ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাজার একর খাল ইজারা ॥ বিপাকে ৬ গ্রামের কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৬ জুন ২০১৭

হাজার একর খাল ইজারা ॥ বিপাকে ৬ গ্রামের কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৫ জুন ॥ ধানখালী ইউনিয়নের ছয় গ্রামের কৃষক এখন জীবিকা বিপর্যয়ের শঙ্কায় পড়েছেন। লোন্দা, ধানখালী, ছইলাবুনিয়া, পাঁচজুনিয়া, গিলাতলা, ফুলতলী গ্রামের অন্তত দুই হাজার কৃষক পরিবার এমন দুর্বিপাকে পড়েছেন। কৃষিকাজসহ জীবিকার প্রয়োজনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল এসব পরিবারে এখন বিনা মেঘে বজ্রাপাতের অবস্থা হয়েছে। গ্রামগুলোর মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া দীর্ঘ হাজারো একর আয়তনের খালটিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। ব্যবহার করে আসছে খালের মিঠা পানি। খালটি ছিল উন্মুক্ত। কিন্তু হঠাৎ করে দেড় মাস আগে খালের বিভিন্ন স্পটে ইজারাদারের নিষেধাজ্ঞা সংবলিত সাইনবোর্ড দেখে দরিদ্র কৃষক শ্রেণীর মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শাহজাহান শিকদার জানান, আমাদের পেতে রাখা জাল তুলে ফেলা হয়েছে। ইজারাদারের লোকজন হুমকি দিয়ে গেছে, ফের জাল পেলে কিংবা ঝাকি জাল দিয়ে মাছ ধরলেও জাল নেয়া হবে। মামলা দেয়া হবে। কৃষকরা জানান, এই খালে বর্তমান ইজারাদার কোন মাছ চাষ করেননি। খালে লাখ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। কয়েক মাস আগে ১৯ মণ সাদা মাছের পোনা সরকারীভাবে স্থানীয় এমপি মাহবুবুর রহমান অবমুক্ত করেছেন। ওই মাছ সরকার বিক্রির জন্য নিলাম দিলেও কয়েক লাখ টাকা পেত। এখন নামেমাত্র ৫৪ একর এলাকা দেখিয়ে খালটি লিজ দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘ খালটির পশ্চিম দিকে একটি সাইনবোর্ড লটকানো রয়েছে। যেখানে লেখা রয়েছে চালিতাবুনিয়া পক্ষিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর পক্ষে হাফেজ প্যাদার বাঁধ হতে টুন্ডাখালির বাঁধ পর্যন্ত খাল ইজারা নেয়া হয়েছে। ইজারাদার মোঃ আখতারুজ্জামান। পরিচালনায় ফোরকান প্যাদা। এলাকার শত শত কৃষক পরিবারের প্রশ্ন- এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি জমি কৃষিকাজে ব্যবহার হয়। সরকারী হিসেবে ৯৪ ভাগ। যা অন্য কোন ইউনিয়নে নেই। অথচ সেখানে একটি বিদ্যুত প্লান্টের কাজ চলছে। আরও একটির কাজ শুরুর তোড়জোর চলছে। দুই হাজার একর কৃষি জমি চলে গেছে। অধিগ্রহণের ভয়ে শতকরা ৮০ ভাগ কৃষক এ বছর তরমুজের আবাদ করেননি। বঞ্চিত হয়েছে কোটি কোটি টাকা আয় থেকে। কোনমতে অভ্যন্তরের খালে মাছ শিকারসহ কৃষির নানাবিধ কাজ করে সংসারের যোগান দিচ্ছিল, তাও জোড়াতালি দিয়ে। তার ওপর খালটি লিজের খবরে এখন দুইপারের সকল পরিবারে চরম উৎকণ্ঠা নেমে এসেছে। অসহায় মানুষগুলো জীবিকার পথ হারিয়ে কী করবেন এ শঙ্কা তাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
×