ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

বড়লেখার আজিজসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৩১ মে ২০১৭

বড়লেখার আজিজসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলবীবাজারের বড়লেখার আবদুল আজিজ হাবলুসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ জুলাই। অন্যদিকে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ হান্নানসহ আট আসামির মামলায় পলাতক দুই আসামিসহ চারজনের পক্ষে সরকারী খরচে রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। যশোরের বাঘারপাড়ার গ্রেফতারকৃত আমজাদ হোসেন মোল্লাকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করেছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোযারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশনপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোঃ সুলতান মাহামুদ সিমন, প্রসকিউটর মুখলেসুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর রাজিয়া সুলতানা চমন ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। মৌলভীবাজার বড়লেখার আবদুল আজিজ হাবলুসহ তিন জনের অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ জুলাই। আবদুল আজিজ ওরফে হাবলু (৬৪) ছাড়াও অন্য দুই আসামি হলেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন (৬৩) ও আবদুল মান্নান ওরফে মনাই (৬৪)। মুক্তিযুদ্ধকালে এই তিনজন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার বিভিন্ন এলাকায় অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যা করেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো- ১৯৭১ সালের ১৯ মে মৌলভীবাজার বড়লেখা থানার ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা হরেন্দ্র লাল দাস, মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস ও শ্রী নিবাস দাসকে অপহরণ করে আসামিরা। পরে হরেন্দ্রলাল, মতিলাল ও নগেন্দ্রকে হত্যা করা হয়। বড়লেখার বিওসি কেসরিগুল গ্রাম থেকে সুফিয়া খাতুন ও আবদুল খালেককে অপহরণ করে। পরে সুফিয়া খাতুনকে পালাক্রমে ধর্ষণও করে আসামিরা। বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মইন কমান্ডারের বাড়িতে লুটপাট। তার বাবা বশিরউদ্দিন, চাচা নেসার আলী, ভাই আইয়ুব আলী, ভাতিজা হারিস আলীকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় আসামিরা। বড়লেখার হেনাই নগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে। তাকে না পেয়ে তার ভাই মতসিম আলীকে অপহরণ করে নির্যাতন করে। নির্যাতনে তার পা ভেঙ্গে যায়। তারপর বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেয়।এছাড়া বড়লেখার দিমাই বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলীকে আটক করে। আসামিরা মনির আলী ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগমকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। হান্নানসহ ৮ আসামি ময়মনসিংহের জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য এম এ হান্নানসহ ৮ আসামির মামলায় পলাতক দুইজনসহ চার জনের পক্ষে সরকারী খরচে রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। আসামি এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদের পক্ষে আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার রয়েছেন। এছাড়াও পলাতক দুই জন এবং গ্রেফতারকৃত আরও দুই জনের পক্ষেও আব্দুস সুবহান তরফদারকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তার লক্ষ্যে এম এ হান্নান ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ফকরুজ্জামান ও গোলাম রব্বানি আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্য হিসেবে হান্নানের সহযোগী ছিলেন। বাদিনী ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর মুন্সীপাড়া এলাকার শহীদজায়া রহিমা খাতুন মামলায় অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তার লক্ষ্যে এম এ হান্নান ময়মনসিংহ জেলা শান্তি কমিটি গঠন করে এর সাধারণ সম্পাদক হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা শহরের নতুন বাজারে অবস্থিত এম এ হান্নানের নিজ বাসভবন, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো টর্চার সেলের দায়িত্বে থেকে মুক্তিকামী সাধারণ নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করে লাশ ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ফেলে রাখেন। আমজাদ মোল্লা যুদ্ধাপরাধের মামলায় আটক যশোরের বাঘারপাড়ার আমজাদ হোসেন মোল্লাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমাতি প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ৪ জুন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের কনফারেন্স রুমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের একটি নাশকতা মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
×