ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বজ্রপাত বাড়ছে!

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৯ মে ২০১৭

বজ্রপাত বাড়ছে!

গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধি সর্বোপরি অত্যধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারে ভূম-লে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। আর এর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতের হারও বাড়ছে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় বজ্রপাত নিয়ে গবেষণারত ডেভিড রম্পের ভাষ্যমতে, তাপমাত্রা এক ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের হার বাড়ে ১২ শতাংশ যে জন্য ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দু’বার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। অর্থাৎ বজ্রপাতের সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়া-কমার একটা যোগসূত্র রয়েছে। আমাদের এ বিষয়টি বিশেষভাবে ভাবতে হবে যে, আমরা কিভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারি। নাইট্রোজেন অক্সাইডের ব্যবহার কিভাবে কমাতে পারি, মিথেনের মতো ক্ষতিকর গ্যাসের অপব্যবহার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা যদি আমাদের জীবনÑ প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর এমন সব উপাদান ব্যবহারে সচেতন ও সতর্ক থাকি এবং এর ভয়াবহ প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত ও রক্ষা করতে চাই তাহলে এখনই সাবধান হতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে বজ্রপাত, বজ্রপাতের বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যাও; কাজেই সর্বাগ্রে আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে এটি রোধ করা যায় এবং এর প্রতিকার পন্থা কি। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দফতর যে তথ্য জানাচ্ছে ১৬ মের, একযোগে চার হাজারেরও বেশি বার বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে, এ তথ্য যে কতটা উদ্বেগজনক তার প্রমাণ এখন স্পষ্ট। বজ্রপাতে গত সাত বছরে বাংলাদেশে প্রাণহানি ঘটেছে ১ হাজার ৭৪৪ জনের। এর মধ্যে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্তই প্রাণহানি ঘটেছে ২২ জনের। এ তথ্যই জানান দিচ্ছে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে। বজ্রপাতের ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন সতর্কতামূলক বার্তা জানানো হচ্ছে যেমন ঝড়ের সময় দ্রুত ফাঁকা জায়গা ত্যাগ করা, কোন ধরনের গাছ-গাছালির নিচে অবস্থান করা, উঁচু ভবনের ফাঁকা ছাদে না থাকা, সর্বদা রুমে অবস্থান করা, অর্থাৎ নিরাপদ অবস্থানে থাকার কথা বলা হচ্ছে সত্য কিন্তু খোলা আকাশের নিচে, মাঠে, ঘাটে, নদী, খালে-বিলে যারা অবস্থান করে প্রয়োজনের তাগিদে তাদের হঠাৎ করে নিরাপদ স্থান পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই তাদের বজ্রপাতে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। কাজেই ধরিত্রীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবতে হবে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে বজ্রপাত বর্তমানের তুলনায় ৫০ শতাংশ বাড়বে বিশেষজ্ঞদের এই আশঙ্কা যদি সত্যি হয় তাহলে প্রাণহানির সংখ্যাও যে অব্যাহতভাবে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। আমরা যদি ক্ষতিকর জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারি, প্রকৃতিকে সবুজে ভরিয়ে দিতে পারি বৃক্ষ রোপণের মধ্য দিয়ে, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার সঠিক উপায়ে করতে পারি, নদী, খালের স্বাভাবিক প্রবাহÑ নাব্য বজায় রাখতে পারি, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে পারি, অবাধে নির্বিচারে গাছ কাটা ঠেকাতে পারি তাহলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে যেমন আমরা রক্ষা পাব তেমনি ধরিত্রীকেও সুষ্ঠু সুন্দর হিসাবে দেখতে পাব। আমাদের আত্ম উপলব্ধি জরুরী। প্রকৃতির সর্বনাশ করে আমরা কিভাবে নিরাপদ থাকব?
×