ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাচ জেতাই লক্ষ্য ॥ মাশরাফি, বাংলাদেশ বিপজ্জনক দল ॥ কোহলি

আজকের ম্যাচ নিয়ে দুই অধিনায়ক যা ভাবছেন!

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৫ জুন ২০১৭

আজকের ম্যাচ নিয়ে দুই অধিনায়ক যা ভাবছেন!

স্পোর্টস রিপোর্টার বার্মিংহাম থেকে ॥ বার্মিংহামের এজবাস্টনে আজ ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা নির্ভার আছেন। কোন চাপ তাদের নেই। চাপহীন থেকেই অনুশীলন করে গেছেন। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যখন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আসলেন তখনও তার মধ্যে কোন চাপ কাজ করেনি। বিরাট কোহলির মধ্যে যা দেখা গেছে, তার ছিটেফোঁটা চাপও মাশরাফির মধ্যে মিলেনি। মিলবে কি করে। এমন মঞ্চে এসে যে চাপে আছে ভারতই। তাই তো মাশরাফি বলে দিয়েছেন, ‘ম্যাচ জেতাই লক্ষ্য। ভাল খেলে ম্যাচ জিততে চাই।’ নকআউট পর্বে খেলা মানেই হারলে বিদায়। আজ বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনালে যে দল হারবে, তারাই বিদায় নেবে। কিন্তু বাংলাদেশ বিদায় নিতে চায় না। তারা চায় আরও বড় সাফল্য। প্রথমবারের মতো কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার সুযোগ মিলেছে। তা ভাল খেলে কাজে লাগাতে চায়। বলেছেন, ‘আমরা ভাল খেলে ম্যাচটা নিজেদের করে নিতে চাই।’ তবে মাশরাফি এ নিয়ে কোন চাপ নিতে রাজি নন, ‘দেখেন এমন একটা ম্যাচ, চাপ থাকবেই। কিন্তু গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোতে যে চাপ ছিল সেমিফাইনালে সেই চাপ নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব জিততে। এটাও মাথায় রাখতে হবে ভারত দলটি দুর্বল দল। অনেক শক্তিশালী। আমাদের সেরাটা খেলেই জিততে হবে। তবে আমাদের দলের ক্রিকেটাররা কোন চাপে নেই। সবাই স্বস্তিতে আছে। ভারতই চাপে থাকবে। তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলছে। চাপ যত ভারতের থাকবে। আমরা ভাল খেলে জিততে চাই।’ বাংলাদেশ-ভারত এখন পর্যন্ত ৩২টি ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশ জিতেছে ৫টি। হেরেছে ২৬টি। একটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। তবে সর্বশেষ ৫ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ দুটি ও ভারত দুটি ম্যাচ জিতেছে। একটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। বোঝাই যাচ্ছে এখন বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যে কোন দলকেই হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে যেমন গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে হারিয়েছে। অবশ্য ভারতের বিপক্ষে যখন খেলতে নামছে বাংলাদেশ তখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচের বিষয়টিও আসছে। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। ৮৪ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। মাশরাফি সেই ম্যাচের বিষয়টি সামনে তুলে ধরেন। তবে জেতার পথ থেকে সরে যেতে রাজি নন। মাশরাফি বলেন, ‘উইকেট দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর রান হবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা খেলেছি। অনেক রান করার পরও হেরেছি। সেই ম্যাচটি আমাদের শিক্ষা দিয়েছে।’ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি নিয়ে সবাই ভাবছেন। ভারতকে একটা উচিত জবাব দেয়া হোক, সেটিও চাচ্ছেন। কিন্তু ক্রিকেটাররা সেই ম্যাচটি নিয়ে এখন আর ভাবেন না। মাশরাফিই যেমন বললেন, ‘হ্যাঁ। তা নিয়ে ভাবনা নেই।’ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিপজ্জনক দল।’ এ বিষয়ে বিরাটকে ধন্যবাদ দেয়ার সঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের দিনে যে কোন কিছু করতে পারি আমরা। তবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। দেশের মাটিতে ভাল ফল মিলেছে। এখন বিদেশের মাটিতেই ভাল ফল করতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’ সেই লক্ষ্যে আজ সফল হলেই তো হয়ে যায়। ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে উঠে যায়। মাশরাফি সেই জেতার দিকেই মনোযোগী। শুধু মাশরাফি নন, দলের ক্রিকেটাররা, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে পুরো জাতিই এখন জেতার দিকে নজর রাখছেন। এদিকে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে দেখেই মনে হয়েছে চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। যদি আজ হেরে যায় ভারত তাহলে বিদায় নেবে। বাংলাদেশের কাছে হেরে যদি ভারত বিদায় নেয় তাহলে ভারতে মাতাম উঠবে। তাদের ইতিহাস আছে এমন, হারের পর ক্রিকেটারদের বাড়ি-ঘরেও হামলা করে ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে বিরাট কোহলি এসব নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তিনি সেমিফাইনাল ম্যাচটিতে কিভাবে জিতবেন তা নিয়ে ভাবছেন। সঙ্গে এও বলে দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ বিপজ্জনক দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ এখন আর নিরাপদ নয়।’ এটা কোহলি না বললেও সত্য। এখন এ সত্যটা সবাই জানে। বুঝেও। তাইতো বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামলেই যে কোন দলই সতর্ক থাকে। কোহলিরাও ভীষণ সতর্ক। চ্যাম্পিয়ন হতে এসে যদি সেমিফাইনালেই বিদায় নেয় ভারত। তাহলে এ দায়তো কোহলির ওপরেই বেশি পড়বে। সেমিফাইনালে বহুবার খেলেছে ভারত। ফাইনালে খেলে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এত বড় মঞ্চে খেলা ভারতের জন্য নতুন নয়। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য নতুন। এ একটি বিষয় ভারতকে ভালভাবেই এগিয়ে রাখছে। অনেকে আবার বাংলাদেশকে এ মঞ্চে থেকে সারপ্রাইজও বলছেন। কিন্তু কোহলি কোনভাবে তা মানতে রাজি নন, ‘তারা এখন সেমিফাইনালের মঞ্চে। এটা কোনভাবেই সারপ্রাইজ হতে পারে না। তারা ক্রিকেটে অনেক উন্নতি করেছে। এটা তাদের ক্রেডিট। তাদের যে দল, দলের ক্রিকেটাররা; তাদের চেষ্টায় এমন ফল মিলেছে। তারা খুবই বিপজ্জনক দল। নির্দিষ্ট দিনে যে কোন দলকে হারিয়ে দিতে পারে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর তো তারা দুর্দান্ত খেলে চলেছে। কোন প্রতিপক্ষই তাদের বিপক্ষে নিরাপদ নয়।’ বাংলাদেশকে নিয়ে আরও প্রশংসা করেছেন কোহলি। নিজ দল নিয়ে যতটা বলেননি। বাংলাদেশকে নিয়ে তারচেয়ে বেশি বলেছেন। বোঝাই যাাচ্ছে চাপ কেমন যাচ্ছে। বাংলাদেশের শেষ চারে ওঠা নিয়ে বলতে গিয়ে কোহলি আরও জানান, ‘তারা এখন বিশ্বের সেরা আট দলের একটি। তারা ভাল ক্রিকেট খেলেই এমন অবস্থায় এসেছে। ক্রিকেটাররা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে। তাদের ধৈর্যই এ সফলতা এনে দিয়েছে। তারা এখন ভালভাবেই জানে কিভাবে কঠিন পরিস্থিতি থেকে জিততে হয়। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল।’ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি নিয়েও কথা উঠেছে। কোহলি সেই ম্যাচ নিয়ে ভাবতে রাজি নন। সেই ম্যাচে আম্পায়ারদের সুবিধা এবং আইসিসির সহযোগিতা মিলেছিল। তা নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। কিন্তু এখন আর তা নিয়ে ভাবতে রাজি নন কোহলি। তা যে অনেকদিন আগের কথা। কোহলি তাই বলেছেন, ‘২৪ মাস আগের কথা সেটি। এ নিয়ে এখন ভাবনা নেই। এরমধ্যে দুই দল অনেক ম্যাচ খেলেছে। আমরা শুধু ভাল ক্রিকেট খেলতে চাই। আমরা সেই ম্যাচটি নিয়ে এখন আর ভাবনাতে নেই। সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবছি।’
×