ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমার স্বামী, দুই ভাসুরকে গুলি করে হত্যা করে আসামি ও তার সহযোগীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ জুন ২০১৭

আমার স্বামী, দুই ভাসুরকে গুলি করে হত্যা করে আসামি ও তার সহযোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আলবদর রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে পঞ্চম সাক্ষী জুলেখা খাতুন বলেছেন, আসামি ও অন্যান্য সহযোগীরা আমার স্বামী সেকান্দার আলী ম-ল ও দুই ভাসুর তালেব আলী ম-ল, আলতাব আলী ম-লকে গুলি করে হত্যা করে। ষষ্ঠ সাক্ষী মোঃ খোরশেদ আলম বলেছেন, রাজাকাররা আমার বাবা তালেব আলী ম-ল ও দুই চাচাকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষে আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ১৭ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এই আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন সংশ্লিষ্ট মামলার প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর আবুল কালাম। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও মুজাহিদুল ইসলাম। পঞ্চম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম জুলেখা খাতুন। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। আমার ঠিকানা, গ্রাম ভালুকজান, থানা ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার আনুমানিক বয়স ছিল ১৮ বছর। আমি গৃহিণী। ১৯৭১ সালে আমার স্বামীরা ৭ ভাই ছিল। আমার স্বামী ভাইদের মধ্যে ষষ্ঠ। আমার স্বামী ও তার ভাইয়েরা একই বাড়িতে বসবাস করত। আমি লেখা পড়া জানি না। একাত্তর সালের নবেম্বরে ২১ তারিখ রাত নয়টায় সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আমাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে তারা চলে যায়। এর পর আমার স্বামী ও ভাসুররা যখন খেতে বসে তখন আসমি রিয়াজ উদ্দিন, আমজাদ আলী (বর্তমানে মৃত), ওয়াজ উদ্দিন (বর্তমানে মৃত) সহ ১৫/১৬ জনের রাজাকারের একটি দল আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। এবং ঘর থেকে আমার স্বামী ও তিন ভাসুর তালেব আলী, আলতাব আলূ ও লাল মাহামুদকে আটক করে তাদের কে মারতে মারতে ভালুকজান ব্রিজের দিকে নিয়ে যায়। আমরা বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু করি। কিছুক্ষণ পর কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এর কিছুক্ষণ পর ধরে নিয়ে যাওয়া আমার তিন ভাসুরের মধ্যে লাল মাহামুদ পালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে এবং বলে যে, আটককৃত আমার স্বামী ও দুই ভাসুরকে মেরে ফেলা হয়েছে। কান্নাকাটি করে লাভ নেই। পর দিন সকালে ভালুকজান ব্রিজের কাছে গিয়ে আমার স্বামী ও দুই ভাসুরের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখি। এর পর থানায় খবর দেয়া হয়। এবং তাদের লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির আমার বড় জা আমেনা খাতুনের চাচা। ষষ্ঠ সাক্ষী অন্যদিকে ষষ্ঠ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার নাম মোঃ খোরশেদ আলম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। আমার ঠিকান, গ্রাম ভালুকজান, থানা ফুলবাড়িয়া, জেলা ময়মনসিংহ। একাত্তর সালে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ৪/৫ বছর। আমি ব্যবসা করি। আমার বাবা চাচারা সাত ভাই। তারা একই বাড়িতে বসবাস করত। একাত্তরের ২১ নবেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সালাম (বর্তমানে মৃত) তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে খেতে আসেন। তারা খাওয়া দাওয়া শেষে আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় নেয়ার পর আমার বাবা-চাচারা এক সঙ্গে খেতে বসেন। তখন অনেক রাজাকার আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। ওই সময় আমি ঘুমে ছিলাম। আমি আমার দাদার (বর্তমানে মৃত) কাছে শুনেছি যে, ওই রাজাকারদের দলে ছিল আসামি রিয়াজ উদ্দন ফকির, ওয়াজ উদ্দিন (বর্তমানে মৃত) আমজাদ আলী (বর্তমানে মৃত) এবং অনেকে। আমি আরও শুনেছি যে, আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও তার সহযোগী রাজাকাররা আমার বাবা ও তিন চাচাকে ঘর থেকে বের করে মারধর করতে থাকে এবং ভালুকজান ব্রিজের পাশ্চিম পাশে নিয়ে গিয়ে আমার বাবা ও দুই চাচাকে গুলি করে হত্যা করে। এক চাচা লাল মাহমুদ ম-লকে রাজাকাররা ছেড়ে দিয়েছিল। তিনি বর্তমানে অসুস্থ পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও কথা বলতে পারে না।
×