ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান সামনে বরিশালে অসহনীয় লোডশেডিং

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ মে ২০১৭

রমজান সামনে বরিশালে অসহনীয় লোডশেডিং

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ তীব্র দাবদাহে ওষ্ঠাগত বরিশালের জনজীবন। বিচ্ছিন্নভাবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কিছুতেই কমছে না। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং। গত এক সপ্তাহ থেকে ২৪ ঘণ্টায় একটানা দুই ঘণ্টাও বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে নাজুক হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। দিনে যেমন রোদের খরতাপ তেমনি রাতে বইছে গরম হাওয়া। জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে অফিসগামী মানুষ, শ্রমিক, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী এবং অল্প বয়সের শিশুরা গরম ও তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে গরমে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা। শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দিন-রাতের এমন তাপদাহ আরও পাঁচদিন থাকবে। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে আসছে ৪৮ ঘণ্টায় কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। সূত্রমতে, চলমান জৈষ্ঠ্যর তাপদাহের পরেই সামনে আসছে আষাঢ়ের ঝড়বৃষ্টি। এর মধ্যে সপ্তাহ বাদেই রমজান মাসের শুরু। বর্তমানে রয়েছে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস। গরম, রমজান ও ঈদের বাজার প্রস্তুতির কারণে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারছে না বিতরণ সংস্থাগুলো। পিডিবির প্রতিবেদনে কোন লোডশেডিং নেই দাবি করা হলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। লোডশেডিং, বিদ্যুতবিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যান্ত্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্সসামগ্রী বিকল হচ্ছে। নগরীতে বিদ্যুতের ঘনঘন আসা-যাওয়া এবং গ্রামে দীর্ঘ সময়ের লোডশেডিংয়ে আবাসিক গ্রাহকেরা পড়েছেন দুর্ভোগে। বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ার ফলে ইন্টারনেট সংযোগেও দেখা দিয়েছে বিভ্রাট। ফলে সংবাদকর্মীদের সংবাদ প্রেরণে মারাত্মক ব্যঘাত ঘটছে। আসছে রমজান মাসের ইফতার-তারাবি ও সেহরির সময় লোডশেডিং না দিয়ে সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয়রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে ঝড়বৃষ্টি হলেই বিদ্যুত বিভ্রাট দেখা দেয়। দুর্বল সঞ্চালন, বিতরণ ব্যবস্থা এবং বেশকিছু পুরনো ও নিম্নমানের ট্রান্সফরমারের কারণে বিভ্রাট বেশি দেখা দিচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে গ্রামাঞ্চলে। এ বছর কালবৈশাখীসহ বেশি ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থায় লোডশেডিং ও বিদ্যুতবিভ্রাট আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে গত এক সপ্তাহ আগের মতো (চাহিদামতো) বিদ্যুত সরবরাহ করতে না পেয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিদ্যুত বিভাগ থেকে শনি ও শুক্রবার দিনভর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করে সকল গ্রাহক ধৈর্য ধরার জন্য আহ্বান করা হয়। চরফ্যাশনে এ আর মামুন, চরফ্যাশন থেকে জানান, অসহনীয় ভ্যাপসা গরমের পাশাপাশি ভয়াবহ বিদ্যুত বিভ্রাট জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। লোডশেডিং ও লাইন মেরামতের নাম করে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা এখন দিশেহারা। পৌর শহরে মাঝে মাঝে বিদ্যুত যাওয়া-আসার মধ্যে থাকলেও গ্রামের অবস্থা লেজেগোবরে। তারা গড়ে প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টার বেশি বিদ্যুত পায় না। এমনকি কখন বিদ্যুত থাকবে। কখন লোডশেডিং এও জানা যায় না। কারণ চরফ্যাশন পল্লীবিদ্যুত সমিতি ও পিডিবির অভিযোগ কেন্দ্রের সেলফোনটি বিজি বা বন্ধ পাওয়া যায় লোডশেডিং চলাকালে। বিদ্যুত না থাকায় প্রচ- ভ্যাপসা গরমে শিশুসহ নারী ও বয়ষ্ক মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। গরমে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি বাড়ছে। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুতনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। মোম জ্বালিয়ে লেখাপড়া করছে শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। গ্রাহকরা আরও জানান, আকাশে মেঘ জমলেই বিদ্যুত লাইন বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালবাহানার কারণে গ্রাহকরা এ বিভাগের ওপর সম্পূর্ণভাবে আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ভোলা পল্লীবিদ্যুত সমিতির চরফ্যাশন জোনের ৩০ হাজার গ্রাহক এবং পিডিবির আট হাজার গ্রাহক এখন ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অসহনীয় পরিবেশের শিকার।
×