স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রোতনের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ বাঁশিটা বাজতেই টাচলাইনের দিকে দৌড়ে গেলেন ক’জন। দলের অভিজ্ঞ কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রির ঘাড়ে চড়ে ম্যাজিক স্প্রে দিয়ে মাথাটা সাদা করে দিলেন কুয়াদরাদো। এমন দৃশ্য এখন জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে খুবই স্বাভাবিকই হয়ে গেছে। ইতালিয়ান লীগ হবে আর জুভেন্টাস জিতবে- এমনটাই যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রবিবার তুলনামূলক দুর্বল ক্রোতনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে এক ম্যাচ আগেই ইতালিয়ান সিরি‘এ লীগের শিরোপা জিতে নিল ‘ওল্ড লেডি’রা। সেইসঙ্গে প্রথম দল হিসেবে রেকর্ড টানা ষষ্ঠবারের মতো লীগ শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় রেকর্ড গড়ল জুভেন্টাস। ১৯৩০-৩৫ সালের মধ্যে টানা ৫ বার ইতালিয়ান লীগ জেতার নিজেদের রেকর্ডটাই ভাঙল এবার ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রির শিষ্যরা।
ম্যাচ শুরুর ১৩ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে কুয়াদরাদোর বাড়িয়ে দেয়া বল জালে জড়িয়ে জুভেন্টাসকে এগিয়ে দেন ‘বার্থডে বয়’ মারিও মানজুকিচ। ২০০৮ সালে ডেল পিয়েরোর পর সিরি’এ লীগে জন্মদিনে গোলের দেখা পেলেন কেউ। শুরুতেই পিছিয়ে গিয়ে অনেকটা এলোমেলো হয়ে যাওয়া ক্রোতনের ওপর ধীরে ধীরে চেপে বসার চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধের ২৩ মিনিটে বাঁ দিক থেকে গোলমুখে সান্দ্রোর চমৎকার ক্রসটা ঠিকমতো নাগালে পাননি হিগুয়েইন। দুর্বল শটে তুলে দেন গোলকিপারের হাতে। তার দু’ মিনিট বাদেই বোনুচ্চির বাড়িয়ে দেয়া বল ক্রোতনের ডি-বক্সে ফাঁকা জায়গায় দিয়েছিলেন দানি আলভেজ, কিন্তু সেটা জালে জড়ানোর মতো কেউ ছিল না।
আরেকটা গোল যখন জুভেন্টাসের পাওনা মনে হচ্ছিল, বিপজ্জনক এলাকায় কুয়াদরাদোকে ফাউল করে বিয়ানকোনেরিদের ফ্রি কিক পাইয়ে দেন চেচ্চেরিনি। চোখজুড়ানো শটে বলটা বাতাসে ভাসিয়ে বক্র পথে বাঁ পোস্টের ওপরের কোনাটা খুঁজে নেন পাওলো দিবালা। ক্রোতন গোলরক্ষকের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া করার তেমন কিছুই ছিল না। ৮৩ মিনিটে দিবালারই কর্নার কিকে দারুণ এক হেডে জাল খোঁজে পান এ্যালেক্স সান্দ্রো। ক্রোতন গোলকিপার কর্ডাজ সেটা ঠেকিয়ে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু গোললাইন প্রযুক্তিতে সেটা গোল হিসেবেই গণ্য হয়। এর ফলে শেষ পর্যন্ত ৩-০ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত হয় জুভেন্টাসের।
জুভেন্টাসের সামনে এখন আরো বড় কিছুর হাতছানি। ইতালিয়ান লীগ ও কাপ; দুটি শিরোপা জয়ই নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা। এখন চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জিততে পারলে তারা হয়ে যাবে ট্রেবলজয়ী ক্লাবের সদস্য। যে সাফল্যটা এখন পর্যন্ত পেয়েছে ইউরোপের মাত্র সাতটি ক্লাব। ইউরোপের অন্যতম সেরা ও সফলতম ক্লাব হলেও রিয়াল মাদ্রিদ এখন পর্যন্ত ট্রেবল জয়ের মর্যাদা পায়নি। এবারের মৌসুমেও তারা আগেই ছিটকে গেছে স্প্যানিশ কাপ, কোপা ডেল রে জয়ের লড়াই থেকে। কিন্তু জুভেন্টাস এরই মধ্যে জিতে নিয়েছে ইতালিয়ান লীগ ও কাপ শিরোপা। ফলে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে রিয়ালকে ধরাশায়ী করতে পারলেই ইতালির দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করবে জুভেন্টাস। ইউরোপের ক্লাবগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত ট্রেবল জয়ের স্বাদ পেয়েছে সেল্টিক (১৯৬৬-৬৭), আয়াক্স (১৯৭১-৭২), পিএসভি (১৯৮৭-৮৮), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৯৯৮-৯৯), ইন্টার মিলান (২০০৯-১০), বেয়ার্ন মিউনিখ (২০১২-১৩) এবং বার্সিলোনা (২০০৮-০৯) ও (২০১৪-১৫)। ইউরোপিয়ান ফুটবলের প্রথম ক্লাব হিসেবে বার্সিলোনা দুবার জিতেছে ট্রেবল।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: