ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নেতা হত্যা

আজ খুলনায় অর্ধদিবস হরতাল, চার দিনের কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৭ মে ২০১৭

আজ খুলনায় অর্ধদিবস হরতাল, চার দিনের কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’ এখন শোকে মুহ্যমান। ওই বাড়ির শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। থেমে থেমে বাড়ির মহিলারা ডুকরে কেঁদে উঠছেন। বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা-যশোর সড়কের দামোদর চেয়ারম্যান বাড়ির বিপরীত পাশে বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিঠু এন্টারপ্রাইজের অফিস কক্ষে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সরদার আলাউদ্দিন মিঠু। এ সময়ে গুরুতর আহত হন মিঠুর শ্বশুর সৈয়দ সেলিম ও মিঠুর দেহরক্ষী নওশের আলী। নওশের আলী রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এই নিয়ে গত ১৯ বছরে দামোদর সরদার পাড়ার চেয়ারম্যান কাশেম পরিবারের তিন সদস্য দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন। বাবা ও ভাইয়ের পর খুন হন সরদার আলাউদ্দিন মিঠু (৪৫)। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এদিকে হত্যাকা-ের এই ঘটনায় খুলনা বিএনপি শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খুলনায় শনিবার অর্ধদিবস হরতালসহ চারদিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ভাইদের মধ্যে দুই সন্তানের জনক মিঠু ছিলেন মেজ। তার আরও দুই ভাই রয়েছে। তাদের নাম সেলিম সরদার এবং রাজ সরদার। তার ছেলে জুবায়ের সরদার সামি (১৩) ৮ম শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা সিমি (১১) ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। মিঠুর প্রথম স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। সম্প্রতি মিঠু উপজেলার প্রিন্স ব্রিক্সের মালিক সৈয়দ সেলিমের কন্যাকে বিয়ে করেন। হত্যাকা-ের পরদিন শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ফুলতলার দামোদর গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়ির দ্বিতল ভবনটির ব্যালকনিতে দেখা যায় কয়েকজন মহিলা ও শিশু দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পুরাতন ভবনের সামনের কলাপ্সিবল গেটে তালা দেয়া। তাই পশ্চিম পাশের নতুন ও পুরাতন ভবনের মাঝ দিয়ে একটি সরু গলিপথ দিয়ে পেছন দিক থেকে বাড়ির দোতলায় গিয়ে দেখা যায় মিঠুর মেয়ে সীমি কান্নাকাটি করছে। তাকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছে স্বজনেরা। কিন্তু বার বার সীমি বলছে, ’আমার আব্বুর কাছে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসত। আজও এসেছে। কিন্তু আব্বু কেন আসে না। আমার আব্বুকে আপনারা ডেকে আনছেন না কেন। আব্বু কখন আসবে। আমার আব্বুকে আপনারা ফিরিয়ে দেন।’ পাশেই নীরব নিথর হয়ে বসে ছিলেন, মিঠুর ছোট স্ত্রী। ছেলে সামিকে সান্ত¡না দিচ্ছেন মিঠুর ভাই মোঃ সেলিম। ডুমুরিয়া- ফুলতলা আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর বাসভবনে যান। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিঠুর বাসভবনে আসেন যশোর থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা অনিন্দ ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, মিঠুর জনপ্রিয়তাই মিঠুকে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল। মিঠুর অকালে চলে যাওয়া বিএনপির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। যা পূরণ হবার নয়। এর আগে ১৯৯৮ সালের ৬ মার্চ মিঠুর পিতা দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেমকে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট তার বড় ভাই একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদলকেও দুর্বৃত্তরা ফুলতলা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন দামোদর উত্তরপাড়ার সফেদাতলায় যশোর-খুলনা সড়কে গুলি করে হত্যা করে। মিঠু ছিলেন ভাইদের মধ্যে মেঝ। সেলিম সরদার এবং রাজ সরদার নামে তার আরও দুই ভাই রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ৬ মার্চ সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর ওপর বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সে যাত্রায় তিনি আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। শুক্রবার লাশের ময়নাতদন্ত হয় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। পরে বিকেলে জানাজা শেষে দামোদর নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। খুলনা জেলা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মিঠু পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তার, পারিবারিক দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে পুলিশ বিষয়টি মনিটরিং করছে। তিনি বলেন, মিঠুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করেছি তারা এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কারও নাম বলেনি। পরিবার থেকে মামলাও দেয়া হয়নি। মামলা হলে বোঝা যাবে তারা কাদের সন্দেহ করছে। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। বিএনপির কর্মসূচী খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু হত্যার প্রতিবাদে শনিবার সকাল ৬টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনা মহানগর ও জেলায় সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এছাড়া নারকীয় এ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে চার দিনের শোক কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টায় কে ডি ঘোষ রোডের মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং থেকে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। এর আগে একই স্থানে মহানগর ও জেলা বিএনপির যৌথ সভায় আন্দোলনের কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্মসূচী ঘোষণা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. এস এম শফিকুল আলম মনা। উপস্থিত ছিলেন কেসিসির মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, অধ্যাপক ডাঃ গাজী আব্দুল হক, আমীর এজাজ খান প্রমুখ। চার দিনের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শুক্রবার সকল দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ। ২৭ মে শনিবার হরতাল চলাকালে বেলা ১১টায় কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা ও মহানগর বিএনপির যৌথ বিক্ষোভ সমাবেশ। একই দিনে খুলনা বিভাগের অপর ৯ জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হবে। ২৮ মে রবিবার সকাল ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে শোক সভা ও দোয়া মাহফিল। ২৯ মে সোমবার মিঠু হত্যার বিচার দাবিতে ডিআইজি ও জেলা প্রশাসনকের মাধ্যমে সরকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ। এ সময়ের মধ্যে খুনীরা ধরা না পড়লে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। প্রেস ব্রিফিং ও যৌথ সভায় বিএনপির মহানগর ও জেলা শাখার সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সম্পাদকম-লীর সদস্য, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
×