলের দিকেই তাকিয়ে থাকেন ভারত ফিল্ডাররা। জামান যেন ভারত ক্রিকেটারদের পাগল বানিয়ে ফেলেন। কোনভাবেই জামানকে আউট করতে পারছিলেন না ভারত বোলাররা। অশ্বিনের করা ৩১তম ওভারের প্রথম বলে সুইপ করে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯২ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি করেন জামান। অসাধারণ ব্যাটিং করেন। তার এ সেঞ্চুরিতে সবাই শুভেচ্ছা জানায়। স্টেডিয়ামে আসা দর্শকরা দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। দুর্দান্ত ব্যাটিং যে করেন। অবশেষে ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে যখন পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে ২০০ রান পুরো হয়েছে, তখন গিয়ে আউট হন জামান। হার্দিক পান্ডের বলে স্কয়ারে ক্যাচ আউট হন জামান। তবে যা করার করে দেন। পাকিস্তানকে ৩৩ ওভারের মধ্যে ২০০ রানে নিয়ে যান। আবার আজহার আলীর সঙ্গে আইসিসির কোন টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ১২৮ রানের জুটিও গড়েন। আজহার হাফসেঞ্চুরি করে আউট হলেও জামান ঠিকই সেঞ্চুরি করে মাঠ ছাড়েন। এই সেঞ্চুরিতে নিজেকেও চেনালেন জামান।
×