ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর পাঁচ স্প্যান প্রস্তুত, কাজ শুরু করেছে নতুন হ্যামার

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৭ জুন ২০১৭

পদ্মা সেতুর পাঁচ স্প্যান প্রস্তুত, কাজ শুরু করেছে নতুন হ্যামার

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর পাঁচ স্প্যান এখন প্রস্তুত। এই স্প্যানগুলো এখন মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষ ওয়ার্কশপে রাখা হয়েছে। চীন থেকে খ- খ-ভাবে আসা এই স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) জোড়া লাগানো হয়েছে। এখন এগুলো এমনভাবে রাখা হয়েছে, এখন শুধু ভাসমান ক্রেনে করে পিলারের ওপর স্থাপন করা বাকি। এছাড়া আরও ৩টি স্প্যান এখন ফিটিংয়ের কাজ চলছে এই ওয়ার্কসপে। এখানে জায়গার সঙ্কুলানের অভাবে বাকি স্প্যানগুলো ধীরে ধীরে আনা হচ্ছে। চীনে আরও ১২টি স্প্যান তৈরি করে খ- খ- আকারের রাখা রয়েছে প্রকল্পস্থলে আনার জন্য। শীঘ্রই সমুদ্র পথে এগুলো কুতুবদিয়া চ্যানেলে আনা হবে। এরপর নদী পথে মাওয়ায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া আরও ৮টি স্প্যান তৈরিরও কাজ শুরু হয়েছে চীনে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২০টি তৈরি হয়েছে। এগুলো স্থাপন করতে করতে বাকি ২১টিও তৈরি হবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৩ হাজার টন ওজনের এই স্প্যান তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে ৩৬শ’ কিলোজুল ক্ষমতার নতুন জার্মানির হ্যামার শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করেছে পদ্মায়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর এই হ্যামার জাজিরা প্রান্তের ‘টিবি৪বি’ টেস্টিং পাইলে শুক্রবার কাজ শুরু করেছে। এই টেস্টিং পাইলটি আগেই করা ছিল। এখন এখানে পরীক্ষামূলকভাবে পাইলের কাজ করছে। রবিবার থেকে এই হ্যামার পাইল স্থাপন করবে জাজিরা প্রান্তের ৪১ নম্বর পিলারে। এছাড়া ৩৪ ও ৩৬ নম্বর পিলারে পাইল স্থাপনেরও প্রস্তুতি চলছে। গত ১৩ জুন নতুন এই হ্যামারের কাজ শুরুর কথা থাকলেও টেকনিক্যাল কারণে তিন দিন বিলম্ব হয় বলে শুক্রবার দায়িত্বশীল প্রকৌশলী জানিয়েছেন। এদিকে পুরনো ২৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটিও এখন মাওয়া প্রান্তে পাইল ড্রাইভ করে যাচ্ছে। মাওয়ার ৩ নম্বর, ৪ নম্বর এবং ৫ নম্বর পিলারে ৬টি করে পাইল স্থাপন সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন এটি পাইল স্থাপন করছে ১৩ নম্বর পিলারে। এই পিলারে ১টি পাইলের বটম সেকশন স্থাপন হয়েছে এবং আরেকটি পাইলের বটম সেকশনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এরপরই পাইল স্থাপন করবে ১৪ নম্বর পিলারে। মাওয়া প্রান্তের এই পিলারটি পাইল ড্রাইভের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া ৩৭ নম্বর পিলারের বেইজ ঢালাই সম্পন্ন হওয়ার পর এখন খুঁটি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। ৩৮ নম্বর পিলারের কাজও সমানভাবে এগিয়ে চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই দু’পিলারের কাজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এরপরই এর ওপর বসিয়ে দেয়া হবে প্রথম স্প্যানটি। এদিকে নদীতে এপর্যন্ত ৬২টি পাইল এবং জাজিরা প্রান্তে ৪২ নম্বর পিলারের ১৬টি পাইল স্থাপন নিয়ে মূল সেতুর মোট পাইল স্থাপন হয়েছে ৭৮টি। আর জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) ১২০টি পাইল স্থাপন হয়েছে শুক্রবার পর্যন্ত। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের ১৯৩ পাইল বসবে। ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের পাইল সম্পন্ন হওয়ায় এখন ক্যাপ করার কাজ চলছে। সব মিলিয়ে পদ্মা উত্তাল সত্ত্বেও সেতু নির্মাণের কাজ চলছে জোরেশোরেই। এছাড়া ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার বিকল হওয়া আরেকটি হ্যামারও সচলপ্রায়। ন্যাদারল্যান্ডের এই হ্যামারও শীঘ্রই কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তের প্রথম দিকে কাজ শুরু করা ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের বাকি পাইল স্থাপনের কাজ শুরু হবে সেপ্টেম্বরের দিকে। মাওয়ার ১ নম্বর পিলার এবং মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর কাজ শুরু করারও প্রক্রিয়া চলছে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে এখন পদ্মায় কাজে বিশেষ গতি চলছে। ৩ হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার বিশাল ভাসমান ক্রেনটি এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার টন ওজনের একটি স্প্যান নিয়ে মহড়াও দিয়েছে। পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন প্রায়। তাই ভরা বর্ষায়ও কাজের গতি এমন চলমান থাকবে এবং একের পর এক স্প্যান বসতে থাকবে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। সেতুর নদী শাসনের কাজও এগিয়ে চলছে। নির্ধারিত টার্গেটের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও নদী শাসনের কাজ চলছে বিশেষ গতিতে। এছাড়াও অন্যান্য প্যাকেজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। টোলপ্লাজা এবং দু’পাড়ের এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন। এই নির্মাণযজ্ঞ দেখতে প্রায় আকস্মিক ভিজিটে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃষ্টি এবং প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও বৈচিত্র্যময় পদ্মা নদীতে দেশী বিদেশী কর্মীদের ব্যস্ততা চলছেই। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষ করে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন ঈদেও এই সেতুর কাজ চলমান থাকবে। দেশী শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছুটি দেয়া হবে। তবে এতে কাজের গতি বিঘিœত হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ঈদ সামনে রেখে এখানে নিরাপত্তাও জোরদার করা হচ্ছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানার সভাপতিত্বে সম্প্রতি এক সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও আজ শনিবার শিমুলিয়া ঘাটে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা রয়েছে। এই সভায়ও এ ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
×