ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মনোবল ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৩ জুন ২০১৭

মনোবল ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ, লন্ডন থেকে ॥ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে কোথাও নেই কোন উত্তেজনা। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। তবে সেটি শুধু মাঠেই। মাঠের বাইরে কোথাও বোঝাই যায় না চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে কেউ কিছু ভাবছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ড জিতেছে। অথচ স্বাগতিক দল নিয়েও ইংলিশদের মধ্যে কোন ভাবনা নেই। একটি ম্যাচ হওয়ার পর তিন-চারদিনের বিরতিতে আরেকটি ম্যাচ। তাই ক্রিকেটারদের মধ্যেও সেইরকম উত্তেজনা নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাই যেমন বৃহস্পতিবার হারের পর শুক্রবার পুরোদমে বিশ্রামে কাটিয়েছেন। অনুশীলনে একদিন বিরতি থাকায় ঘুরে কাটিয়েছেন। রাতে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিলের আমন্ত্রণে লন্ডনের একটি হোটেলে ইফতার ও ডিনার পার্টিতেও যোগ দেন ক্রিকেটাররা। মূলত হারানো মনোবল ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন সবাই। মানসিকভাবে নিজেদের সুস্থির ও চাঙ্গা রাখতে চাইছেন ক্রিকেটাররা। ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করেও ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে আক্ষেপ আছে। রয়েছে হতাশাও। কিন্তু কিছুই করার নেই। ইংল্যান্ডের উইকেটগুলো এখন এমনই। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তো এমনিতেই রান যেন বেশি হয়, সেই রকম উইকেটই বানানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের উইকেটগুলোতে তো অনেক বেশি রান হয়। ৩০০ রান করে জেতা দূরে থাক, ভাল বোলিং না করতে পারলে ৩৫০ রান করেও জেতা দুষ্কর। ৩৫০ রান বা তারবেশি রানও নিরাপদ নয়। তার মানে প্রতিটি দলকেই শুরুতে বেশি রান করার লক্ষ্যে খেলতে হবে। এরপর বোলিংটাও ভাল করতে হবে। তা না হলে জেতা সম্ভব নয়। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই হারের স্বাদ মিলেছে। তামিম ইকবালের অসাধারণ ইনিংস, ১২৮ রানের ইনিংসের পর মুশফিকুর রহীমের ৭৯ রানের ইনিংসে জেতার স্বপ্নও দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু জো রুটের অপরাজিত ১৩৩, এ্যালেক্স হেলসের ৯৫ ও ইয়ন মরগানের অপরাজিত ৭৫ রানে ১৬ বল আগেই জিতে গেছে ইংল্যান্ড। ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানেই জিতেছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে এখানে ৩০০ বা তারবেশি রান অতিক্রম করা কোন বিষয়ই নয়। বাংলাদেশ দল যদি আরও ২০ থেকে ৩০টা রান বেশি করতে পারত তাহলে হয়ত লড়াই করা যেত। তাতেও যে জেতা নিশ্চিত হত তা বলা মুশকিল। তবে ইয়ন মরগানের ক্যাচটি যে ধরেছিলেন তামিম, সেই আউটটি হলে অন্যরকমও হতে পারত। উইকেটে ব্যাটসম্যানরা সেট হতে পারেন। যদি একটু বুঝে খেলেন, তাহলে রান করাও সম্ভব। তখন বিশ্বের সেরা বোলারও ব্যাটসম্যানকে আউট করতে হিমশিম খাবে। তবে বাংলাদেশ বোলাররাও বিশ্বমানেরই ছিলেন। সাকিব তো বিশ্বক্রিকেটের একনম্বর অলরাউন্ডার। মুস্তাফিজ তো ‘কাটার মাস্টার’। কিন্তু এ দুইজনকেই শুধু নয়, বাংলাদেশের সব বোলারকেই এতটা ভালভাবে খেলেছে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা যে বিশেষ কিছু করার সুযোগই মিলেনি। তাতে সহজেই যেন ম্যাচ জেতা হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। ইংল্যান্ড দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলছে। বাংলাদেশ দল খেলছে নিজেদের মেলে ধরতে। এমন কিছু করতে যেন বাংলাদেশ যে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে যোগ্যতা বলেই আছে, তা বোঝাতে হবে। সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভাল করা মানে সবার নজরে ভালভাবেই আসা যাবে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে যে অবস্থা দেখা গেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন আসর হতে চলেছে। প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশ ৩০০ বা তারবেশি রান করতে পারবে, তাতো বলা যাচ্ছে না। তা যদি না করা যায়, তাহলে জেতা সম্ভব নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর যখন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘এখানে ২৬০ বা ২৮০ করে জেতা সম্ভব না। জিনিয়ুইন পাঁচটা বোলার থাকার পরও। সেক্ষেত্রে আমরা যদি ৩৩০ করতে পারি, অন্য দলের ওপর চাপ তৈরি করে যদি ৩৩০ করতে পারি, তাহলে হয়ত এক্সট্রা বোলার নিয়ে ২০ থেকে ৩০টা রান কনসিডার করতে পারি। আমরা আসলে যে চিন্তা করেছি, সেই লাইনেই ছিলাম। কিন্তু তামিমের আউটটার পর মুশফিকও আউট হলো। পরপর দুইটা সেট ব্যাটসম্যান আউট হয়ে নতুনরা এসে ওভাবে রানটা করতে পারেনি। ৩২০ অন্তত হওয়ার কথাই ছিল। ঠিকমত ব্যাটিং যদি হত ৩২০ রানই হত। কিন্তু করতে পারিনি।’ সঙ্গে অধিনায়ক যোগ করেন, ‘তাছাড়া আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা দ্রুত উইকেট পাওয়ার পরও হেলস এবং রুটের উইকেট চাচ্ছিলাম, যেভাবেই হোক একটা উইকেট চাচ্ছিলাম। আমার মনে হয় ওরাও খুব ভাল হ্যান্ডেল করেছে। মুস্তাফিজকে ওরা খুব ভাল হ্যান্ডেল করেছে। উইকেটটা না পাওয়াতে ওদের পার্টনারশিপটা বড় হয়ে গেছে। তারপর আবার মরগানের উইকেটটা যদি ওই সময় পাওয়া যেত, তাহলে হয়ত বা চাপ তৈরি হত। তখনও ৭ করে রান লাগে। একটা-দুইটা উইকেট পড়লে ৮ থেকে ৯ রানে চলে যেত। তখন কঠিন হয়ে যেত। ইংল্যান্ডের সম্প্রতি যত ম্যাচ দেখবেন সবগুলোই ৩৩০, ৩৪০ করে হচ্ছে। সেই রান আবার চেজও হচ্ছে। ৩২০-৩০ করেও নিরাপদে থাকা খুব কঠিন। যে কোন একদিকে আমাদের যেতে হবে। আমরা বোলিং হেভি করে বা ব্যাটিং হেভি করে। এই উইকেটে আসলে ৩০০ ঠেকাতে হলে আরও এক্সট্রা অর্ডিনারি বোলিং এবং কিছুটা লাক লাগবে।’ ওপেনার তামিম ইকবাল তো ৪০০ রানও নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি ৩০০ রানও যথেষ্ট নয়। কিন্তু আমরা যে স্কোরই করি না কেন যদি আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করতে না পারি তাহলে ৪০০ রানও যথেষ্ট নয়।’ তার মানে সামনে আরও কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে বাংলাদেশকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এরপর খেলা আছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী দল। যে হিসেব করা হচ্ছে ৩০০, ৩৫০, ৪০০ রানও নিরাপদ নয়; তাহলে তো বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করলে এই রান করতে হবে। এরপর জেতার আশা করতে হবে। আর আগে বোলিং করলে এই রান প্রতিপক্ষকে করতে দেয়া যাবে না। উভয় সঙ্কটেই আছে বাংলাদেশ। ম্যাচ জেতা পরে। আগে তো এই দুই হিসেব পূরণ করতে হবে। আপাতত অবশ্য এসব নিয়ে আর ভাবনা নেই ক্রিকেটারদের। আজ থেকে আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ জুন খেলতে নামার আগ পর্যন্ত প্রস্তুত হবে দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের কারণগুলো খুঁজে বের করে, ভুলগুলো শুধরে নেয়ার চেষ্টা চলবে। তার আগে বৃহস্পতিবার হারের পর শুক্রবার একদিন বিশ্রাম পেয়েছে, তা উপভোগ করেছে।
×