ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন

পাঁচ বছরে ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধস

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৪ জুন ২০১৭

পাঁচ বছরে ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৭-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে ব্যাংক খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে তা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশে। ২০১১-১২ অর্থবছরের পর এটাই ব্যাংকিং খাতের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮৭, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩৩, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৪৯ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সাল শেষে দেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এ পরিমাণ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকায়। মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ খেলাপির খাতায় চলে গেছে। ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদের হারও ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাংকগুলোর ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদহার ছিল গড়ে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা প্রায় ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে আমানতের ওপর বিভিন্ন মাত্রায় আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ও নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনে উৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। রাজস্ব বৃদ্ধির তাগিদে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বছরের যেকোন সময় ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা বা উত্তোলন করলে তার ওপর বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হবে। ১০ লাখ টাকার উর্ধ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক দিতে হবে বিদ্যমান ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ১ কোটি টাকার উর্ধ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার এবং ৫ কোটি টাকার উর্ধে জমা বা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অন্যায্য বলে মনে করেন বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও প্রবৃদ্ধি ক্রমহ্রাসমান হারে কমছে। এর অর্থ হলো, খাতটিতে সুশাসনের ঘাটতি ও কার্যকর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়ে গেছে। এ অবস্থায় অবগারি শুল্ক বৃদ্ধি অন্যায্য পদ্ধতি হিসেবে কাজ করবে। প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং করতে যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেটি বাধাগ্রস্ত হবে। আমানতের সুদের হার ও মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হলে প্রকৃত আয় প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকের অন্যান্য সার্ভিস চার্জ, হিডেন কস্ট ও উেস করারোপসহ বেশ কয়েকটি ধাপে টাকা প্রদান করতে হ"েছ গ্রাহককে। ফলে এখনই ১ লাখ টাকা জমা রেখে প্রকৃতপে ৯০-৯৫ হাজার টাকা মূল্য পাওয়া যা"েছ। নতুন করে আবগারি শুল্ক ব"দ্ধি কোনোভাবেই সমর্থন করা যাবে না।
×