ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরব ও কাতারের সঙ্গে সমানতালে সম্পর্ক রাখবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৭ জুন ২০১৭

সৌদি আরব ও কাতারের সঙ্গে সমানতালে সম্পর্ক রাখবে বাংলাদেশ

তৌহিদুর রহমান ॥ সৌদি আরব ও কাতারের বিবাদে জড়াবে না বাংলাদেশ। দুই দেশের সঙ্গেই সমানতালে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে সরকার। বিশেষ করে শ্রমবাজারের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে দুইপক্ষের সঙ্গেই সমানভাবে সম্পর্ক রাখবে। এছাড়া বাংলাদেশ এ বিষয়ে এখনই কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে সোমবার কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় প্রতিবেশী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন ও মিশর। পরে এসব দেশের সঙ্গে সুর মিলিয়ে লিবিয়া সরকারের একটি অংশ ও মালদ্বীপ একই অবস্থান নেয়। এই দুইটি দেশও কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়। সূত্র জানায়, শ্রমবাজারসহ নানা কারণে সৌদি আরব ও কাতার উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক এখন অবস্থান করছে। দেশটির শ্রমবাজারে আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সৌদিতে আরও বেশি হারে জনশক্তি রফতানি করতে চায়। এছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বহুপক্ষীয় সম্পর্কও রয়েছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোটেও রয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সৌদি আরবে আরব-আমেরিকা সম্মেলনেও যোগ দিয়ে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান সুষ্পষ্ট করে এসেছেন। ২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বে আইএসবিরোধী সামরিক জোটে যোগ দেয় বাংলাদেশ। আইএসবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব একযোগে কাজ করবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। আইএসবিরোধী জোটে থেকে সন্ত্রাস প্রতিরোধে তথ্য বিনিময়, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজে যুক্ত থাকবে বাংলাদেশ। এদিকে সৌদি আরবের এ সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোটে কাতারও ছিল। সৌদি জোটে থাকার ফলেও হঠাৎ করে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ফলে জোটের অন্যান্য শরিকদের মধ্যে এখন অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) শরিক দেশগুলোও এখন বিব্রত। এদিকে দীর্ঘদিন অচলাবস্থা থাকলেও ধীরে ধীরে এখন কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ সামনে রেখে সে দেশে জনশক্তি রফতানি করতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬-৯ মে কাতার সফর করে এসেছেন। সে সময় বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকার ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞসহ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে কাতার। তখন বাংলাদেশ ও কাতারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে আরও সহযোগিতা বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইও হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে মিশরীয় সেনাবাহিনী মিশরের প্রেসিডেন্ট মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করলে মিশর-কাতার সম্পর্ক শত্রুতায় রূপ নেয়। আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্কের কারণে কাতার মিশরীয় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ব্যাপক সমালোচনা করে। একইসঙ্গে ব্রাদারহুড নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করে দেশটি। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলো তখন মিশরের নতুন সামরিক সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে থাকে। কাতারকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে একঘরে করে রাখে। তবে পরবর্তী সময়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সামরিক জোটে যোগ দেয়ায় কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়। এ অবস্থার মধ্যেই ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে কাতার মদদ দিচ্ছে বলে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নকারী এসব দেশগুলো অভিযোগ তুলেছে। তবে কাতার ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বিত এ সিদ্ধান্ত দুঃখজনক ও ভিত্তিহীন। সোমবার আলাদা বিবৃতিতে পাঁচটি দেশ কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে উপসাগরীয় তিন দেশ সৌদি, বাহরাইন ও আমিরাত দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের ভূখ- থেকে কাতারের সব নাগরিককে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। ইরানের সঙ্গে সৌদি প্রভাব বলয়ের দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে কাতারের সঙ্গে পাঁচ দেশের সম্পর্ক ছিন্নের এ ঘোষণা দেয়া হয়। একে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তির ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। রিয়াদ ইতোমধ্যে কাতারের সঙ্গে সীমান্ত আটকে দিয়ে স্থল, নৌ ও আকাশপথে সব ধরনের যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সব মিত্র দেশ ও সব কোম্পানিকেও একই পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। কাতার সরকার ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের সমর্থন দিচ্ছে বলেও সৌদি সরকারের অভিযোগ। সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেন সরকারও ইরান-সমর্থিত হুতিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে। মিশর তাদের আকাশসীমা বা বন্দর কাতারের উড়োজাহাজ বা নৌযানের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদদ দেয়ার কারণে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশর। সূত্র জানায়, মে মাসের শেষদিকে কাতারের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার ওয়েবসাইটে আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিকে উদ্ধৃত করে একটি বক্তব্য আসে, যেখানে ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশিদিন টিকবেন না। কাতার সরকার দাবি করে আসছে, ওই উক্তি তাদের আমিরের নয়। আর কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরা লিখেছে, ওই উক্তি আমিরের নামে চালানো হয়েছিল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সোমবার এক বিবৃতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
×