ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববাজারে সম্ভাবনা দেখছেন বিদেশী ক্রেতারা ;###;‘প্রাপ্য মূল্য’ বাড়ানোর দাবি উদ্যোক্তাদের ;###;ষষ্ঠবারের মতো ডেনিম এক্সপো শুরু

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সেরা ডেনিম প্রস্তুতকারক দেশ

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৮ মে ২০১৭

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সেরা ডেনিম প্রস্তুতকারক দেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশী ডেনিম পোশাকের বিরাট সম্ভাবনা দেখছেন বিদেশী ক্রেতারা। তাদের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে সেরা মানের ডেনিম তৈরি হচ্ছে। এ বিবেচনায় প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশী ডেনিম পণ্যের রি-ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে বুধবার রাজধানীতে শুরু হওয়া ডেনিম কাপড় ও পোশাকের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’ ঘুরে বিদেশী ক্রেতারা এসব কথা বলেন। অন্যদিকে নানা প্রতিকূলতায় ডেনিম রফতানিতে ‘প্রাপ্য মূল্য পাচ্ছেন না’ বলে জানিয়েছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের টপ ডেনিম প্রস্তুতকারক দেশের একটি। বাংলাদেশে প্রস্তুত ডেনিম কাপড় ও পোশাকে রফতানিকারকদের আস্থা অর্জন করতে চান সম্ভাবনাময় ডেনিমের দেশি প্রস্তুতকারকরা। বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের (বিআইসিসি) নবরাত্রি হলে ডেনিম পণ্যের দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শুরু হয়, যার আয়োজন করে বাংলাদেশের ডেনিম তুলে ধরার প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’। ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ১২টি ডেনিম কাপড় ও পোশাক প্রস্তুকারক প্রতিষ্ঠানসহ ১৩ দেশের ৪৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের ডেনিম এক্সপোর সুনাম শুনে চীন থেকে এসেছেন চেনজো হেফিন ওয়েভিং কো. লিমিটেডের কর্মকর্তা মিশেল চেন। চেনজো হেফিনের মতো আরও নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে ষষ্ঠ বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোতে। মিশেল চেন বলেন, এটি বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ষষ্ঠ প্রদর্শনী। আমরা এর আগের ৫টি প্রদর্শনী দেখেছি যেখানে আন্তর্জাতিক প্রায় সব ক্রেতাই অংশ নিয়েছে। তাই এবার আমরা অংশ নিয়েছি নিজেদের পণ নিয়ে। আমরা মূলত আমেরিকার বাজারে ডেনিম পণ্য রফতানি করতাম। কিন্তু এখন ইউরোপের বাজারে রফতানির কথা ভাবছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোতে ইউরোপীয় অনেক ক্রেতাই অংশ নিয়ে থাকে। তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া না করে অংশ নিয়েছি। প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি ওবের ডেনিম পোশাকের প্রশংসা করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের ডেনিম আমি নিজেও ব্যবহার করি, এগুলো খুব ভালো মানের। ডেনিমকে ‘গ্রোয়িং বিজনেস’ হিসেবে অভিহিত করে এ ব্যবসায় সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ডেনিম ফেব্রিকস রপ্তানি ও পোশাক আমদানিকারক চায়নিজ কোম্পানি সানডং ডাইয়িন টেক্সটাইল গ্রুপের ঢাকা শাখার ম্যানেজার জীবন কৃষ্ণ বর্মণ। তিনি বলেন, এক সময় লোকাল ডেনিম প্রস্তুতকারকরা ‘এক্সক্লুসিভ প্রোডাক্ট’ তৈরি করতে পারত না, কিন্তু সেই অবস্থার অনেক পরিবর্তন এসেছে। হা-মীম ডেনিম লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মঞ্জুর হোসেন বলেন, আগে বিদেশী বায়াররা কম দামে ডেনিম কিনতে বাংলাদেশ আসত, একই মানের ডেনিমে আমরা পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক থেকে দুই-তিনগুণ কম দাম পেতাম। আমরা এ প্রদর্শনীতে উন্নত ফেব্রিকস দিয়ে প্রস্তুতকৃত বেশ কিছু ভালমানের ডেনিমের প্যান্ট নিয়ে এসেছি। বায়ারদের কাছে মেসেজ দিতে চাই- এখানে শুধু ‘চিপ’ (সস্তা) ডেনিম পোশাক তৈরি হয় না, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের টপ ডেনিম প্রস্তুতকারক দেশের একটি। বছর কয়েক আগে বাংলাদেশী ডেনিমের মান তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে দেশে সেরা মানের ডেনিম তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেন এম্বার গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাফাত হাসান চৌধুরী। দুই তিন বছর আগেও বিদেশী পোশাক কোম্পানিগুলো কম দামের ডেনিম খুঁজতে এদেশে আসত, বলতে দ্বিধা নেই আমাদের পণ্যের মানও তুলনামূলক খারাপ ছিল, এখন অনেক পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমরা দেশেই এখন সেরা মানের ডেনিম তৈরি করছি। গুণগত মানের ডেনিম উৎপাদনে এগিয়ে গেলেও এখনও দেশে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও মেশিনারিজ ইন্ডাস্ট্রিজ না থাকাকে এখাতে আরও এগিয়ে যাওয়ায় বাঁধা হিসেবে দেখছেন রাফাত। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ২৬টি ডেনিম ফ্যাক্টরি আছে, যা আমাদের দেশের তুলনায় যথেষ্ট। কিন্তু কাঁচামালে জন্য আমাদের সেই চায়না, থাইল্যান্ড ও ভারতের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। ক্রেতাদের সাড়া পাওয়ার বিষয়ে আর্টিস্টি মিলিনিয়ারস এর বাংলাদেশ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোঃ মাহবুল্লাহ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো এখন পোশাক শিল্পের ব্র্যান্ডিং এ কাজ করছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সামনে বাংলাদেশের ও অন্যান্য দেশের উদ্যোক্তারা তাদের ডেনিম পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা বরাবরই কঠোর নিরাপত্তা বলয় রাখা হয় প্রদর্শনী কেন্দ্রে যার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো। এর আগে সকালে ডেনিম এক্সপো উপলক্ষে বিআইসিসিতে সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম আয়োজিত ‘মেকিং সাসটেইনেবল ইজিয়ার’ শীর্ষক সম্মেলনে উপস্থিত ফান্স, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে ইউরোপের বাজারে দেশের পণ্যের ‘ন্যায্য দাম’ নিশ্চিতের আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরে ইউরো’র দরপতন, পোশাক শিল্পের পণ্যের মূল্য কমে যাওয়াসহ নানা কারণে রফতানির ৩৭ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বছর শেষে রফতানি আয় ৩৭ বিলিয়ন ডলার না হলেও ৩৬ বিলিয়ন ডলার হবে বলে আশা করছি। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শিল্পের উন্নয়নে উদ্যোক্তারা কাজ করলেও কথা রাখেননি ক্রেতারা। তারা বলেছিলেন, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করবেন। কিন্তু এখন তারা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি তো দূরের কথা বরং মূল্য কমানোর বিষয়ে দর কষাকষি করছেন। সরকার ইপিজেড আইন সংশোধের বিষয়ে ভাবছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইপিজেড আইন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বর্তমান সরকার সব দিক বিবেচনা করে এ আইন সংশোধনের বিষয়ে ভাবছে। মূল্য সক্ষমতার দিকে নজর দিতে হবে সবাইকে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে একসঙ্গে কাজ করে টেকসই পোশাক শিল্প গড়ে তুলতে হবে। পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের কাছে মূল বিষয় নয় বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর নবনির্বাচিত সভাপতি ও বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ক্রেতাদের কাছে পণ্যের মূল্যই সব। অন্য সবকিছু তাদের কাছে গৌণ। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর দাম বাড়ানোর কথা থাকলেও ক্রেতারা দিন দিন দাম কমাচ্ছে। মূল্য সক্ষমতাই এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এইচএসবিসি ব্যাংকের সহযোগিতায় এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ ও এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী অফিসার রুবানা হক উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মেলনে বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিনস এবং নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি মারগারিতা কুলেনারা যোগ দেন। চীন, ব্রাজিল, জার্মানি, হংকং, ভারত, জাপান, পাকিস্তান, ইতালি, স্পেন ও তুরস্কের অংশগ্রহণে ষষ্ঠবারের মত বসা ডেনিম এক্সপোর এবারের আসর চলবে আজ বৃহস্পতিবার পর্র্যন্ত, যা বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×