ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত বিভাগে চিঠি

বিনা দরপত্রে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের আবদার টাটার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ জুন ২০১৭

বিনা দরপত্রে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের আবদার টাটার

রশিদ মামুন ॥ ভারতীয় কোম্পানি টাটা সরকারী একটি বিদ্যুত কেন্দ্র বিনা দরপত্রে নির্মাণের আব্দার জানিয়েছে। সম্প্রতি টাটা প্রজেক্টস লিমিটেডের লিড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার জেনারেশনের জেনারেল ম্যানেজার বিদ্যুত বিভাগে চিঠি দিয়ে ঠিকাদারি কাজ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন দরপত্রের আগেই নির্দিষ্ট কোন কোম্পানির এ ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা আমাদের জন্য বিব্রতকর। চট্টগ্রামের মিরসরাই রফতানি প্রক্রিয়াকরণ (ইপিজেড) এলাকায় পিডিবি এবং রুরাল পাওয়ার কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে একটি ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও দ্রুত এই বিদ্যুত সরবরাহের তাগেদা দিচ্ছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবারও একটি বৈঠক হয়েছে সেখানে বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ দ্রুত শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে ভারতীয় কোম্পানি টাটা বিদ্যুত কেন্দ্রটির কাজ পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার করছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কাছে প্রকল্পে কাজ চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। একই সঙ্গে চিঠিটির অনুলিপি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবুল নাসের চৌধুরী, বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, পিডিবির চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ, আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন এবং আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সবুরকে। বিদ্যুত কেন্দ্রের দরপত্র প্রস্তাব তৈরির সময় টাটার এই কর্মকা-কে বিব্রতকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের মতে বিদ্যুত কেন্দ্রের দরপত্রে টাটাও ইচ্ছা করলে অংশ নিতে পারে। দরপত্র ছাড়াই এ ধরনের কোন প্রকল্প করার নজির যেখানে নেই সেখানে এ ধরনের চিঠি প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ভারতের বড় বড় কোম্পানির একটি এখন বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে নিজেরাই কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছে। এর ধারাবাহিকতায় টাটাও বিনা দরপত্রে কাজ চাইছে। কর্মকর্তারা বলছেন, কুইক রেন্টালের ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান না করেই কাজ দেয়া হয়েছে। সেখানে দ্রুত বিদ্যুত সরবরাহের একটি বিষয় ছিল বলেই সরকার বাধ্য হয়েছিল দরপত্র ছাড়া কেন্দ্র নির্মাণের। কিন্তু অন্য কোন ক্ষেত্রে দরপত্র ছাড়া কাজ দেয়ার কোন নজির নেই। উপরন্তু সরকারী অর্থায়নে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। এক্ষেত্রে পিপিআর মেনে কাজ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সবুর জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা কেন্দ্রর জন্য পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে দর প্রস্তাব তৈরি করেছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে দরপত্র আহ্বান করা হবে। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। টাটার চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারী অর্থায়নে যেখানে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে দরপত্র ছাড়াই কাজ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। জানা গেছে বিদ্যুত কেন্দ্রটি হবে ইঞ্জিন বেজড। এখানের প্রতিটি ইঞ্জিনের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১০ মেগাওয়াট। ইঞ্জিনগুলো দ্বৈত জ্বালানিতে চলতে পারবে। যেহেতু আগামী বছর থেকে এলএনজি আসছে সঙ্গত কারণে কেন্দ্রটি এলএনজি দিয়েও চালানো হতে পারে। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে জানানো হয়েছে এলএনজি আসলে এই বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে তাদের কোন সমস্যা হবে না। টাটার তরফ থেকে প্রতিমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে টাটা প্রজেক্ট বাংলাদেশে এর আগেও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। তাদের কাজটি দিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে এছাড়াও অপেক্ষাকৃত কমদামে কেন্দ্র নির্মাণ করে দেবে। মোট তিন পৃষ্ঠার চিঠির বেশিরভাগ জুড়েই টাটা বিভিন্ন স্থানে যে প্রকল্প নির্মাণ করেছে তার বর্ণনা রয়েছে। টাটা মূলত বিদ্যুত কেন্দ্রটির ইপিসি কাজ চাইছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারী অর্থায়নে কোন প্রকল্প হলে দেশীয় ঠিকাদার কোম্পানিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এই দরপত্রের ক্ষেত্রে দেশীয় কোন কোম্পানি ৫০ মেগাওয়াট এবং দেশের বাইরের কোন কোম্পানি কাজ চাইলে তাদের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
×