ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ ফেরত না দিয়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে সিটি ব্যাংকের মামলা;###;বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বরাবর লিখিত অভিযোগ

লন্ডন প্রবাসীর আমানতের দেড় কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৪ জুন ২০১৭

লন্ডন প্রবাসীর আমানতের দেড় কোটি টাকা আত্মসাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে এক সময় দেশে ফিরে বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্য করার আশা নিয়ে প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থ দেশের ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন লন্ডন প্রবাসী সৈয়দ আখলাক মিয়া। আখলাক মিয়ার সেই আশার গুড়ে বালি দিয়ে বেসরকারী খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের সিলেটের জিন্দাবাজার শাখার ম্যানেজার মুজিবুর রহমান সুদাসলে পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন। এরপর কর্মকর্তার আত্মসাত করা টাকা ফেরত না দিতে গ্রাহকের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করেছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রবাসী আখলাক মিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পর অবশেষে ওই মামলা থেকে গ্রাহককে অব্যাহতি এবং ম্যানেজারের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। জানা গেছে, সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার পাহাড়িয়া উত্তর পীর মহল্লার সৈয়দ আখলাক মিয়া ২০০৮ সালের ১২ জুলাই জিন্দাবাজার শাখায় ৭০ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত সুদ হার (এফডিআর) (হিসাব নং-৪১২২১৮৯৪০৫০০১) করে লন্ডনে চলে যান। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে ব্যাংকে গিয়ে আখলাক মিয়া জানতে পারেন তার হিসাবের বিপরীতে লভ্যাংশ দেয়া হয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫শ’ টাকা। তখনও ম্যানেজার এফডিআরের মূল কাগজপত্র আখলাক মিয়াকে বুঝিয়ে দেননি। ব্যাংকের সেফ কাস্টডিতে আছে বলে ম্যানেজার জানান। এরপর ২০১০ সালের জুলাই মাসে আবার দেশে ফিরে জানতে পারেন মুজিবুর রহমান ঢাকায় বদলি হয়েছেন। নতুন ম্যানেজারের অনুরোধে আরও ২২ লাখ টাকার এফডিআর করেন। পরের বছর সিটি ব্যাংক থেকে চিঠি দিয়ে আখলাক মিয়াকে জানানো হয়, তার হিসাবটি বন্ধ করা হয়েছে। পরে জানা যায়, ব্যাংকের ম্যানেজার মুজিবুর রহমানসহ কয়েক কর্মকর্তা আখলাক মিয়ার হিসাবের টাকা আত্মসাত করেছেন। আখলাক মিয়ার টাকা ফেরত না দিতে ম্যানেজারের সঙ্গে তাকেও আসামি করে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর মামলা করে সিটি ব্যাংক। এ বিষয়ে আখলাক মিয়া বলেন, মাতৃভূমির প্রতি মমতা, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার আশা নিয়েই প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থ সিটি ব্যাংকে জমা রেখেছিলাম। আমার আশার গুড়ে বালি দিয়েছে সিটি ব্যাংকের কয়েক কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত না দিতেই সিটি ব্যাংক সবকিছু জেনেশুনে আমাকে হয়রানি করছে। এ বিষয়ে চলতি বছরের ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বরারর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। ২০১৭ সালের ৯ মে সিলেট বিভাগীয় স্পেশাল জজ ফাহমিদা কাদেরের আদালত সিটি ব্যাংকের দাখিল করা অভিযোগে ২ নম্বর আসামির সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় ?অব্যাহতি দিয়েছে। তবে মুজিব?ুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের যথেষ্ট উপাদান বিদ্যমান থাকায় অব্যাহতি না দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয় আদালত। আখলাক মিয়ার আইনজীবী ইয়াসমিন বেগম বলেন, ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ মুজিবুর রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ আখলাক মিয়া আলাদাভাবে অভিযোগ গঠনের দায় হতে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। আদালত আখলাক মিয়াকে অব্যাহতি প্রদান করলেও মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছে। আদেশে আদালত বলেন, সিটি ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে ম্যানেজার মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও আখলাক মিয়াকে মিথ্যাভাবে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন তার ব্যাংকের আইন বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর দেন। আনোয়ার বলেন, যে কোন মামলা ব্যাংকের বিরুদ্ধে গেলে সাধারণভাবে আপীল করা হয়। আখলাক মিয়ার মামলার ক্ষেত্রেও তাই হবে। ব্যাংকের টাকা মারবে কর্মকর্তা আর মামলা হবে গ্রাহকের বিরুদ্ধে। এ ধরনের ঘটনায় ব্যাংকিং ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, ব্যবসা করতে গ্রাহকের সঙ্গে সব সময় ভাল সম্পর্ক রাখা উচিত।
×