ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যারা পাহাড়ীদের বাড়িঘর পুড়িয়েছে তাদের গ্রেফতার করুন ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৪ জুন ২০১৭

যারা পাহাড়ীদের বাড়িঘর পুড়িয়েছে তাদের গ্রেফতার করুন ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে আওয়ামী লীগ। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বর্তমান সরকার হামলা-আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। অপর এক অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, এই বাজেট একটি ফাঁপানো বেলুন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ী এলাকায় যুবলীগের একজন নেতার মৃতদেহ পাবার পর সেখানে প্রায় ২০০ মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই কাজগুলো আওয়ামী লীগ করছে। তবে যুবলীগ নেতা কিভাবে হত্যা হয়েছে সেটি তদন্ত করা দরকার। আমরা জানতে চাই পাহাড়ীদের বাড়িঘর পোড়ানো হল কেন? শুক্রবার ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে হামলার নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন রাজনৈতিক কর্মসূচীর পর এখন বিভিন্ন স্থানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলেও ক্ষমতাসীনরা বাধা দিচ্ছে। সরকারী দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুলিশ চড়াও হচ্ছে, আক্রমণ চালাচ্ছে। এ ধরনের আক্রমণ বা বাধা প্রদান শুধু রাজনৈতিক দলের উপর আক্রমণ নয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপরও আক্রমণ। ফখরুল বলেন, শুক্রবার কেরানীগঞ্জের বিএনপির ইফতার মাহফিলে হামলার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের বাড়িতেও হামলা হয়। আমানউল্লাহ আমান একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ, ডাকসুর ভিপি ছিলেন। তার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, কোন দলের রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী কেউই এখন নিরাপদ নয়। আমরা মনে করি, সরকার ও সরকারী দলের এহেন কর্মকা- গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের নেতা আসাদুল করীম শাহিন, শাম্মী আখতার প্রমুখ। এই বাজেট একটি ফাঁপানো বেলুনÑ মওদুদ প্রস্তাবিত বাজেট টাকার অঙ্কে বড় হলেও তা অন্তঃসারশূন্য বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, এই বাজেট ফাঁপানো বেলুন। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইয়ুথ ফোরাম নামক একটি সংগঠন আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বাংলাদেশের রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বর্তমান সরকারের এ ধরনের বাজেট দেয়ার কোন নৈতিক অধিকার আছে কি না এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, উন্নয়ন খাতের চাইতে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় প্রায় দেড়গুণ বেশি ধরা হয়েছে এ বাজেটে, যা কখনই জনগণের বাজেট হতে পারে না। এ বাজেটে ঘাটতি রয়েছে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেটের সবচাইতে বড় দুর্বলতা হলো, দুর্নীতি দমন করার কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। মওদুদ বলেন, বাজেটে ব্যাংকে জমা রাখা টাকার উপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি আত্মঘাতী প্রস্তাব ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে আমরা মনে করি। কারণ গত অর্থবছরে এমনিতেই ৩৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এখন ব্যাংকের আমানতের উপর অতিরিক্ত কর বসানোর কারণে মানুষ আর ব্যাংকে টাকা জমা রাখবে না। সরকার চায় না দেশের মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখুক। মানুষের উপর করের বোঝা চাপানোর সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, বড় বাজেট মানে বড় দুর্নীতি। বাজেটে বড় বড় প্রকল্পের জন্য বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। বড় প্রকল্প মানে হচ্ছে বড় বড় কমিশন, কমিশন মানে হল বড় অংকের ঘুষ ও দুর্নীতি। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী যে বাজেট উপস্থাপন করেছেন, ‘ইট ইজ এ বিগ বিউটিফুল বেলুন’। দেখতে খুব বড় এবং চমকপ্রদ মনে হয়, কিন্তু এর ভেতরে সাধারণ মানুষ তথা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য কিছুই নেই। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, মুসলিম লীগের মহাসচিব জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ। আগামী নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা চলছে, নজর রাখতে হবে- খসরু দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে যে হেলাফেলা চলছে সেদিকে নজর রাখতে হবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম-৭১’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আমির খসরু বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের জন্য সরকার সৃষ্ট মূলধনের ঘাটতি পূরণে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাজেট পেশ করা হয়েছে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে সাধারণ মানুষকে শুধু কর নয় আবগারি শুল্ক দিতে হবে। তিনি বলেন, এখন দেশে শুধু একদলীয় শাসন নয়, অর্থনীতিকেও একদলীয় অর্থনীতিতে পরিণত করা হয়েছে। খসরু বলেন, দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তারা তাদের ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার ফিরে পেতে চায়। জীবনের নিরাপত্তা ফিরে পেতে চায়। দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া আর অন্য কিছু মেনে নেবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ আবারও দেশের জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। কিন্তু গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। তার পরেও সরকার যদি কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে চায় সেক্ষেত্রে বিএনপি প্রতিবাদ করবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। খসরু বলেন, ব্যাংকের সঞ্চয়ের ওপর সরকার আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে। আমার জানা মতে, সারাবিশ্বে সঞ্চয়ের ওপর সরকারের সহযোগিতা থাকে, ইনসেনটিভ দিয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক চাপিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এতে বোঝা যাচ্ছে, সরকারই চায় না যে, দেশের মানুষ ব্যাংকে টাকা আমানত হিসেবে জমা রাখুক। সরকারই বিদেশে টাকা পাচার করার জন্য এই ব্যবস্থা করছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে দলীয় অর্থনীতি ও দলীয় শাসন চলছে। তার প্রতিফলন বাজেটে লক্ষ্য করা যায়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।
×