ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১২ জুন ২০১৭

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ মাহে রমজানের ১৬তম দিবস। গতকাল আমরা কুরআনের মাসে কুরআন শরীফের একটি ঔষধি সূরা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সেটি হলো সূরা নাহল। নাহল মানে মধুমক্ষী। যাদের মাধ্যমে অলৌকিকভাবে আল্লাহ পাক মধু তৈরি করেন। এ মধু সৃষ্টির বিচিত্র কাহিনী গতকালও বর্ণনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রং বিভিন্ন হয়ে থাকে। মধু আহরণকারী ছোট্ট প্রাণীটি বিষধর অথচ তার মধ্যে বিষপ্রতিষেধক (মধু) বাস্তবিকই আল্লাহর কুদরতের অভাবনীয় নিদর্শন। আয়াতে মধুকে মানুষের জন্য ‘শিফা’ বা রোগের নিরাময় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার শরীরে ফোড়া বের হলেও তিনি তাতে মধুর প্রলেপ দিয়ে চিকিৎসা করতেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন : আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কি মধু সম্পর্কে বলেননি যে,‘ ফিহি শিফাউন লিন্নাস’।-(কুরতুবী)। ‘শিফা’ শব্দ দ্বারা বোঝা যায় যে, মধুর নিরাময় শক্তি বিরাট ও স্বতন্ত্র ধরনের। কিছু সংখ্যক আল্লাহ তায়ালার বুজুর্গ এমনও রয়েছেন যে, যারা মধু সর্বরোগের প্রতিষেধক হওয়ার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ। এ মানসিকতা মহান পরওয়ার দিগারের আলমের উক্তির প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। সাধারণত আমরা দেখি, কফ জনিত রোগে সরাসরি এবং অন্যান্য রোগে বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে মধু ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকরা সালসা তৈরি করতে গিয়ে বিশেষভাবে একে অন্তর্ভুক্ত করেন। এর একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, নিজেও নষ্ট হয় না এবং অন্যান্য বস্তুকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত নষ্ট হতে দেয় না। এ কারণে সুপ্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসকগণ একে এলকোহলের স্থলে ব্যবহার করে আসছেন। মধু বিরেচক এবং পেট থেকে দূষিত পদার্থ অপসারক। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে কোন এক সাহাবী তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিলে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনেও এসে আবার সাহাবী বললেন : অসুখ পূর্ববৎ বহাল রয়েছে। তিনি আবারও একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনেও যখন সংবাদ এলো যে, অসুখে কোন পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেন : আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য। তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। উদ্দেশ্য এই যে, ঔষধের দোষ নেই। রোগীর বিশেষ মেজাজের কারণে ঔষধ দ্রুত কাজ করেনি। এরপর রোগীকে আবার মধু পান করানো হয় এবং সে সুস্থ হয়ে উঠে।-(মা’আরিফুল কোরআন)। পৌরাণিক এবং প্রাগৈতিহাসিক কাল হতেই মধু বিভিন্ন রোগের মহাপ্রতিষেধক রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে। মধুর দ্বারা ৮৬ প্রকারের রোগের চিকিৎসা করা যায়। কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে মধু মহৌষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন হজমে সমস্যা থাকলে তার প্রভাব পড়বে ত্বকে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে যতবার ইচ্ছা পান করুন। এতে উপকার অনেক, গ্যাস হবে না। তাছাড়া পাকস্থলীর ওপর একটি প্রতিরোধক আবরণ সৃষ্টি করবে যাতে করে গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। যাদের রাতে ঘুম আসে না, তারা এক কাপ গরম দুধের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। সকালে উঠেই বুঝতে পারবেন গত রাতের ঘুমটা কেমন হয়েছিল। চেহারায় ক্লান্তি ছাপ দূর করতে মধু দারুণ কার্যকর। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে চায়ের সঙ্গে চিনির বদলে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। মুহূর্তেই আপনার ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। এজন্য অনেকে ইফতারের সময়ও মধু আহার করছেন। অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে শরীর থেকে টক্সিন্স বের হয় না, যার ফলে মেদ জমে এবং ত্বকে ও চুলের ক্ষতি হয়। নিয়মিত মধু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। রান্নার কাজে মাঝে মধ্যে হাত পুড়ে যায়। পোড়া জায়গায় সামান্য মধু লাগালে কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালা কমে যায়। আমাদের চুল ও ত্বক সুন্দর রাখার জন্য কিছু বিশেষ ধরনের মিনারেল অত্যন্ত দরকারি যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সবসময় থাকে না। যেমন-কপার, আয়রন, সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, শুধু মধুতে এই সবগুলো মিনারেল একসঙ্গে রয়েছে। অনেকের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের অপ্রত্যাশিত দাগ দেখা যায়। এসব দাগ দূর করতে মধু খুব কার্যকর। আসলে এত স্বল্প পরিসরে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মহৌষধ মধুবন্দনা শেষ করা সম্ভব নয়। ভাল কথা, মধু অবশ্যই একশ ভাগ খাঁটি হতে হবে, তা না হলে এর গুণ আপনি কিছুই পাবেন না।
×