ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়েত ও সুদানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব

অস্থিরতার পথে উপসাগর

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৭ জুন ২০১৭

অস্থিরতার পথে উপসাগর

কাতার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল সানি বলেছেন, সৌদিসহ কয়েকটি আরব দেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (পিজিসিসি) ভবিষ্যত মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। তিনি বলেন, যদি কাতারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এসব দেশ হস্তক্ষেপ করে, তবে পিজিসিসির সঙ্গে দোহার সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। অব্যাহত কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের পর মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদ মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন স্থল-নৌ-আকাশ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে উপসাগরীয় আকাশপথে ব্যাপক অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আরব দেশগুলোর এই সম্পর্কের ফাটল দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও ডন অনলাইনের। আঞ্চলিক উত্তেজনা না বাড়াতে কাতারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-জাবের আস-সাবাহ। শেখ সাবাহ কাতারের আমিরকে ফোনে বলেন, এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, যাতে উত্তেজনা প্রশমনের বদলে বেড়ে যায়। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, আরব দেশগুলোর কূটনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কুয়েত মধ্যস্থতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সঙ্কট নিয়ে মঙ্গলবার রাতে কাতারের আমিরের যে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল, তাও স্থগিতের আহ্বান জানান কুয়েতের আমির। দ্বন্দ্ব নিরসনে কাতারের তিনি কিছুটা সময় চেয়েছেন। আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অনড় প্রতিশ্রুতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সোমবার কাতারের প্রশংসা করেছে। দেশটির আল উবায়েদ বিমানঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান উড্ডয়নে ক্ষেত্রে কোন খারাপ প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডামেন পিকার্ট বলেন, ‘কাতারের বিমানঘাঁটিতে আমাদের বিমান চলাচলে কোন খারাপ প্রভাব দেখছি না। পরিকল্পনা অনুসারেই সবকিছু চলছে। কাতারের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনেরও কোন পরিকল্পনা নেই।’ ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি সই করে। যেটার ওপর ভিত্তি করেই দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে কথিত ইসলামিক এস্টেটসহ সন্ত্রাসবাদ মদদের সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাতার। দেশটি জানিয়েছে, তাকে একঘরে করার এ উদ্যোগ পুরোপুরি ‘অন্যায্য’। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের ওপর নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন, তাদের প্রত্যাখ্যান করা হবে। এদিকে সব পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্¯’াপন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে সুদানী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সঙ্কট মোকাবেলায় আঞ্চলিক নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। প্রথমে বাহরাইন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্থল, নৌ ও বিমানসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এ তিনটি দেশ থেকে কাতারী পর্যটক ও বাসিন্দাদের দুই সপ্তাহের মধ্যে চলে যেতে বলা হয়েছে। আরব আমিরাত ও মিসর ছাড়তে চব্বিশ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে কাতারের কূটনৈতিকদের। কাতারের প্রভাবশালী আলজাজিরা টেলিভিশনের স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিয়ে সৌদি একধাপ এগিয়ে রয়েছে। তবে মক্কায় হজ পালনে কাতারী নাগরিকদের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। ইয়েমেন, লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় সরকার ও মালদ্বীপও পরবর্তীতে কাতারকে একঘরে করে। সৌদি বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ দেশটিতে কাতারী বিমানের উড্ডয়ন, অবতরণ ও আকাশপথ ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত মিসরের আকাশেও কাতারী বিমান চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে গালফ এয়ার, ইত্তিহাদ ও ইমিরেটাস এয়ারওয়েজের সকল ফ্লাইট বাতিলসহ কাতারের রাজধানী দোহায় আসা-যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়াও তাদের দোহা রুট বাতিল করেছে। কাতার এয়ারওয়েজ সৌদি আরবে তাদের সকল ফ্লাইট স্থগিত করেছে। এ স্থগিতাদেশে দেশটির বিমানপথের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে। কারণ, বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের চলাচলের পথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন, যাতায়াতের সময়ও আগের তুলনায় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। খাদ্য রফতানির জন্য কাতার সৌদি আরবের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বড় সঙ্কটের আশঙ্কায় দেশটির নাগরিকরা খাদ্য মজুদ করে রাখছেন। কাতারের ৪০ শতাংশ খাবার ট্রাকে করে প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশ থেকে আসে। তবে ইরানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তার দেশ ১২ ঘণ্টার মধ্যে কাতারে খাদ্য সরবরাহ করবে। তবে আচমকা হলেও সম্পর্কোচ্ছেদ যে একেবারে অপ্রত্যাশিত তা বলা যাবে না। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। বিশেষভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে। দুই সপ্তাহ আগে মিসর, সৌদি, বাইরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আলজাজিরাসহ কাতারী সংবাদ মাধ্যমের সাইটগুলো বন্ধ করে দেয়। সৌদি আরবকে সমালোচনা করে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বক্তব্য দেশটির গণমাধ্যমে প্রচারের পরই উত্তেজনা বেড়েছে। যদিও দোহা থেকে এ খবরকে ভুয়া ও লজ্জাজনক সাইবার অপরাধ বলে অস্বীকার করা হয়েছে। ২০১৪ সালে সৌদি, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত রাষ্ট্রীয় কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগে কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের বেশ কয়েক মাসের জন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তবে মূলত দুটি কারণে উপসাগরীয় দেশগুলো সোমবারে সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। প্রথমত, ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক।
×