ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শকহীনতায় ভুগেছে কার্ডিফ

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১০ জুন ২০১৭

দর্শকহীনতায় ভুগেছে কার্ডিফ

স্পোর্টস রিপোর্টার, কার্ডিফ থেকে ॥ কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন স্টেডিয়ামে ১৫ হাজার আসন আছে। দর্শক ধারণ ক্ষমতাও তাই। কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের কেনিংটন ওভালে যে দর্শক দেখা গেছে ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে সেইরকম দর্শক নেই। ওভালের ধারে কাছেও যেতে পারেনি কার্ডিফ। দর্শকহীনতায় ভুগেছে কার্ডিফ। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচেই যেমন সর্বসাকল্যে ৫ হাজার দর্শক হয়ত স্টেডিয়ামে দেখা গেছে। ওভালে বাংলাদেশের খেলাগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল। বাংলাদেশী দর্শকে পুরো স্টেডিয়ামে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব উঠেছিল। যেন একটু বাংলাদেশকেই মিলেছে। অথচ কার্ডিফে সেই ছায়াও দেখা যায়নি। ওভালে যেমন বাংলাদেশী দর্শকরা নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে স্টেডিয়ামের বাইরে দেশীয় গান গেয়েই চলেছেন। দেশীয় নৃত্য প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু কার্ডিফে এর কিছুই দেখা যায়নি। বাংলাদেশী দর্শক খেলা দেখতে এসেছেন ঠিক। কিন্তু তাদের মধ্যে সেইরকম কোন উত্তেজনাও দেখা যায়নি। কেন এমনটি হলো? বাংলাদেশী দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লন্ডনে প্রচুর বাংলাদেশী থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের থাকার মূল জায়গাই হচ্ছে লন্ডন। তাই তারা দল বেঁধে খেলাও দেখতে যায়। ওভাল স্টেডিয়ামটি লন্ডনে থাকায় বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড়ও দেখা যায়। কিন্তু কার্ডিফে সেই তুলনায় বাংলাদেশী একেবারেই কম। কার্ডিফে জনসংখ্যাই হচ্ছে ৩ লাখ ৬০ হাজারের মতো। এরমধ্যে বাংলাদেশী থাকেন সর্বসাকুল্যে ৬ হাজার। সেই তুলনায় লন্ডনে ১০ লাখ লোকের বসবাস। প্রবাসী বাংলাদেশীই আছেন প্রায় ২ লাখ। কার্ডিফে আবার প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশিরভাগই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাই খেলা দেখতে আসাদের সংখ্যাও একেবারেই কম। অনেক দর্শক বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি দেখতে আসেননি। এই খেলা দেখতে না আসার পেছনে আরেকটা কারণ আছে। কার্ডিফে টানা দুইদিন ধরে বৃষ্টি পড়েছে। ম্যাচের দিনও বৃষ্টির শঙ্কা ছিল। যেহেতু বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া বা পুরো ম্যাচ না হওয়ার শঙ্কা আগে থেকেই ছিল, তাই কার্ডিফে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী কিংবা অন্য স্থানে থাকা বাংলাদেশীরাও স্টেডিয়ামমুখী হননি। তাই দর্শক এত কম দেখা গেছে। কার্ডিফে মনে করা হয়েছিল অন্তত বাংলাদেশীদের ভিড় জমবে। যতটুকু ভিড় জমল, তাদের মধ্যে আবার লন্ডন থেকে খেলা দেখতে আসা ক্রিকেটপ্রেমীদের সংখ্যাই বেশি। লন্ডন থেকে কাার্ডিফে খেলা দেখতে আসা এক দর্শক যেমন বললেন, ‘আমরা লন্ডন থেকে খেলা দেখতে এসেছি। ওভালের দুটি ম্যাচই দেখেছি। এখন কার্ডিফেও দেখতে এসেছি। আশা করছি বাংলাদেশ জিতবে। জিতলে, সেমিফাইনালে উঠলে বার্মিংহামেও খেলা দেখতে যাব। কিন্তু যদি হেরে যায় তাহলে বাংলাদেশ বাদ পড়ে যাবে। কবে আবার এখানে বাংলাদেশের খেলা দেখতে পারব তার কোন ঠিক নাই। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। বাংলাদেশকে তাই সমর্থন দিতে এসেছি।’ লন্ডন থেকে বাংলাদেশের খেলা দেখতে এসে পড়েছে দর্শকরা। অথচ কার্ডিফে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরাই স্টেডিয়ামমুখী হননি বেশি। কার্ডিফেই থাকেন। কার্ডিফে বসবাস করছেন ২০ বছর ধরে। গাড়ি চালান। তিনি খেলা দেখতে এসে বললেন, ‘আসলে এখানে ক্রিকেট নিয়ে এত উত্তেজনা নেই। সব উত্তেজনা রাগবি নিয়ে। তাই দর্শকরা ক্রিকেটমুখী এত হয় না। আমরাই তো কোন ক্রিকেট ম্যাচ এখানে দেখি না। বাংলাদেশ খেলছে বলে দেখতে এসেছি। কার্ডিফের কোন মানুষ খেলা দেখতে আসবে বলে মনে হয় না। যদিও আসে সেটি অনেক কম হবে। এ খেলা দেখতে লন্ডন থেকেই বেশি দর্শক আসবে। আর কার্ডিফ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশী কিছু দর্শক মিলবে। নিউজিল্যান্ডের দর্শক তো চোখেই পড়বে না। তবে স্টেডিয়ামে যে বাংলাদেশী দর্শকরাই আওয়াজ তুলবে তা নিশ্চিত।’ সত্যিই তাই হয়েছে। দর্শক খুব বেশি আসেনি। তবে সংখ্যায় দর্শক যত কমই হোক সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছেন। প্রবাসী বাংলাদেশী দর্শকই বেশি দেখা গেছে। তাদের ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ আওয়াজে খুব জোর না থাকলেও শোনা গেছে। তবে কার্ডিফ দর্শকহীনতাতেই ভুগেছে।
×