ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রতুল ত্রাণ কিশোরগঞ্জে

হাওড়পারে খাদ্য সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৮ মে ২০১৭

হাওড়পারে খাদ্য সঙ্কট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ২৭ মে ॥ বৈশাখে ধান কেটে সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আসবে- এমন ভাবনা ছিল হাওড়াঞ্চলের মানুষের। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যায় হাওড়পারের কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। বছরের একমাত্র বোরো ধানের সঙ্গে যেন তাদের পরিবারের আনন্দও ভেসে গেছে। অনেকের ঘরে খাবার নেই। মাথায় মহাজনী ঋণের বোঝা। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে কাজের সন্ধানে এলাকা ছাড়ছেন অনেকে। এমন দৃশ্য যেন এখন হাওড়পারে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফসল ডুবে যাওয়ায় তারা চরম দুর্দশায় পড়েছেন। এ অবস্থায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাহাকার যেন থামছে না। এদিকে পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতে গিয়ে কৃষকরা যখন দিশাহারা তখন মানুষের খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি অনেক এলাকায় এখন দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সঙ্কট। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারী ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। তারপরও হাজার হাজার মানুষের চোখ যেন সরকারী-বেসরকারী ত্রাণের দিকে। কিন্তু এ ব্যবস্থাও যে অপ্রতুল। তাইত দিগন্তবিস্তৃত ঢেউ খেলানো পানির নিচেই বারবার চোখ যায় শ্রমজীবী মানুষের। ওখানেই যে তলিয়ে আছে কৃষকের কষ্টে বোনা পাকা ধান। হাওড়পারের অনেকে জানায়, বর্তমানে হাওড়াঞ্চলের অনেক এলাকার কৃষকের ঘরে খাবার নেই। তাদের ফসল ডুবে যাওয়ায় বাজারে চালের দামও বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। অপরদিকে হাওড়ের জলমহালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় হাওড়বাসী এখন মাছ ধরতে পারছে না। এ অবস্থায় খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে হাওড়বাসীর। অনেকে কোন উপায় না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে শহরমুখী হচ্ছে। সম্প্রতি হাওড় এলাকায় দেখা যায়, হাওড় অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের বিভিন্ন হাওড়ে এখন চোখে পড়বে ছোট ছোট কিস্তি নৌকা নিয়ে হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ পানির নিচ থেকে ডুব দিয়ে আধা পচা ধান সংগ্রহ করছে। এসব ধান বাড়িতে নিয়ে রোদে শুকিয়ে সেখান থেকে কিছুটা ধান সংগ্রহের চেষ্টায় লিপ্ত তারা। আর পচা খড় রোদে শুকিয়ে গরুর খাবারও সংগ্রহ হচ্ছে। বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ বোরো ধান হারিয়ে অন্তত কিছুটা ফসল ঘরে তোলার শেষ চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরী অবস্থায় ত্রাণ তৎপরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া কৃষিঋণ মওকুফ ও কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে হাওড়ে জলায়শয়গুলোর লিজ বাতিল করে এগুলো উন্মুক্ত করে দিতে হবে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বন্যায় কিশোরগঞ্জের ১০টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা। ফসলডুবিতে দেড় লাখ কৃষক ক্ষতগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৬শ’ টন জিআর চাল ও ৩২ লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া ৫০ হাজার কৃষককে ভিজিএফের আওতায় আনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, হাওড়ে দরিদ্রদের জন্য ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ত্রাণ দেয়ার পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগে ভিজিএফ কর্মসূচী ও খোলা বাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও এক লাখ কৃষককে ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় আনতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
×