ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশবিদদের সংবাদ সম্মেলন

শীতলক্ষ্যার পার থেকে সব স্থাপনা ও ইকোপার্ক উচ্ছেদের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২০ মে ২০১৭

শীতলক্ষ্যার পার থেকে সব স্থাপনা ও ইকোপার্ক উচ্ছেদের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতলক্ষ্যার পাড় থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা এবং ইকোপার্ক উচ্ছেদের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলেন, নদীর জায়গা দখল করায় এসব প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নদী দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে নদীর পাড়ে এসব অবৈধ স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদর বিকল্প নেই। পাশাপাশি তারা নদী রক্ষায় ১০ দফা দাবি জানান। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, শীতলক্ষ্যাসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের আশপাশের প্রায় সব নদী অবৈধভাবে দখল ও মারাত্মক দূষণের শিকার। বিভিন্ন সময়ে সরকারের তরফ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে অভিযান চালানো হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে মাঝপথে অভিযান থেমে যায়। ফলে অবস্থার কোনরূপ পরিবর্তন না ঘটে নদীগুলোর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে। অবস্থার কোন উন্নতির লক্ষণ নেই। নদীর সীমানা পিলারও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয় শীতলক্ষ্যার তীরে খানপুর বরফকল এলাকায় নদীর সীমানা প্রাচীরের কাছ থেকে ৩৩৭ নম্বর পিলারের পর প্রায় দুই একর জমি ভরাট করে চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। নদী দখল ঠেকাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে হাইকোর্টকে জানানোর দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠান কেমন করে ওই পার্ক নির্মাণের অনুমতি দিল তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নদীরক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ওই ফ্যান্টাসি পার্কের উদ্বোধন করেন এ তথ্য জানিয়ে বাপার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয় মন্ত্রী কি করে এ পার্ক উদ্বোধন করলেন তা সচেতন জনগণ অবশ্যই জানার অধিকার রাখে। নদী ভরাট করে গড়ে তোলা ওই পার্ক উচ্ছেদ করে নদীর আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার কোন তোয়াক্কা না করে বিআইডব্লিউটিএ কি করে শীতলক্ষ্যার নদী পাড়ে খানপুর বরফকল এলাকায় নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দিল তা বোধগম্য নয়। একদিকে সরকার দেশের সব নদী জলাধারসহ ঢাকার চারদিকের নদীগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন কিভাবে একজন সরকারের মন্ত্রী মহাসমারোহে এ বাণিজ্যিক পার্ক বা ইকোপার্ক উদ্বোধন করলেন তা সচেতন জনগণ অবশ্যই জানার অধিকার রাখে। বাপার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আবদুল মতিন বলেন, প্রাচ্যের ডান্ডি বলে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ আদিকাল থেকেই সব সময় ব্যবসা বাণিজ্যে তার অগ্রগতি ধরে রেখেছিল। অথচ আজ নারায়ণগঞ্জ বঞ্চিত-অবহেলিত একটি শহরের নাম। অবহেলার কারণে পাট বাণিজ্য এখন বন্ধ, স্টিমার ঘাটটিও আর নেই, রেল যোগাযোগ কোন রকমে টিকে আছে। শীতলক্ষ্যার পানি এমন ভাবে দূষণ ঘটেছে এবং সঙ্কুচিত হয়েছে যে, বাধ্য হয়ে সরকার এ নদীকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ ঘোষণার কারণে নদী রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা নেয়া হচ্ছে না। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় নগরবাসীর সামান্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের লোভের কারণে তা থেকেও মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। বাপার নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি এ্যাড. বিআইডব্লিউটিএ যার রক্ষক-তত্ত্বাবধায়ক সেই সংস্থাটিই সরকারের নদীরক্ষাবিষয়ক আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক পার্ক নির্মাণ করছে। বুড়িগঙ্গা বাঁচার আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস বলেন, একসময় সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের প্রাণ ছিল এ নদীসমূহ। আর রাজধানী ঢাকা গড়ে উঠেছিল শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা-তুরাগ-বালু নদীকে লক্ষ্য করে। কিন্তু আজ প্রতিনিয়ত মানুষের পরিবেশবিরুদ্ধ নানা কর্মকা-ের কারণে প্রাকৃতিক উৎপাদিকা শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে নদী ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। আদি গ্রন্থ পুরানে পুণ্যতোয়া খ্যাত শীতলক্ষ্যা নদী শিল্প বর্জ্যের পাশাপাশি পয়ঃবর্জ্যে আজ মৃতপ্রায়। বাণিজ্যিক পার্ক উচ্ছেদের পাশাপাশি তারা নদীতে ওয়াসার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, সাভার ও জয়দেবপুরের পৌর বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ, সকল শিল্প কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট সংযোজনে মালিকদের বাধ্য করা, শীতলক্ষ্যার সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, উচ্ছেদকৃত নদীর পাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দাবিও করেন সংবাদ সম্মেলনে।
×