ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবার মাঠে জামায়াত শিবির ॥ নতুন অশনি সঙ্কেত

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৮ মে ২০১৭

আবার মাঠে জামায়াত শিবির ॥ নতুন অশনি সঙ্কেত

শংকর কুমার দে ॥ দীর্ঘদিন আড়ালে-আবডালে থাকার পর আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবির। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর ফাঁসি চেয়ে আপীল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল সেøাগানে প্রতিবাদ সমাবেশের নামে মাঠে নেমেছে তারা। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর খালাসের দাবির নামে জামায়াত-শিবির আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মাঠের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছে, যা আগামীতে আবারও সহিংস নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গত সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর ফাঁসির আবেদন আপীল বিভাগে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর জামায়াত-শিবিরের মধ্যে আনন্দ-উল্লাসের চাঙ্গা ভাব সৃষ্টি হয়, যা ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। সাঈদীর পক্ষে তারা আপীল বিভাগে খালাস দাবি করলেও রাষ্ট্রপক্ষের দাবির নাকচ হয়ে যাওয়ায় খুব সন্তুষ্টভাব প্রকাশ করেছে জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন করে সাঈদীর মুক্তি পথ সুগম করার জন্য তারা আগে থেকেই মাঠে নেমে তৎপরতা প্রদর্শন করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে মতে, জঙ্গী সম্পৃক্ততায় মদদদানে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কারণে এতদিন তারা ছিল অনেকটা আড়ালে আবডালে। এখন আবার হঠাৎ করেই তাদের প্রকাশ্যে তৎপরতার ঘটনাকে অশনিসংকেত বলেন আশঙ্কা গোয়েন্দা সংস্থার। কারণ বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে জামায়াত-শিবিরের সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলনে ছিল দৃশ্যমান। ঝটিকা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তাদের নাশকতামূলক তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীতে তারা ছিল অগ্রভাগে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী জঙ্গীবিরোধী অভিযানে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডাররা। এতদিন তাদের কোথাও তৎপরতা দেখা যায়নি, প্রকাশ্যে ছিল না রাজপথের কোন কর্মসূচী, ছিল না কোন ঝটিকা মিছিল। এখন আবার মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ফাঁসির আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় নেতাকর্মী, ক্যাডারদের মাঠে নামতে দেখা যায়। গোয়েন্দা এক কর্মকর্তার প্রশ্ন, ‘এতদিন এত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী, ক্যাডার ছিল কোথায়? আবার হঠাৎ করে তারা উদয় হলো কিভাবে? রাজনৈতিকভাবে তাদের কি কোন মহল থেকে মদদ দেয়া হচ্ছে? জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের একটা বিরাট অংশ জঙ্গীবাদ বা উগ্রপন্থায় জড়িয়েছে। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও জায়গা করে নিয়েছে একাংশ। জামায়াত-শিবিরের একাংশ বিএনপির সঙ্গে মিশে গিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার নামে মাঠে নেমে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে পারে, যা বিগত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত-শিবির কর্মীদের দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথে প্রকাশ্যে দেখা মেলেনি। এমনকি তাদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশী অভিযান চালিয়েও পায়নি। অথচ হঠাৎ করেই গত সোমবার থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাঈদীর খালাস ও মুক্তির দাবিতে ঝটিকা মিছিল বের করেছে। অথচ দলটির আমির, সেক্রেটারি জেনারেলের মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকরের পরও সরব হয়নি সংগঠনটি। এখন সাঈদীর ইস্যুটি হচ্ছে, এটা তাদের নতুন কৌশল। এতদিন দলটি আত্মগোপনে থেকে ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল দলীয় কার্যক্রম। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দলটির পরিচিতি লাভ করেছে। ফাঁসি হয়েছে দলের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মীর কাশেম আলীর। সর্বশেষ জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা মীর কাসেমের ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করা হলেও মাঠে দেখা যায়নি তাদের কোন তৎপরতা। অথচ এর আগে সরকারবিরোধী দেশব্যাপী সহিংস কর্মসূচীতে তারাই ছিলেন অগ্রভাগে। কিন্তু জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ফাঁসির রিভিউ আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডারদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে, যার কারণে তারা ঝটিকা মিছিল বের করেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে জামায়াত নেতা আবদুস সুবহান এবং এটি এম আজহারুল ইসলামের মামলা। এরা দুজনই ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত। দলটির ভেঙ্গে পড়া চেন অব কমান্ড সচল করতে আবারও তারা মাঠে নেমে তৎপর হয়েছে। এতদিন ধরে জেলের বাইরে থাকা উধাও নেতাকর্মী, ক্যাডাররা আবারও সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই জামায়াত ও শিবিরের তালা ঝোলানো কার্যালয়গুলো খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। জামায়াতের ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও চাষী কল্যাণ সমিতি নামের সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনী প্রস্তুতি সামনে রেখেই জামায়াত-শিবিরের মূলত এই ধরনের তৎপরতা ও প্রস্তুতি রয়েছে, যা পরবর্তীতে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচন ভ-ুল করার উদ্দেশ্যে নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার আশঙ্কা।
×