ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রুপের শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ আজ নিউজিল্যান্ড

বৃষ্টি শঙ্কা থাকছেই- তবু আশাবাদী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৯ জুন ২০১৭

বৃষ্টি শঙ্কা থাকছেই- তবু আশাবাদী বাংলাদেশ

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন ও ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে চাইলে কার্ডিফকেই বেশি মার্ক দিতে হবে। শহরটি খুবই সুন্দর। সবুজে ঘেরা। দালান কোঠাগুলোও সুন্দর। যেন স্বপ্নের মতো। এখানেই স্বপ্ন জয় করার খোঁজে আছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ লড়াই করবে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে জিততে পারলে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারে। কিন্তু বৃষ্টি সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বৃষ্টি শঙ্কা নিয়েই খেলতে নামতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এটি গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। যদি বাংলাদেশ ম্যাচটিতে জিতে তাহলে ৩ পয়েন্ট পাবে। নিউজিল্যান্ড তখন ১ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় নেবে। বাংলাদেশের সামনে তখন বাধা হয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। যে দলটি এরই মধ্যে ২ পয়েন্ট পেয়ে আছে। যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া হারে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ বাংলাদেশ জিতে তাহলেই বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠে যাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে অর্জন এরআগে কখনই পায়নি বাংলাদেশ। তাই হবে। কিন্তু বৃষ্টি সামনে বাধা হয়ে ধরা দিতে পারে। আবহাওয়া সম্পর্কে যতদূর জানা গেল, আজ সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টি এবং রোদ দুটিই পাশাপাশি অবস্থান করবে। যখন ম্যাচ শুরু হবে সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টা) তখন হাল্কা বৃষ্টি থাকবে। সময় যত গড়াবে, ততই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। দুপুরে গিয়ে বৃষ্টি ২ ঘণ্টার জন্য থামবে। এরপর আবার বৃষ্টি আসবে। বিকেলে গিয়ে মেঘলা আকাশ থাকবে। রাতে কোন বৃষ্টি থাকবে না। তার মানে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি বৃষ্টির বাধায় পড়তে যাচ্ছে। বৃষ্টি আসা মানেই ম্যাচ বৃষ্টি আইনে চলে যাওয়া। নয়ত খেলা না হলে পয়েন্ট ভাগাভাগি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ এক পয়েন্ট পেয়ে টুর্নামেন্টে টিকে আছে। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নও দেখছে। যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও পয়েন্ট ভাগাভাগি হয় তাহলে কি হবে? সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারে। কিভাবে? এ মুহূর্তে গ্রুপ ‘এ’তে ইংল্যান্ড শক্ত অবস্থানে আছে। তারা সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে। টানা দুই ম্যাচে জিতেছে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে। ইংল্যান্ডের পরের অবস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। দলটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারতে হারতে বেঁচেছে। বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত হওয়াতে ১ পয়েন্ট পেয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতার সম্ভাবনা থাকার পরও ১ পয়েন্ট পেয়েছে। বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। কিন্তু দুটি ম্যাচই বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় কোন রানরেট নেই অস্ট্রেলিয়ার। পরের অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ। চতুর্থ স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট সমান ১ করে। দুই দলই একটি করে ম্যাচ হেরেছে। একটি করে ম্যাচে ১ পয়েন্ট করে পেয়েছে। কিন্তু রানরেটে বাংলাদেশ (-০.৪০৭) এগিয়ে রয়েছে। নিউজিল্যান্ড (-১.৭৪০) পিছিয়ে রয়েছে। এখন দুই দলের আজকের ম্যাচটি যদি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যায় তাহলে পয়েন্ট ভাগাভাগি হবে। তখন নিউজিল্যান্ডের ভা-ারে কোন রানরেট জমা হবে না। বাংলাদেশের কোন রানরেট জমা হবে না। রানরেট যা ছিল, তাই থাকবে। সেক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড পেছনেই থাকবে। বিদায় নেবে। বাংলাদেশ তিন নম্বরেই থাকবে। বাংলাদেশ তখন ইংল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে থাকবে। শনিবার অস্ট্রেলিয়াকে যদি ইংল্যান্ড হারিয়ে দিতে পারে তাহলেই সেমিফাইনালে উঠে যাবে বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সমান ২ পয়েন্ট করে পাবে। কিন্তু রানরেটে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকবে। শর্ত এ একটিই আছে। বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পয়েন্ট পায়, তাহলে অস্ট্রেলিয়াকে হারতেই হবে। তাহলেই সেমিফাইনালে উঠে যাবে বাংলাদেশ। আর যদি বাংলাদেশ আজ হেরে যায় তাহলে বিদায় নেবে। কিংবা যদি অস্ট্রেলিয়া শনিবার জিতে যায় তাহলেও বাংলাদেশের বিদায় ঘণ্টা বাজবে। বাংলাদেশ পারবে সেমিফাইনালে উঠতে? অবশ্য দলের কোন ক্রিকেটারই এখন সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবছেন না। সবাই ভাবছেন কিভাবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা যায়। না জিতলে যে কোন সমীকরণই কাজে দেবে না। তাইতো বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে শেষ ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেয়েছি। আমাদের সামনে সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগও আছে। যদি আমরা জিতি। আবার অন্য দলকে (অস্ট্রেলিয়াকে) হারতেও হবে। সমীকরণের ওপর নির্ভরশীল। তাই এসব নিয়ে নয় আমাদের আসলে পরের ম্যাচটি নিয়েই ফোকাস থাকতে হবে। সেমিফাইনালের চেয়েও বেশি নিউজিল্যান্ডকে নিয়েই ভাবছি। সবাই সবদিনে পারফর্ম করতে পারে না। তবে কেউ জানে না যে আমরা ম্যাচ জিতব না। ভাল সময় থাকলে পারফর্ম করলে জিততেও পারি। আমরা এমন একটি দলের (নিউজিল্যান্ড) বিপক্ষে খেলব যাদের দেশ ও বিদেশের মাটিতে হারিয়েছি। আমরা তাদের বিপক্ষে ভাল খেলতে আত্মবিশ্বাসী। তারা অনেক শক্তিশালী দল। যদিও তাদের বিপক্ষে জিততে হবে, অনেক ভাল খেলেই জিততে হবে।’ কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন স্টেডিয়ামের নাম এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। নাম হয়েছে সোয়ালেক স্টেডিয়াম। তবে ২০০৫ সালে যে অস্ট্রেলিয়াকে এ মাঠে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি জলজ্যান্ত। সেই স্মৃতি এখনও সুখ দেয়। যখন আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ, তার আগ পর্যন্ত সেই সুখস্মৃতিই প্রেরণা জুগিয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কিন্তু ২০১৫ সালের দিকে তাকিয়ে। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ এই পয়েন্টের ওপর ভর করে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। এবার একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাশরাফিও তাই সেই স্মৃতির দিকেই মনোযোগী, ‘২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক পয়েন্ট পেয়েছিলাম। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলাম। এবারও সেই রকম সুযোগই মিলেছে। সেইসময় এক পয়েন্ট আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে।’ সঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর কথাও বলেছেন, ‘আমরা নিউজিল্যান্ডকে হারাতে চাই। একটা ফল চাই। জানি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি কঠিন হবে। তবে আমরা যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভাল খেলতে পারি, তাহলে সেমিফাইনালে জিততেও পারি।’ বাংলাদেশ এখন জিতে গেলেই হয়। আগে জিততেই হবে। এরপর না সেমিফাইনালের হিসেব আসবে। তবে বৃষ্টি শঙ্কা নিয়েই নামতে হবে।
×