ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস দমন লড়াইয়ের জন্য তাদের মারউইতে মোতায়েন করা হয়েছে

ফিলিপিন্সে মার্কিন সেনা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৬ জুন ২০১৭

ফিলিপিন্সে মার্কিন সেনা

ফিলিপিন্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় যুদ্ধকবলিত মারউই শহরে মার্কিন সেনারা অবস্থান নিয়েছে। ফিলিপিন্সের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বুধবার এ কথা জানিয়েছেন। জেনারেল রেসতিউতো পাদিলা বলেছেন, মার্কিন সেনারা কোন যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না। মারাউইতে মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিষয়টি তিনিই প্রথম সরকারীভাবে স্বীকার করলেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। এর আগে ফিলিপিনো ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা ওই শহরে যুদ্ধে ফিলিপিন্সের সেনাদের সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিচ্ছে। তবে কোথা থেকে সহায়তা দেয়া হচ্ছিল তা মার্কিন কর্মকর্তারা জানাননি। পরবর্তীতে ফিলিপিন্সের কর্মকর্তারা জানান, মারাউইতে মার্কিন সেনারা কোন সহায়তা করছে না। সোমবার এক বিবৃতিকে উদ্ধৃতি করে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদী সন্ত্রাস দমনের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা অনেক বছর ধরে ফিলিপিন্সের দক্ষিণাঞ্চলে সেনাদের সমর্থন ও সাহায্য করছে। বুধবার জেনারেল পাদালি বলেন, মার্কিন সেনাদের কিছু সদস্য মারাউইর স্থল বাহিনীকে সহায়তা করতে সেখানে গেছে। তারা মূলত জামবোঙ্গা শহরের ঘাঁটিতে অবস্থান করে। তারা বর্তমানে মারউইতে অবস্থান করছে। তবে তাদেরকে যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি বলেও তিনি জানান। কত সংখ্যক মার্কিন সৈন্য মারউইতে অবস্থান করছে, তিনি তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, তারা সংখ্যায় খুব কম। তাদেরকে শুধু নিজেদের আত্মরক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা বন্দুক বহন করছে বলেও জানান তিনি। মারউইতে মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি একটি জটিল বিষয়। তারা সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে শুধু এ কারণেই নয়। ফিলিপিন্সের সংবিধানে বিদেশী সৈন্যদের উপস্থিতির বিষয়টি নিষিদ্ধ। প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে ইতোমধ্যে তার দেশ থেকে মার্কিন সৈন্যদের বিতাড়িত করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়েছেন। দুতের্তে রবিবার বলেন, তিনি সাহায্যের জন্য কখনও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চাননি এবং মারউইতে মার্কিন সামরিক সহায়তার বিষয়টি তার জানা নেই। একই দিন তার মুখপাত্র আরনেস্তো বেলা বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে মার্কিন ভূমিকার বিষয়টি স্বীকৃত নয়। এসব মন্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, ফিলিপিন্সের সামরিক বাহিনী এ বিষয়ে দুতের্তের সঙ্গে কোন পরামর্শ করেনি। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ফিলিপিন্সের সামারিক বাহিনীর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে। জেনারেল পাদিলা বুধবার আরও বলেন, মারউইতে সামরিক অভিযান শুরু হলে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সেখানকার হুমকি মোকাবেলায় যা করা দরকার তাদেরকে তাই করার পরামর্শ দেন। পাদিলা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপিন্স ১৯৫১ সালে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে বলা হয় কোন তৃতীয় পক্ষের আক্রমণ মোকাবেলায় তারা একে অপরের সাহায্য চাইতে পারবে। আইসের অনুগত শত শত জঙ্গী ফিলিপিন্সে একটি খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত মাসে মারউই শহরে হানা দেয়। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৯০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। জঙ্গীরা এখনও শহরটির এক পঞ্চমাংশ দখল করে আছে। রবিবার ফিলিপিন্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেলফিন লরেনজান বলেন, মার্কিন সেনারা পি৩ অরিয়ন স্পাই প্লেনের সাহায্যে সেখানকার তথ্য সংগ্রহ করছে। প্লেনগুলো মারউই শহরের উপর দিয়ে চক্কর দিচ্ছে। শহরের একটা অংশেই মূল যুদ্ধ চলছে। তবে অন্যান্য অংশেও বিচ্ছিন্নভাবে লড়াই চলছে। দুই লাখ বাসিন্দা অধ্যুষিত একসময়কার প্রাণবন্ত শহর মারউই এখন এক ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। সেনাবাহিনী জঙ্গীদের হটাতে সেখানে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে চলেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এখনও ৩শ’ থেকে ১৭শ’ লোক আটকা পড়ে আছে। এ জঙ্গীদের নেতত্ব দিচ্ছেন আবু সেইফ থেকে দলচ্যূত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আইএসের শীর্ষ নেতা ইসনিলন হ্যাপিলন। তিনি এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীর তালিকায় রয়েছেন। তাকে ধরে দেয়ার জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। রোমান ক্যাথলিক সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মারউই সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর।
×